কাল থেকে তদন্ত শুরু

আদানির সঙ্গে বিদু্যৎ চুক্তি :শুল্কে 'অনিয়ম' খুঁজতে কমিটি

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ভারতের আদানি গ্রম্নপের কাছ থেকে বিদু্যৎ আমদানি চুক্তিতে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলো কীভাবে সম্পাদন করা হয়েছে, তাতে কোনো ত্রম্নটি ছিল কি না, শুল্ক পরিহার বা প্রত্যাহারের বিষয় রয়েছে কি না; এমন আরও প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্তে নামছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এই কাজে আট কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের আদেশ জারি হয়েছে বৃহস্পতিবার। আদেশে সই করেছেন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুনমুন আকতার দিনা। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম এই কমিটি অনুমোদন করেছেন। রোববার থেকে শুরু হচ্ছে কমিটির তদন্তকাজ। ভারতের বিতর্কিত শিল্পপতি গৌতম আদানির মালিনাধীন বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রম্নপের কাছ থেকে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে বিদু্যৎ কেনার অভিযোগ রয়েছে। বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকা ধনকুবের গৌতম আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে বিদু্যৎ সরবরাহের লক্ষ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া ঝাড়খন্ড রাজ্যের গড্ডায় বিদু্যৎকেন্দ্রে স্থাপন করে আদানি। সেই কেন্দ্রের জন্য কয়লা কিনতে ঢাকার কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে গত বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। এরই মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে বাংলাদেশে বিদু্যৎ বিক্রি করে আদানি দ্বিগুণ মুনাফা করছে। নানা কারণে শেখ হাসিনার আমলে হওয়া এই ব্যয়বহুল চুক্তি বাতিলের দাবিও উঠেছে। এমন অবস্থায় আদানির সঙ্গে হওয়া বিদু্যৎ চুক্তিতে শুল্ক-কর বিষয়ে অনিয়ম রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অধিপ্তরের যুগ্ম পরিচালক এদিপ বিলস্নাহকে। এতে একজন সদস্যসচিব ও ছয়জনকে সদস্য রাখা হয়েছে। অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় আমলে নেওয়া হবে জানতে চাইলে এদিপ বিলস্নাহ বলেন, 'আমরা প্রথমেই আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তিটি দেখব, কী ছিল এখানে। এরপর দেখব বিদু্যৎ আমদানি হতো কোন কোন শুল্ক স্টেশন দিয়ে এবং সে ক্ষেত্রে তাদের ডিক্লারেশন (ঘোষণা) কী ছিল।' যে এইচএস কোডের মাধ্যমে আদানির কাছ থেকে বিদু্যৎ আমদানি হচ্ছে, সেটি কাস্টমস আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, সেটিও দেখা হবে বলে তথ্য দিয়েছেন কমিটির এই আহ্বায়ক। এদিপ বিলস্নাহ বলেন, চুক্তি দিয়ে শুরু করব। কারণ এ ক্ষেত্রে কাস্টমস আইন পরিপালন সঠিকভাবে হয়েছে কি না, দেখার আছে। রোববার থেকে কমিটির কাজ শুরু হবে। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে এই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে। কমিটি কার্যপরিধির বিবরণ অনুযায়ী আদানির বিদু্যৎ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের নির্ধারিত মূল্য এবং তাতে শুল্ক-কর প্রযোজ্য কি না, সেটি যাচাই করা; এ পর্যন্ত আমদানি করা বিদু্যতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্ক-করের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধ করা হয়েছে কি না- এসব খতিয়ে দেখবে কমিটি। আমদানি করা বিদু্যতের শুষ্ক-কর মওকুফ সংক্রান্ত কোনো চুক্তি ছিল কি না; থাকলে এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি হয়েছে কি না- এটিও তদন্ত করবে কমিটি। কোন কাস্টমস হাউস বা স্টেশন দিয়ে এবং কী প্রক্রিয়ায় বিদু্যৎ আমদানি করা হচ্ছে এবং আলোচ্য পণ্যের শুল্কায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কোনো দপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া আছে কি না; এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে বলে জানাচ্ছেন এদিপ বিলস্নাহ। যদি অন্য কোনো বিষয় থাকে, যেটি শুল্ক-করের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত; তাও খতিয়ে দেখার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কাজের সুবিধার জন্য প্রয়োজন হলে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন : উপ-পরিচালক মুনমুন আকতার দিনা, রাজস্ব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া, রাজস্ব কর্মকর্তা পলাশ কুমার মলিস্নক, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাহেদ হাসান লিমন। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বিদু্যৎ বিভাগ ও 'আদানি পাওয়ার' এর মধ্যে বিদু্যৎ কেনার চুক্তি হয়। আদানি পাওয়ার হলো বিদু্যৎ-জ্বালানি খাতের আদানি গ্রম্নপের একটি প্রতিষ্ঠান। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদু্যৎ দিতে ভারতের ঝাড়খন্ডের গড্ডায় বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার। আদানির বিদু্যৎ দেশে এনে জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে বিশেষ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাবস্টেশন ও অন্যান্য সঞ্চালন স্থাপনা নির্মাণ করেছে বিদু্যৎ সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি। গত বছরের ৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে ঝাড়খন্ডের গড্ডা থেকে আদানির বিদু্যৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের বিদু্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়।