ডিসি পদে পদায়ন নিয়ে উত্তেজনা থামছে না। অসন্তোষ রূপ নেয় হট্টগোলে। এরপর এখন চলছে বার বার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বদলের অস্থিরতা। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে নতুন ডিসিদের মধ্যে আটজনের নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসক পদে যোগদানে বারণ করা হয়েছে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের। বুধবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
তিনি বলেন, নতুন নিয়োগ দেওয়া ডিসির মধ্যে ৫১ জন আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন। বাকিরা যেখানে ছিলেন, সেখানেই দায়িত্ব
পালন করবেন। এ ছাড়া চারজন জেলা প্রশাসককে রদবদল করা হয়েছে।
সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া অনেক কঠিন। লক্ষ্ণীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী ও দিনাজপুর- এই আট জেলার ডিসিদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। নিয়োগ বাতিল হওয়া আট জেলায় তিন দিনের মধ্য নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সচিব।
লক্ষ্ণীপুরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপ-সচিব সুফিয়া আক্তার রুমী, জয়পুরহাটে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি ২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপ-সচিব) মো. সাইদুজ্জামান, কুষ্টিয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফারহানা ইসলাম, রাজশাহীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মাহবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনির হোসেন হাওলাদার, শরীয়তপুরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব আব্দুল আজিজ, দিনাজপুরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোবাশশেরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে আরপিএটিসির উপ-পরিচালক মনোয়ারা বেগমকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের নিয়োগ বুধবার বাতিল করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট জনরোষে আওয়ামী লীগের পতন হলে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রদবদলের হিড়িক পড়ে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৫ কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর আরও ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এই নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা। সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল করেন উপ-সচিব পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা। মঙ্গলবার বিকালে ও বুধবার সকালে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল করেন তারা।
সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে।
পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের যোগদানে বারণ
এদিকে, গত সোম ও মঙ্গলবার (৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনে যে কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগের কর্মস্থলেই কাজ করে যেতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজের মাধ্যমে ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়াদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমাদের মেসেজটি (বার্তা) পাওয়া মাত্র সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে কর্মকর্তাদের।