শ্রমিক অসন্তোষের জের

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া ও গাজীপুরে ২৫৭ পোশাক কারখানা বন্ধ

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ২৫৭ তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে আশুলিয়ায় ২১৯ ও গাজীপুরে ৩৮টি। হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, টিফিন বিল বৃদ্ধি, বেতনসহ, সমানুপাতিকহারে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা শ্রমিক অসন্তোষের জেরে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, চলমান শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকালে আশুলিয়ায় কারখানার কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তবে কিছু কারখানায় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে বসে থাকেন। তখন কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিন আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন। এ ছাড়া সড়কে টহল দিয়েছেন সেনাবাহিনী, র?্যাব, বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, এসব কারখানার মধ্যে ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে ৮৬টি কারখানা। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ সুপার আরও বলেন, 'গতকাল (বুধবার) থেকে আমরা শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগদান ও কাজ করতে মাইকিং করেছি। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, সে বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। দাবি-দাওয়া নিয়ে যেসব বিরোধ রয়েছে, তা কীভাবে নিষ্পত্তি করা যায়, তা নিয়েও কথা হচ্ছে। কলকারখানা অধিদপ্তরের যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, তাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে।' এদিকে, শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুরে আটটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৩০টি পোশাক কারখানায়। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩ (১) ধারাতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক উক্ত শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন; এমন বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না। জেলা শিল্প পুলিশ ও কারখানা মালিক সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক দিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভের জেরে অনেক সময় কারখানায় ভাঙচুর, কারখানার কর্মকর্তাদের মারধরসহ বিভিন্ন বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছেন তারা। আর এই সুযোগে কিছু বহিরাগত কারখানায় লুটপাট বা অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বা ঝামেলা হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে কারখানাগুলোর কোনোটিতে সাধারণ ছুটি বা কোনোটি বা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, 'শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে যেকোনো ঝামেলা এড়াতে মহানগর ও মহানগরের বাইরে সব মিলিয়ে ৮টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও ৩০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। অনেক সময় একটি কারখানায় ঝামেলা হলে ওই কারখানার শ্রমিকরা আশপাশের আরও কারখানায় গন্ডগোল করার চেষ্টা করেন। এসব কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কিছু কারখানা কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সব সময় কারখানাগুলোর তদারক করছি, মালিকপক্ষকে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তত রয়েছি।' খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর নগরের কাশিমপুর-ভবানিপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেন বেক্সিমকো গ্রম্নপের একটি কারখানার শ্রমিকরা। একপর্যায়ে তারা আশপাশের কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালান। কিছু বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ভবানিপুর এলাকার 'বিগবস' নামের একটি কারখানায় আগুন দেন। একইভাবে বুধবার দিনভর শ্রমিক অসন্তোষ চলে টঙ্গী, শালনা ও কাশিমপুরের বিভিন্ন কারখানায়। এ সময় কারখানায় ভাঙচুর এবং বহিরাগতদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কারখানা বন্ধ বা ছুটির সিদ্ধান্ত নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে এদিন বেলা আড়াইটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।