গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা, আটক ১

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে কারখানা শ্রমিক আন্দোলনে সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি না থাকলেও সম্প্রতি একেক কারখানার শ্রমিকরা পৃথক ইসু্যতে শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা বিক্ষোভ-ভাঙচুর-অবরোধের মতো কর্মসূচিও নিচ্ছেন। এতে অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় শিল্পাঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিল্পকারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টিকারী সন্দেহে যৌথবাহিনী একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আটক \হব্যক্তির নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেনি সংশ্লিষ্টরা। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ি জোনের সহকারী কমিশনার সুবীর কুমার সাহা জানান, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কোনো ইসু্য নেই। একেক কারখানার শ্রমিকরা একেক ইসু্য তুলে অস্থিরতা তৈরির পাঁয়তারা করছে। কেউ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা খুলে দেওয়া, চাকরি হারানো শ্রমিকদের পুনর্বহাল, ওভারটাইমের ও বাৎসরিক ছুটির টাকা বৃদ্ধি করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যায় বৈষম্য দূর করা ইত্যাদি। তিনি জানান সাম্প্রতিক শ্রমিক বিক্ষোভ-আন্দোলন-ভাঙচুর-হামলা চলাকালে এক শ্রেণির লুটেরা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করে এবং কারখানায় লুটপাট করে। গত ৩১ আগস্ট গাজীপুরের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার শ্রমিকরা দুই বছর পর পর সব পারমানেন্ট কর্মীদের গ্রেড উন্নয়ন, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা এবং ছুটি কালীন সময়ে সম্পূর্ণ বেতন এবং ভাতা প্রদান করাসহ ২১ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা ডিউটি করলে ৩ ঘণ্টা ওভার টাইম এবং (ডি এ) প্রদান, শ্রমিকদের নূ্যনতম মাসিক ১৫,০০০ টাকা বেসিক ধরে সব সুবিধা বহাল রাখা, কারখানার ম্যানেজমেন্টের মতো শ্রমিকদের প্রতি বছর ২০% বেতন বৃদ্ধি, বেসিকের সমপরিমাণ ঈদ বোনাস প্রদান ও চাকরিতে হয়রানি বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে ৩ সেপ্টেম্বর বাটা জুতা কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার নেকসাস সোয়েটার কারখানার শ্রমিক স্বপন চন্দ্র রায় জানান, শ্রমিক নেতারা বাইরে থেকে দলবলসহ কারখানার এলাকায় গিয়ে নানা দাবির কথা বলে সাধারণ শ্রমিকদের মিছিল-বিক্ষোভে অংশ নিতে বলে। কথিত ওইসব নেতা-শ্রমিদের তারা চেনে না। তারা নিয়োগের সময় ৯০ ভাগ নারী না নিয়ে সমহারে পুরুষ-নারী শ্রমিক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবির কথা তারা ইতোপূর্বে সাধারণ শ্রমিকরা কখনো শোনেননি। গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস সড়ক এলাকার ফারদার ফ্যাশন কারখানার এমডি মো. জাকির হোসেন জানান, কাস্টমারদের চাহিদা ও কাজে অধিক মনোযোগী থাকায় ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এ ক্ষেত্রে সমানুপাতিক হারে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। এছাড়া বেকার শ্রমিকদের নিয়োগের ইসু্যও তাদের রয়েছে। অর্ডার না থাকায় তথা অর্থের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বেকার হওয়া ওইসব শ্রমিক ছাড়াও পোশাক শিল্প শ্রমিক নিয়োগ কমে গেছে। এমতাবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে পোশাক শিল্পে নাশকতা নৈরাজ্য ঠেকাতে সরকার ও প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল আলম জানিয়েছে, নিটিং কারখানায় আগে পুরুষ শ্রমিক বেশি কাজ করত। আর পোশাক কারখানার সুয়িং কারখানায় নারী শ্রমিকরা বেশি কাজ করতেন। কিন্তু ডিজিটাল যুগে নিটিং কারখানায় জ্যাকার্ড মেশিন ঢুকে পড়ায় কম শ্রমিকে বেশি কাজ করা হচ্ছে। এতে ওইসব ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়াও অনেক বন্ধ কারখানার শ্রমিকরাও তাদের চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন। টিফিন বিল, নাইট বিল, ওভারটাইম ইত্যাদি দাবি যেগুলো কারখানার ভেতরেই মালিকদের সঙ্গে মেঠানো যায়। কিন্তু ওইসব শ্রমিকরা তা না করে রাজপথে নেমে অবরোধ-আন্দোলন করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে ঝুট ব্যবসা দখলে নিতেও রাজনৈতিক নেতারা শ্রমিকদের আন্দোলনে নামাতে ইন্ধন দিচ্ছে।