শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভারতের বক্তব্যে অবাক ও বিস্মিত বাংলাদেশ

সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ভারতের বক্তব্যে অবাক ও বিস্মিত বাংলাদেশ

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যে 'অবাক' হওয়ার কথা বলেছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমি যতটা উদ্বিগ্ন তার থেকে বেশি অবাক যে, উনি এ ধরনের কথা কেন বললেন। আমি এটার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। আমি কোনো অবস্থাতেই মনে করি না যে ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো যুদ্ধবিগ্রহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। উনি এটা নিজের দেশের কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন কি না, সেটাও আমাদের বুঝতে হবে।'

প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতা হারানো বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। বাংলাদেশে আকস্মিক এই পটপরিবর্তনে অস্বস্তিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিলিস্নর সম্পর্ক এখন কেমন হবে, তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার লক্ষ্নৌয়ে ভারতের তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারের এক যৌথ সম্মেলনে রাজনাথ সিং বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত একটি 'শান্তিপ্রিয় দেশ'। তবে 'অপ্রত্যাশিত' ঘটনার মুখোমুখি হলে শান্তি রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।

রাজনাথ সিংয়ের ওই বক্তব্যকে 'কাজের কথা বলতে এসে আজেবাজে বকা' হিসেবে বর্ণনা করেন একসময় কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, 'উনি যেভাবে বলেছেন, এটা বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ। কারণ ইউক্রেনে যুদ্ধের হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫

কারণে তো ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতির কোনো কারণ দেখি না, বা হামাসের সঙ্গে যে সমস্যা হচ্ছে, তাতে করেই বা ভারতের এখানে কী সম্পর্ক? আর ইউক্রেইন এবং হামাসের সঙ্গে বাংলাদেশ কী করে তুলনীয় হয়, এটাও আমার বোধগম্য নয়।'

বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কেবল 'অনুমান নির্ভর প্রতিক্রিয়া' দেখাতে চায় না মন্তব্য করে

উপদেষ্টা বলেন, 'আমি কোনো নি-জার্ক রিঅ্যাকশন দেখাতে চাই না; আমরা অবশ্যই দেখব যে উনি এটা কেন বলেছেন।'

রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য ভারতের হুমকি কি না, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, 'আমি এখনো মনে করি যে, এটা উনার নিজস্ব, অভ্যন্তরীণ কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন। কাজেই আমি কোনো স্পেকুলেট করতে চাই না।'

ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমি এই মুহূর্তে এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কারণ আমি বললাম যে এটুকু যোগাযোগ হয়েছে ওটুকু যোগাযোগ হয়েছে। বরং আমি বলেছি, নি-জার্ক কোনো রিঅ্যাকশন দেখাতে চাই না আমরা। আমরা অবশ্যই এটা দেখব যে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এটা আমাদের দেখতে হবে, এটা আমরা দেখব।'

ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই যে কোনো দেশ যে কাউকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। দেওয়া উচিত কি না, এক্ষেত্রে সেটা দেখার বিষয়, আমরা তা দেখব।'

রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানাবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'দেখা যাক; সেই পরিস্থিতিতে আপনারা প্রশ্ন করলে আমরা উত্তর দেব। আপাতত এটা থাকুক।'

এদিকে, নিউ ইয়র্কে নরেন্দ্র মোদি ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সাধারণত নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক আয়োজনের একটি পদ্ধতি রয়েছে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ এগোবে। রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

এর আগে শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে বলা হয়, চলতি মাসের শেষদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তবে নয়াদিলিস্ন এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ওই ব্যক্তিরা বলেছেন, সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলোকে ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিলিস্ন।

রোববার এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না যে হচ্ছে বা হচ্ছে না (সৌজন্য সাক্ষাৎ)। বস্তুত মোদি যাচ্ছেন এটার ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। এ ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া আছে, সেই অনুযায়ী আমরা এগোব। এটা এমন নয় যে এক মাস আগে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী আগাবে। তারা যদি চায় যে দেখা করবে না, আমাদের তো জোর করে দেখা করার কিছু নেই।'

নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাতজনের তালিকা যেটা প্রকাশিত হয়েছে, সেটি সঠিক। এর বাইরে আরও একটি তালিকা আছে, এতে আমি আছি। তবে প্রতিনিধিদলের সদস্য ১০-১২ জনের বেশি হবে না।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে