আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশ কর্মকর্তা কাফি রিমান্ডে

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া (বাঁয়ে) ও সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুলস্নাহ হিল কাফিকে বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয় -সংগৃহীত
প্রায় এক দশক আগে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাজধানীর খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে 'ক্রসফায়ারের নামে হত্যার' অভিযোগে এ মামলা করা হয়। মামলায় আছাদুজ্জামান মিয়া এজাহারনামীয় ১২ নম্বর আসামি। এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করের্ যাব। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নুরুজ্জামান জনি নিহত হন। এর প্রায় ১০ বছর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলীর করা খিলগাঁও থানার মামলায় সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুযারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নুরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন চালানো হয়। তখন নুরুজ্জামান জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীয়স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে জানান। দুদিন ধরে খোঁজাখুঁজি করার পরও জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার শুনতে পান। নির্যাতিত ব্যক্তিটি 'পানি পানি' বলে চিৎকার ও 'মা মা' বলে আর্তনাদ করতে থাকেন। ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-বস্নকের বাসিন্দা লাভলী বেগম ওই রাতের কান্নার শব্দ শুনেছেন বলে জানান। এ-বস্নকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে 'ও মাগো, মা, মা...বাঁচাও' বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষী ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পান। আসামিরা বলেন, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন। তার পুরো শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করেন। মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। পুলিশ কর্মকর্তা কাফি রিমান্ডে এদিকে, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুলস্নাহ হিল কাফিকে এবার সাভারের শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. জুলহাস উদ্দীন তার আদেশে বলেছেন, আব্দুলস্নাহ হিল কাফিকে ১২ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১৭ নভেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে পুলিশ। রিমান্ড শেষ হলে তাকে ১৭ তারিখ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। দশ বছর বয়সি ছেলে আলিফসহ ইঞ্জিনিয়ার আরিফ মাইনুদ্দিন অপহরণ, নির্যাতন এবং মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার পুলিশ কর্মকর্তা কাফিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর সাভারের ইয়ামিন হত্যা মামলায় তাকে ফের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুলস্নাহ বিশ্বাস। রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অংশ নেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী ও শামসুজ্জামান দিপু। শুনানিতে আইনজীবী ফারুকী বলেন, 'ফেসবুক-ইউটিউবে দেশবাসী সাভারের ওই হত্যাকান্ড দেখেছে। ইয়ামিন তখনো জীবিত ছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে চিকিৎসা না করিয়ে বরং রাস্তায় ফেলে চলে যায়। এমন নৃশংস মানুষ কীভাবে হতে পারে? তাদেরওতো বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা আছে! তাদের মনে কি একটুও দয়ার উদ্রেক হয়নি?' কাফির পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি। তিনি বলেন, 'সিআরপিসি ১৩২ ধারা অনুযায়ী বেআইনি সবাবেশ করলে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কোনো মামলা গ্রহণ করা যায় না। এছাড়া আরো বিভিন্ন আইনগত প্রশ্ন এই মামলায় জড়িত।' এ সময় প্রতিবাদ করেন আইনজীবী দিপু। তিনি বলেন, 'আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন? আপনি কি আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে ছিলেন না? আপনি কি ইয়ামিন হত্যাকান্ডের ভিডিও একবারও দেখেননি।' বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আব্দুলস্নাহ হিল কাফিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। ইনু-মেনন ও পলক কারাগারে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুলস্নাহ আল মামুনকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃথক হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান। আদাবর থানার পোশাক শ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় মেনন ২৭ আগস্ট থেকে ৬ দিনের রিমান্ডে ছিলেন। আর আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুলস্নাহ হত্যা মামলায় ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন ইনু। এদিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজের ছাত্র ওমর ফারুক হত্যার সূত্রাপুর থানার মামলায় ও রাজধানীর বাড্ডার ফুঁজি টাওয়ারের সামনে সুমন শিকদার হত্যা মামলায় গত ৩১ আগস্ট পলককে তিন দিন করে ৬ দিনের রিমান্ড দিয়েছিল আদালত। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের দোকানদার আবু সায়েদ হত্যা মামলায় ৪ সেপ্টেম্বর আব্দুলস্নাহ আল মামুনকে ৮ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। রিমান্ড শেষে এদিন তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি নিয়ে তা মঞ্জুর করেন বিচারক। আরও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার বনশ্রীতে মিজানুর রহমান হত্যা মামলায় এদিন ইনু, মেনন, পলক ও মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও থানার এসআই সৈয়দ রুহুল আমিন। আর মেনন, ইনু ও পলকের পক্ষে জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন। বয়স্ক মানুষ বিবেচনায় ইনু ও মেননকে জামিন দিতে আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়ে করে শুনানি করেন আইনজীবী। তবে সেই আদেন নাকচ করে চারজনকেই গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক সাইফুর রহমান। ফজলে করিম চৌধুরীকে আটক এদিকে, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাউজানের (চট্টগ্রাম-৬) সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার সকালে বাহিনীটির সদর দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গাজীরবাজার থেকে ফজলে করিমকে আটক করা হয়। এ সময় আরও দুই ব্যক্তিকেও বিজিবি আটক করে। তারা হলেন আখাউড়ার নূরপুর এলাকার সাবেক মেম্বার মো. হান্নান মোলস্না এবং আখাউড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মো. নাঈম চৌধুরী। তাদের আখাউড়া থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান শরীফুল ইসলাম। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ও রাউজানে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। উলেস্নখ্য, চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরী। সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে ফারাজ দেশব্যাপী সুনাম কামিয়েছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন তার অবস্থান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ থেকে মুক্তি পেতে তিনি তার মা রিজওয়ানা ইউসুফকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিও করান। সেটিও সমালোচনার শিকার হয়।