স্থায়ী কমিটির বৈঠক

ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনে বিএনপিতে ক্ষোভ

রোববার ঢাকায় সমাবেশ

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অন্তর্র্বর্তী সরকারের এক মাসের কার্যক্রমে বিএনপিতে সন্তুষ্টি থাকলেও আরও অনেক প্রত্যাশাও ছিল। সরকারের এখন পর্যন্ত কার্যক্রম পর্যালোচনায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম এখনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কাজ শুরু না হওয়া এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বৈরাচারের সহায়করা রয়ে যাওয়ায় দ্রম্নত এ ব্যাপারে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ আশা করছে দলটি। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ৮টায় বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী তা চলে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সক্রিয় প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের গত এক মাসের কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ ব্যাপারে প্রায় সবাই তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে অন্তর্র্বর্তী সরকারে আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় বিএনপির কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একজন বলেন, আলী ইমাম মজুমদারও ফ্যাসিবাদের পক্ষের লোক। এটা নিয়ে বিএনপি শিগগিরই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে এবং সরকারের কাছেও তুলে ধরবে। একইসঙ্গে এর বিরুদ্ধে বিএনপি সোচ্চারও হবে। স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়বিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ব্যাপারেও বিএনপির পর্যবেক্ষণ আছে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, তিনি ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। যে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অমানুষিক নির্যাতন করেছিল। সুতরাং অন্তর্র্বর্তী সরকারে হাসান আরিফের অন্তর্ভুক্তিতে বিএনপি সন্তুষ্ট না। অন্তর্র্বর্তী সরকার গত এক মাসে ডিসি (জেলা প্রশাসক) এবং সচিব পর্যায়ে প্রশাসনিক যে রদবদল করেছে, সেটাতে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এই রদবদল সর্বত্র নিরপেক্ষ হয়নি। এখানে অনেকেই আছেন যাদের স্বৈরাচারের সহায়ক শক্তি অথবা দোসর হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তাছাড়া এই প্রশাসনিক রদবদল নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্র্বর্তী সরকার আলোচনাও করেনি। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি, দ্রম্নততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেটি তাদের মূল কাজ। কারণ ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। সেই সংস্কার কার্যক্রম এখনো শুরু করেনি অন্তর্র্বর্তী সরকার। বিএনপি চায়, দ্রম্নততম সময়ে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করুক এবং এ ব্যাপারে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রম্নত আলোচনা আরম্ভ করবে অন্তর্র্বর্তী সরকার। বৈঠকে একজন নেতা বলেন, ছাত্র সমন্বয়করা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিএনপির নেতাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখছে। অথচ বিএনপি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গত ১৬ বছর ধরে নির্যাতিত ও গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। দীর্ঘ সময় ধরে দলটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল। দল ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী নিহতও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়কদের যথাযথ গাইডলাইন প্রয়োজন। দুজন সমন্বয়ক অন্তর্র্বর্তী সরকারেরও অংশ। সুতরাং এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লড়াই করা বিএনপির নেতাদের নিয়ে এ ধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য জনগণ মেনে নেবে না। ছাত্র সমন্বয়করা এ ধরনের বক্তব্য দিতে থাকলে মাঠপর্যায়ে এক ধরনের ভুল বার্তা যাবে। ফলে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হবে। তখন একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বৈঠকে ঢাকার বাইরে সফরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে গত রোববার জেলা প্রশাসকদের কাছে যে চিঠি দেওয়া হয়- সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একজন নেতা বলেন, বিএনপির প্রশ্ন হচ্ছে- কোন প্রটোকলে, কোন বিবেচনায় তাদেরকে এই নিরাপত্তা দেওয়া হবে? কারণ, তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কেউ না, দায়িত্বশীল কোনো পদেও নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ড নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। একজন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর গুম-খুন, মামলা-হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন করলেও জামায়াত আমির তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া জামায়াত নেতারা ভারত নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এটা জনগণের চাওয়া বা মতামতের প্রতিফলন না। জনগণ আওয়ামী লীগের বিচার চায়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সমাবেশ সফলে প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরালো করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপির এক নেতা। বৈঠকে বিএনপির হাইকমান্ডকে সাংগঠনিক পুনর্গঠন শুরুর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে, সেখানে দ্রম্নত নতুন কমিটি দেয়া দরকার। এর ফলে সংগঠন গতিশীল হবে।