আয়নাঘর উন্মোচন করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিখোঁজ ও গুম ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে 'বাংলাদেশ গুম পরিবার'। না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সোমবার দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম পরিবারের স্বজনরা এ হুঁশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক ও লেক্সাস গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বেলস্নাল হোসেন বলেন, '২০১৬ সালে ১০ অক্টোবরর্ যাব-১ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এক মাস ১০ দিন আমার ওপর নির্যাতন চলে। আমি যতদিন সেখানে ছিলাম, শুধু কান্নার আওয়াজ পেয়েছি। সেখানে
ছোট ছোট ঘর। বাইরের কোনো আওয়াজ আসত না। অনেক শর্ত দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে আমাকে ছাড়া হয়েছিল।'
লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে মোহাম্মদ বিলস্নাল হোসেন বলেন, 'গত ২৭ আগস্ট বর্তমান সরকার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছেন। সেই গেজেট ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু ১৫ দিন পরও তারা কোথায় বসবে, কীভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে কোনো রোডম্যাপ আমরা জানতে পারিনি। একাধিকবার যোগাযোগের পরও তাদের থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তদন্ত কার্যক্রম কবে কখন চালু করা হবে আমরা জানতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আয়নাঘর কোথায় কোথায় বানানো হয়েছে, বাংলাদেশে কতটি আয়নাঘর আছে, তা আমরা জানতে পারিনি। বাংলাদেশে যদি আয়নাঘর থাকে তাহলে বিচার বিভাগ, আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব আয়নাঘর উন্মোচন না করা হলে সন্দেহভাজন সব আয়নাঘর ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে। সব আয়নাঘর ভেঙে দেওয়া হবে।'
মোহাম্মদ বিলস্নাল হোসেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত গুম, খুন, অপহরণ হয়েছে তার শতকরা ৭০-৮০ শতাংশ র?্যাব করেছে। ক্রসফায়ারের নামে নাটক সাজিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ মারা হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত র?্যাবে দায়িত্বে থাকা ডিজি, এডিশনাল ডিজি, ডিবিপ্রধান ও ডিজিএফআই প্রধান, সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'মেজর (অব.) সাজ্জাদ আহম্মেদ র?্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিটি সোর্সের আমরা বিচার চাই।র্ যাবকে বিলুপ্তি ঘোষণা করে নতুন বাহিনী হিসেবে রূপান্তর করা হোক। বাংলার মানুষ র?্যাবকে দেখতে চায় না। তারা একটি সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত।'
ছেলের সন্ধান চেয়ে বৃদ্ধ বাবা মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, 'আমি আমার ছেলেকে নিয়ে ঢাকার সদরঘাটে লেবারের কাজ করতাম। সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানের লোকদের সঙ্গে আমার ছেলে সাদি হাওলাদারের ঝগড়া হয়। সেটাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে পিরোজপুর থেকের্ যাব আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি পরও আমার ছেলেকে পেলাম না। সরকার পতনের পর থেকে অনেকেই আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। আমার ছেলে কই। আমার ছেলের খোঁজ দেবে কে?'
আরেক স্বজনহারা শারমিন আক্তার চাঁদনী বলেন, '২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজশাহীর থেকে আমার ভাইকের্ যাব-৫ এর সদস্যরা নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আমরা থানায় থানায় ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাইনি।'
অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন চাঁদনী। সেগুলো হলো- অবিলম্বে গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের টর্চার সেল থেকে নিঃশর্ত মুক্ত দিতে হবে; গুম-নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সব সেল দেখতে দিতে হবে; যাদের খুন করা হয়েছে তাদের পরিবারকে প্রমাণস্বরূপ সনদ দিতে হবে; প্রতিটি নিখোঁজ পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো প্রকার আয়নাঘর থাকতে পারবে না এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।