অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আজ আমরা একযোগে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই- সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা, সবাই একজোট, এক টিম। এটি একটি কমপ্যাক্ট টিম। আপনারা সেই টিমের সদস্য। যেটুকু সময় আমরা এই দায়িত্বে আছি, আমরা টিম হিসেবে কাজ করতে চাই।'
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) আয়োজিত ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে এই আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থান আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আসুন, আমরা নতুন তরতাজা বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের সমাজে যে পচন ধরেছিল, ছাত্রদের আন্দোলন ছাড়া সেখান থেকে মুক্তির কোনো উপায় ছিল না।'
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, 'মূল লক্ষ্য, যে কটা দিন আছি, আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এই নতুন বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন, তাই করব। যেন বলে যেতে পারি, আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগ পূর্ণ ব্যবহার করেছি, আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি।'
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণঅভু্যত্থানে প্রাণ দেওয়া শত শত ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আজ যারা
সামনে বসে আছেন, তারা বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা। যে যুবক যে প্রাণ দিয়েছে, তার কাছে কী শপথ নেবেন- এই বিশ্বমাপের উদ্যোক্তারা?'
ড. ইউনূস বলেন, 'যে স্বপ্নের পেছনে গিয়ে তুমি প্রাণ দিয়েছ, যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার, সে নতুন বাংলাদেশ গড়বই। এই হবে আমাদের শপথ। এই সুযোগ জাতির জীবনে বারবার আসে না।'
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'চিন্তা করে দেখুন, কী এক সুযোগ। সব কিছু থেকে আপনি মুক্ত। অতীত আপনাকে আর টানবে না। আপনি নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন, নতুনভাবে অগ্রসর হবেন। নতুন করে যে স্বপ্ন তারা আমাদের মনে জাগিয়ে দিয়েছে, তা যদি আপনার মনে রেখাপাত করে, তাহলে সে স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এই সুযোগ আর কখনো আসবে কিনা, জানি না। এই সুযোগকে আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।'
তৈরি পোশাকশিল্পকে বিশ্বের এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আজকে যে দুই নম্বরে আছি, কী করে আমরা এক নম্বর হব? আমাদের মেয়াদকালে যদি আপনারা এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারেন, আমরাও স্মরণ করব, যাক বাবা, একটা কিছু করেছি তো। সব কিছু আমরা জানি না, আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু একযোগে কাজ করলে অভিজ্ঞতা এসে যাবে। সবার যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কাজ করব।'
ইউরোপ-আমেরিকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা আজ ধরনা দেই ব্যবসায়ীদের কাছে, যারা ইউরোপে আছেন, আমেরিকায় আছেন। তারাও কৌতূহল নিয়ে দেখছেন আমাদের এখানে কী হচ্ছে। তাদের আমরা ডেকে আনতে পারি, এখানে আসুন, আপনারাও শরিক হোন এর মধ্যে। আমাদের সুযোগ দিন, আমরা যে পরিধিতে আছি, সেখান থেকে আরও ওপরে চলে যেতে পারি।'
তিনি বলেন, 'কথা হলো, আমরা নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যআয়ের দেশে গেলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা হারিয়ে ফেলব। সেই প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিযোগী হওয়ার জন্য আমরা সামর্থ্য অর্জন করতে চাই। আমরা পেছনে থাকতে চাই না। সে জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছি, লুৎফে সিদ্দিকীকে।'