রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি

তেজগাঁওয়ে ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ: যানজটে ভোগান্তি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ছয় দফা দাবিতে সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা -ফোকাস বাংলা

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছয় দাবিতে ঢাকা পলিটেকনিক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গস্নাস অ্যান্ড সিরামিকের শত শত শিক্ষার্থী সাত রাস্তা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে মগবাজার, মহাখালী, খামারবাড়ি-ফার্মগেট-শাহবাগ-কারওয়ান বাজার, ইস্কাটন, মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকার সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। সড়কে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। এতে দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। ভাদ্রের প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে অনেকেই হেঁটে অফিসে আসেন। তবে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় নারী ও শিশু বাসযাত্রীদের। সন্ধ্যা ৬টার পর সংশ্লিষ্টরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তেজগাঁও আসছিলেন মাহিন হাসান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, 'অন্যদিন অফিসে আসতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে সর্বোচ্চ। আজ আসতে গিয়ে ২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগে গেছে। খামারবাড়ি থেকেই যানজট দেখেছি। কোনো যানবাহন নড়ছে না। তারপর ফার্মগেটেও তীব্র যানজট। তেজগাঁও রেলক্রসিং বন্ধ করে রাখা হয়েছে। হাতিরঝিলের সামনে-সাত রাস্তাও বন্ধ। তীব্র রোদ এবং গরমের মধ্যে হেঁটেই অফিসে এসেছি।'

ডিএমপি তেজগাঁও জোনের সরকারি কমিশনার (ট্রাফিক) স্নেহাশীষ দুপুরে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলনে এইসব এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলা হলেও তারা দীর্ঘসময় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।'

বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ফার্মগেট থেকে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা প্রায় পুরোটাই যানজটে স্থবির হয়ে ছিল। গুগল ম্যাপে এই রাস্তার পুরোটাই লাল দেখা গেছে। এ ছাড়া মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মগবাজার, ইস্কাটন, হাতিরঝিলের আশপাশের সড়কগুলো লাল হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ

এসব রাস্তায় যানজট তীব্র।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, 'কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিজয় সরণি উড়ালসড়কে গাড়ি চলতে দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য এলাকায় যানজট হয়েছে।'

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে যানবাহনের কয়েকজন চালককে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বা?গ্বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তাদের একজন মো. জামাল জানান, তিনি একটি জরুরি কাজে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহাখালী থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে রমনার উদ্দেশে রওনা দেন; কিন্তু দুপুর ১২টা থেকে তিনি এখানে এসে আটকে যান। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তারা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করার পরও তারা কর্ণপাত করছেন না।

ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি মো. আশরাফুল জানান, সরকারি চাকরিসহ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাদের দাবিগুলো নিয়ে তারা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কিন্তু তাদের দাবি মানার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাননি। এ কারণে তারা বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস না পেলে তারা সড়ক ছেড়ে যাবেন না।

পরে সন্ধ্যা ৬টার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী শামীমুর রহমান বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন। এর পর থেকে এ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।'

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদপ্তর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রম্নত স্থানান্তর করা; ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিতসহ প্রতি সেমিস্টার (পর্ব) পূর্ণ মেয়াদের (ছয় মাস) করা; উপসহকারী প্রকৌশলী পদে (১০ম গ্রেড) ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখা।

এছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্যপদে কারিগরি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপেস্নামা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ সিট নিশ্চিত করার দাবিতে রয়েছে তাদের।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, সরকারি বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মনোটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলো মাত্র আঠারো শতাংশ শিক্ষক দিয়ে চলছে। চলমান এই শিক্ষক সংকট নিরসনে বিপিএসসি গত ২৬/১০/২০২১ইং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। দ্রম্নত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে লিখিত পরীক্ষা ও গত ২৭/০৫/২০২৪ ইং তারিখে সব পদের মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে।

তবে মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৩ ও ১৫তম গ্রেডভুক্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন, যেখানে তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১০ম গ্রেড জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দাবি করেন, যা ২০২০ সালের প্রজ্ঞাপনের ক্যাডার নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাইকোর্ট মামলায় রুল ইসু্য না করে বাদীদের দায়ের করা আবেদন (এনেক্স-আই) ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আদেশ প্রদান করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড (কর্মকর্তা-কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ মোতাবেক ১৩ ও ১৫তম গ্রেডভুক্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর (সপ/টিআর) পদ থেকে ১০ম গ্রেডভুক্ত জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক/নন-টেক) পদে পদোন্নতির সুযোগ নেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদনটি নিষ্পত্তি করেন। তা সত্ত্বেও ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা হাইকোর্ট বিভাগে পুনরায় রিট পিটিশন দায়ের করতে থাকলে কারিগরির শিক্ষক নিয়োগের সব ধাপ সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ মামলার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে কারিগরির শিক্ষক স্বল্পতার দ্রম্নত নিরসন সম্ভব হচ্ছে না।

তাই শিক্ষক সংকট নিরসনে ২০২১ সালে অবৈধভাবে নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে