টাঙ্গাইলে জনসভায় তারেক রহমান

স্বৈরাচার পালালেও তার প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়াচ্ছে

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
স্বৈরাচারের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র থেকে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান পালালেও তার প্রেতাত্মারা আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। বুধবার টাঙ্গাইলের গোপালপুরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত জনসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সাবেক উপ-মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট \হআহমেদ আজম খান ও প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। প্রায় ১৭ বছর পর গোপালপুরের এই জনসভায় উপস্থিত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হাজির হলে হাজার হাজার জনতা তাকে অভিবাদন জানান। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বেশিরভাগজুড়ে তারেক রহমান টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত নানা পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। তারেক রহমান বলেন, চক্রান্ত হলে দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে। আগামীতে বিএনপি দেশে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি চালু করতে চায়। একমাত্র রাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই জনগণের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেজন্য প্রয়োজন জনগণের সমর্থন। দেশের জনগণের সমর্থনে আমরা সে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে সেদিনও আপনাদের সমস্যার কথা আমার মনে থাকবে। তারেক রহমান উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলেন, প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরে থেকে আপনাদের সঙ্গে কথা বললেও সব সময়ই আমার মন পড়ে আছে আপনাদের মধ্যেই। দেশে থাকতে আপনাদের ভুয়াপুর, গোপালপুরের ওপর দিয়ে আমাকে প্রায়ই যেতে হতো দেশের উত্তরাঞ্চলে। সুতরাং আপনারা আমার মনের একটা বিরাট জায়গা দখল করে আছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য তো আপনারা প্রায়ই শোনেন। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইও না। আমার পিতা আপনাদের সবার প্রাণের মানুষ; তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন- কীভাবে দেশের খেটে খাওয়া কৃষক মজুর আর সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যেতে হয়, আর আমার মা আপনাদের সবার প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে শিখিয়েছেন মানুষের ভালোবাসা অর্জনের গুরুত্ব, শিখিয়েছেন দেশের মা-বোনের সমস্যা সমাধানে কীভাবে কাজ করতে হয়। তারেক রহমান বলেন, আমি জানি টাঙ্গাইলের শাড়ি আর চমচমের কথা। যদিও টাঙ্গাইলের শাড়ির সঙ্গে আপনাদের পাশের উপজেলা দেলদুয়ারের নাম সবাই বলে; কিন্তু আমি জানি এই গোপালপুরেও টাঙ্গাইলের বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়। এখানকার মা-বোনেরা সুতা রং করেন, সেগুলো শুকান আর মাকুতে ভরেন এবং ভাইয়ারা সেটা তাতে লাগিয়ে অসাধারণ সুন্দর শাড়ি তৈরি করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের যে কয়টি জায়গায় এখনো পাট অন্যতম প্রধান ফসল তার মধ্যে গোপালপুর, ভুয়াপুর উলেস্নখযোগ্য। একসময় এখানকার ঝিনাই, ধলেশ্বরী আর বৈরান নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান পাট নিয়ে যেত নারায়ণগঞ্জে। আজ বাংলাদেশে পাটের দুর্দশা। এখানেও অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। পাট দিয়ে কেন শুধু বস্তা তৈরি হবে। সারাবিশ্ব আজ পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত, আমাদেরও পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পলিথিন আমাদের নদী, খাল, পুকুর, ফসলের জমি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। পলিথিন মাটি পানি কিছুতেই মিশে যায় না। তিনি বলেন, ধান উৎপাদনে আপনারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আমি জানি, আপনাদের হারানো খুবই কঠিন। তার পরেও সারাদেশে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনায় আপনাদের সাহায্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার, আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, গোপালপুর আর টাঙ্গাইলের অনেক জায়গায় খুবই উন্নতমানের টুপি তৈরি হয়। রপ্তানি ও হয় পৃথিবীর বহু দেশে। আপনার মক্কা শরিফের ফুটপাতে আর দোকান থেকে যে টুপি কিনে আনেন হজ ওমরার সময় সেগুলোর বেশিরভাগই এই টাঙ্গাইলে তৈরি হয়। এর উন্নতি আর বাজারজাত করতে সাহায্য করা দরকার। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম টাঙ্গাইলে বিএনপির এমন জনসভা। এতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গোপালপুরের সুতি ভিএম হাইস্কুল মাঠের সমাবেশে যোগ দেন বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। সেস্নাগানে মুক্তির দাবি জানান তাদের প্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর।