অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশের পাঁচ জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযানে ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার হয়েছে ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- একনলা বন্দুক, এলজি ও এমএম পিস্তল। এ ছাড়া দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে আছে দা, চাইনিজ কুড়াল ও কিরিচ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত এসব অস্ত্র ও গোরাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
উখিয়ায় অস্ত্রসহ ৮ জন আটক : উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের সদর উপজেলা পিএম খালিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ ৮ জন সন্ত্রাসী আটক হয়েছেন।
শুক্রবার ভোরে ১০ পদাতিক ডিভিশনের ২ পদাতিক ব্রিগেডের ৯ম ইষ্ট বেঙ্গল সেনাবাহিনী,র্ যাব, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী এ অভিযান চালায়।
র্
যাব ১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম চৌধুরী জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওশের ইবনে হালিমের উপস্থিতিতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা পিএমখালির মাইজপাড়া গ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের
জন্য দুটি বাড়ি ঘেরাও করে। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার এ অভিযানে ৮ জন সন্ত্রাসীকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ৩টি একনলা বন্দুক, ২টি এলজি, ২টি ৯ এমএম পিস্তল, ৩টি পিস্তল ম্যাগাজিন, ৯ রাউন্ড পিস্তল এমো, ৩৯টি কার্তুজ, ৫টি দা, ১টি চেইন, ১টি চাইনিজ কুড়াল ও ২টি কিরিচ।
আটকরা হলেন- কলিম উলস্নাহ (৩৪), মো. খোরশেদ আলম (৩৭), মো. হাসান শরীফ লাদেন (২০), মো. শাহিন (২৩), মো. মিজান (২০), আব্দুল মালেক (৪৮), আব্দুল হাই (২৪) ও আব্দুল আজিজ (২৫)।
র?্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়েছে, উদ্ধার অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে আটক সন্ত্রাসীরা কয়েক বছর ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, হত্যাসহ নাশকতামূলক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। যৌথবাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আটকরা আলোচিত মোর্শেদ বলী হত্যাকান্ডের অভিযুক্ত আসামি। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসীদের সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিলেটে নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার
সিলেট অফিস জানায়, র??্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব)-৯ সিলেটের অভিযানে নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় নয় রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন এবং কিছু ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে র?্যাব-৯ সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মশিউর রহমান সোহেল জানান, দুপুরে মহানগরীর মিরাবাজার আগপাড়া এলাকার রাজিব নামের এক ব্যক্তির বাসা থেকে এই পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। এটি কোনো থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র হতে পারে। তবে অভিযানকালে রাজিবকে পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়ায় কৃষক দলের নেতাসহ আটক ৮
এদিকে, আশুলিয়ার পোশাক খাতে নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী। অভিযানে ঢাকা জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিবসহ মোট আটজনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আশুলিয়ার জামগড়া ও পলস্নী বিদু্যৎ এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের্ যাব, পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
পুলিশ জানায়, যৌথবাহিনীর একটি দল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পোশাক কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টিকারী সন্দেহে ছয়জনকে আটকের পরে তাদের আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করে। একই সময় যৌথবাহিনীর আরেকটি দল আশুলিয়া পলস্নী বিদু্যৎ এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবু হানিফকে আটক করা হয়। তিনি ঢাকা জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব।
পুলিশ জানায়, ঝুট ব্যবসার আড়ালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার জন্য বহিরাগতদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ভাড়া করে নিয়ে আসা এবং শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক এবং অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, 'যৌথবাহিনী মোট আটজনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পোশাক খাত অস্থিরতার অভিযোগ রয়েছে।'
নোয়াখালীতে শটগান মিলেছে কবরস্থানে
নোয়াখালীতে সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর নামে লাইসেন্স করা একটি শটগান পরিত্যক্ত অবস্থায় কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় ১২টি কার্তুজও উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয় জানিয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কবিরহাট থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র?্যাবের যৌথ অভিযান চালানো হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে ওই কবরস্থান থেকে বস্তাটি উদ্ধার করে উপস্থিত লোকজনের সামনে খুলে একটি শটগান এবং ১২টি কার্তুজ পাওয়া যায়।'
এসপি বলেন, 'অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ত্রটি নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর নামে লাইসেন্স করা। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।'
নাটোরে যুবলীগ নেতার বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র
যৌথবাহিনীর অভিযানে নাটোর জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার বাড়ি থেকে একটি ভারতীয় পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার ভোরে শহরের কানাখালী এলাকায় ওই নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া যৌথ অভিযান চলাকালে শুক্রবার ভোরে জেলা যুবলীগের সভাপতি এহিয়ার বাসা থেকে একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও পিস্তলের কভার উদ্ধার করা হয়।'
এ ঘটনায় অবৈধ অস্ত্র মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম বু্যরো ও স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৩২টি বৈধ অস্ত্রের মধ্যে ৬০১টি, যশোরে ৩৬৫ অস্ত্রের মধ্যে ২৭০টি ও চাঁদপুরে ১২২ অস্ত্রের মধ্যে ১২১টি জমা পড়েছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জে ৯৭টি অস্ত্র জমা পড়েছে। অস্ত্রের সঙ্গে জমা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৯টি গুলিও। তবে বাকি ১৭টি অস্ত্র এখনো জমা পড়েনি। যশোরে আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়া ও তারা আত্মগোপনে থাকায় অস্ত্র জমা দিতে পারেননি বলে সূত্রে জানা গেছে। চাঁদপুরে গণপিটুনিতে নিহত এক ইউপি চেয়ারম্যানের লুট হওয়া অস্ত্রটি জমা পড়েনি। এদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শতভাগ জমা না দেওয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যারা অস্ত্র জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সিএমপির ১৬ থানায় ৪৫৪টি এবং জেলার ১৫ থানায় ২৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইসু্য করা হয়। এর মধ্যে সিএমপিতে বৈধ অস্ত্র জমা পড়েছে ৩৬১টি আর জমা পড়েনি ৯৩টি। অন্যদিকে জেলায় জমা পড়েছে ২৪০টি, আর জমা পড়েনি ৩৮টি অস্ত্র।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে কোতোয়ালিতে ৫৩টি, বাকলিয়ায় ৫টি, সদরঘাটে ২১টি, চকবাজারে ৩১টি, চান্দগাঁওয়ে ২৫টি, পাঁচলাইশে ৯৫টি, খুলশীতে ৫০টি, বায়েজিদ বোস্তামিতে ৮টি, ডবলমুরিংয়ে ১৭টি, হালিশহরে ১৭টি, পাহাড়তলীতে ৯টি, আকবরশাহতে ১টি, বন্দরে ১২টি, ইপিজেডে ৭টি, পতেঙ্গায় ৩টি এবং কর্ণফুলী থানায় ৭টি অস্ত্র জমা পড়েছে। অস্ত্রের পাশাপাশি এসব থানায় জমা পড়েছে ১৯ হাজার ৬২৬ রাউন্ড গুলি।
সূত্র মতে, গত ১৫ বছরে কোতোয়ালিতে ৭৯টি, বাকলিয়ায় ৫টি, সদরঘাটে ২৬টি, চকবাজারে ৩৫টি, চান্দগাঁওতে ২৪টি, পাঁচলাইশে ৬০টি, খুলশীতে ৯৩টি, বায়েজিদে ৩২টি, ডবলমুরিংয়ে ৩৫টি, হালিশহরে ২১টি, পাহাড়তলীতে ১২টি, আকবরশাহে ৩টি, বন্দরে ১২টি, ইপিজেডে ৭টি, পতেঙ্গায় ৩টি এবং কর্ণফুলী থানা এলাকায় ৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের খুলশী থানায় অন্যান্য জেলার ২০টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র রয়েছে। নোয়াখালী জেলার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২টি অস্ত্র জমা হয়েছে ডবলমুরিং থানায়। পাহাড়তলী থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পশ্চিম থানায় এবং আরেকটি সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় জমা আছে। আকবরশাহ থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র সীতাকুন্ড থানায় এবং সীতাকুন্ড থানার অনুকূলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১টি অস্ত্র আকবরশাহ থানায় জমা হয়েছে। কর্ণফুলী থানার ২টি অস্ত্র ডবলমুরিং থানায় ও ১টি অস্ত্র খুলশী থানায় জমা হয়েছে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেলার ১৫ থানা এলাকায় ইসু্য হওয়া ২৭৮টি অস্ত্রের মধ্যে জমা পড়েছে ২৪০টি অস্ত্র। অর্থাৎ বেঁধে দেওয়া সময়েও জমা পড়েনি ৩৮টি অস্ত্র।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, বিভিন্ন থানায় জমা পড়া অস্ত্রের মধ্যে কিছু অন্য জেলায় বা অন্য থানা এলাকায় নিবন্ধিত ছিল যেগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন থানায় ৪৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৩টি নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল খুলশী থানায়। এছাড়া প্রজ্ঞাপন জারির পর সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জমা পড়েছে পাঁচলাইশ থানায় (৯৫টি) এবং সবচেয়ে বেশি গুলি জমা পড়েছে পাঁচলাইশ থানায় (পাঁচ হাজার ৩৬৮ রাউন্ড)। যারা এখনো অস্ত্র জমা দেয়নি তাদের তালিকা করে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উলেস্নখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিকদের দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার মধ্যে এসব অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা না দিলে এসব অস্ত্রকেও অবৈধ ঘোষণা করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। তবে এর আগে দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বহাল থাকবে, তাদের আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে হবে না।
এদিকে যশোরে ৯৫টি অস্ত্রের পাশাপাশি প্রায় এক হাজার রাউন্ড গুলি জমা পড়েনি। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়া ও তারা আত্মগোপনে থাকায় অস্ত্র জমা দিতে পারেননি। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিযেছে যারা অস্ত্র জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান চালানো হবে। এছাড়া অবৈধ অস্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ নিয়ে বুধবার জরুরি সভা করেছে জেলার যৌথবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিন বিকালে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এই সভায় যৌথ অভিযান চালানোর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, 'জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ইসু্যকৃত লাইসেন্স এবং অন্যান্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে যশোর জেলায় বসবাসরত বেসামরিক জনগণের অনুকূলে ইসু্যকৃত লাইসেন্সের বিপরীতে ক্রয়কৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট থানায় ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলায়ও যশোরের ইসু্যকৃত অস্ত্র জমা হতে পারে। তাই হিসাব মেলানোর পর কার্যকর পদক্ষেপের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যশোরে যে কোনো সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রতিটি অভিযানেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একজন মেজর, বিজিবি, পুলিশ,র্ যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।'
যশোর জেলা প্রশাসকের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখার তথ্য মতে, জেলায় লাইসেন্স ইসু্যকৃত অস্ত্রের সংখ্যা এক হাজার ১৩৫টি হলেও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা প্রদানের জন্য যশোর জেলায় চাহিত অস্ত্রের সংখ্যা ৩৬৫টি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেওয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩ সেপ্টেম্বর।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির বলেন, 'নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দেওয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। যৌথবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করবে এবং ওই অস্ত্রগুলো আমরা উদ্ধার করতে পারব বলে আশাবাদী।'
চাঁদপুরে ১২১টি অস্ত্র জমা
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় গণপিটুনিতে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের খোয়া যাওয়া পিস্তল ছাড়া ১২২টি অস্ত্রের মধ্যে ১২১টি জমা পড়েছে।
বৃহস্পতিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইও-১) মো. মনিরুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্ণীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খানের খোয়া যাওয়া শটগান উদ্ধার হলেও পিস্তলটির সন্ধান এখনো মেলেনি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সেলিম খান ও তার ছেলে চিত্রনায়ক শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ সময় সেলিম খানের লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি শটগান খোয়া যায়।
চাঁদপুর সদরের বাগাদি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আহসান তালুকদার শটগানটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে এখনো পিস্তলটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, 'আমি গত ১ সেপ্টেম্বর এই থানায় যোগদান করি। সেলিম খানের পিস্তল খোয়া যাওয়ার বিষয়টি অভিযোগ আকারে জানানো হয়নি।'
মুন্সীগঞ্জে স্থগিত লাইসেন্সের ৯৭ অস্ত্র জমা
মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বেসামরিক জনগণকে দেওয়া স্থগিত লাইসেন্সের ৯৭ আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। অস্ত্রের সঙ্গে জমা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯৯টি গুলিও। তবে বাকি ১৭টি অস্ত্র এখনো জমা পড়েনি। জমা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বন্দুক, রিভলভার, পিস্তল ও শর্টগান।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলম বলেন, 'মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিসহ অনেক লাইসেন্সধারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাদের অস্ত্র জমা দিয়েছেন।'
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেগুলো গোলাবারুদসহ সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালায়। নির্দেশনা অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে অস্ত্র জমা পড়ে। তবে বাকি থাকা ১৭ লাইসেন্সে ইসু্যকৃত অস্ত্রগুলো সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, উলিস্নখিত সময়ের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে ১৮৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইসু্য করা হয়। এর মধ্যে ১৪টি লাইন্সের বিপরীতে অস্ত্র ইসু্যই হয়নি। তাই ইসু্য করা অস্ত্রসহ লাইসেন্স সংখ্যা ১৭০। আর বেসামরিক জনগণকে দেওয়া ইসু্যকৃত অস্ত্রসহ লাইসেন্স ১১৪টি।'