অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর প্রতি আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় দল বেঁধে হামলা ও ভাঙচুরের কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আপনাদের, আমাদের সন্তানদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর যেন আমাদের কোনো স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয়, যাতে বলতে পারি আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, আমরা যাতে সবাই দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের- আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।'
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের
হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।'
মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা প্রতি বছর তাদের করতে হবে।
সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে ছয় 'বিশিষ্ট নাগরিক'কে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হলেন সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখব।'
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণ-অভু্যত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি।
অর্থনীতির চাকা সচলে কারখানা খোলা রাখুন
অর্থনীতির চাকা সচলে কারখানা খোলা রাখতে মালিকদের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, 'শ্রমিকদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করব। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করব। মালিক পক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। কারখানা সচল রাখুন। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলুন।'
তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প এসব এলাকায় শ্রমিক ভাই-বোনরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন ?উলেস্নখ করে ড. ইউনূস বলেন, 'এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপস্নবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়মনীতিবিহীন দ্রম্নত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারও কাম্য হতে পারে না।'
সব কালো আইন বাতিল করা হবে
সাইবার আইনসহ সব কালো আইন বাতিল বা প্রয়োজনে সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল/সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। অতিসত্বর এসব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডসহ বহুল আলোচিত ৫টি হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রম্নততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'সম্প্রতি আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত 'গুম সংস্কৃতি'র সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। এ ছাড়া আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ বাবা, স্বামী, ছেলে এবং ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সঙ্গে অপেক্ষা করছেন আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী।'
ড. ইউনূস বলেন, 'আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বের হয়ে আসছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গুমের শিকার ভাই-বোনদের কষ্ট ও যন্ত্রণাগাঁথা।
এ সময় তিনি বলেন, 'ছাত্র, শ্রমিক, জনতার বিপস্নবের মূল লক্ষ্য ছিল গণভবন। এটা ছিল স্বৈরাচারের কেন্দ্রবিন্দু। এই সরকার বিপস্নবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণভবনকে বিপস্নবের জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'ছাত্র-জনতার ক্ষোভকে স্থায়ীভাবে তুলে ধরার জন্য গণভবনের আর কোনো সংস্কার করা হবে না। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের মুখে তা যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল সে অবস্থায় তাকে রাখা হবে। যেসব মূল্যবান সামগ্রী জনতা নিয়ে গিয়েছিল সেগুলো অনেকে ফেরত দিয়ে গেছে। যারা নিয়ে গিয়েছিল তারা নিজেরাই ফেরত দিয়ে গেছে। তাদের আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরও কিছু জিনিস পাওয়া যায়নি। যারা নিয়ে গেছেন তাদের কাছে অনুরোধ করব তারা যেন এসব সামগ্রী ফেরত দিয়ে যান।'
মন খুলে আমাদের সমালোচনা করুন
ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে মন খুলে সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, 'সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।'
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মিডিয়া যাতে কোনো রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে সে জন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে তাদের পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়, জনকল্যাণে কাজ করে।
এক মাসে ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অতি স্বল্প জনবল নিয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করা হলেও প্রথম দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পাঠানো বিবিধ প্রস্তাব বিষয়ে দ্রম্নতগতিতে এবং আইনগত সব বাধ্যবাধকতা মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনপ্রশাসনের ১৩৫ জন অতিরিক্ত সচিব, ২২৭ জন যুগ্ম সচিব ও ১২০ জন উপসচিবকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৯টি জেলার জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং নতুন ৫৯ জন জেলা প্রশাসককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৬৭ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ১০ জন যুগ্ম সচিব, ৮ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ৬ জন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ৮০ জন ডিআইজি, ৩০ জন পুলিশ সুপারসহ ১১০ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। একজন ডিআইজি, একজন অ্যাডিশনাল ডিআইজি এবং চারজন পুলিশ সুপারকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আইজিপিসহ ১০ জন অতিরিক্ত আইজি, ৮৮ জন ডিআইজি, ২১ জন অ্যাডিশনাল ডিআইজি এবং ১৭৭ জন পুলিশ সুপারসহ মোট ২৯৭ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে
গণ-অভু্যত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, 'আমি আগেও জানিয়েছি, আবারও জানাচ্ছি; গণ-অভু্যত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সব আহত শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে সরকার। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ করা হতে থাকবে।'
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এই গণ-অভু্যত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার তার যাত্রালগ্নে 'জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন' নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সব শহীদ পরিবার ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে।
এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সব মানুষ ও বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
ব্যর্থ হওয়ার অবকাশ নেই
ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেন, 'আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমাদের কাজ বড় কঠিন। কিন্তু জাতি হিসেবে এবার ব্যর্থ হওয়ার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। আমাদের সফল হতেই হবে। এই সাফল্য আপনাদের কারণেই আসবে। আপনার সহযোগিতার কারণে আসবে। আমাদের কাজ হবে আপনার, আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করা।'
তিনি বলেন, 'আমাদের প্রথম মাসে যে গতিতে যে উদ্যম নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, আমরা চিন্তা করেছিলাম হয়ত সেটা করতে পারিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা গেলে আশা করি আমরা আমাদের গতি অনেক বাড়াতে পারব। এ জন্য দেশের সব মানুষের কাছে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, বড় ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, গৃহিণী সবার সহযোগিতা চাইছি।'
ড. ইউনূস বলেন, 'সবাই মিলে আমরা অগ্রসর হতে চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে, সেটা যেন বিনা বাধায়, রাষ্ট্রের ও সমাজের সহযোগিতায় প্রকাশ করতে পারি, সেই সুযোগের কাঠামো তৈরি করতে চাই। সবাই মিলে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে, সে ঝাড়ুদার হোক, ছাত্র হোক, শিক্ষক হোক, যে কোনো ধর্মের হোক, সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। এই হলো আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য। আসুন ছাত্র, শ্রমিক, জনতার এই বিপস্নবের লক্ষ্যকে আমরা দ্রম্নত বাস্তবায়ন করি।'
তিনি বলেন, 'এখন আমরা দ্বিতীয় মাস শুরু করছি। আমাদের দ্বিতীয় মাসে যেন আপনাদের মনে দৃঢ় আস্থার সৃষ্টি করতে পারি, সে চেষ্টা করে যাব।'
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'ধৈর্য ধরুন- এই কথাটি আমি মোটেই আপনাদের বলব না। আমরা সবাই অধৈর্য হয়ে পড়েছি, এতসব কাজ কখন যে শেষ হবে, এটা চিন্তা করে। আমরা অধৈর্য হব, কেন হব না! কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করব। কাজে কোনো অধৈর্যের চিহ্ন রাখব না।'