সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনাথ সিং

বাংলাদেশ-চীনসহ অন্যান্য সংঘাতের ওপর নজর রাখুন

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাজনাথ সিং
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তি রক্ষার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-হামাস সংঘাত এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উলেস্নখ করে রাজনাথ তার দেশের সামরিক কমান্ডারদের এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণের পরামর্শ দেন। তিনি ভারতের সামরিক বাহিনীকে 'অপ্রত্যাশিত' ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেন। ভারতের উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্‌েণৗতে বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডারস কনফারেন্সে সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিটি ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন বু্যরোর (পিআইবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের এই সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষদিন ছিল বৃহস্পতিবার। সম্মেলনে জাতীয় স্বার্থ রক্ষাসহ 'আত্মনির্ভর ভারত'-এর রূপকল্পকে এগিয়ে নিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর অমূল্য অবদানের প্রশংসা করেন রাজনাথ। একই সঙ্গে তিনি তিন বাহিনীর মধ্যে যৌথতা ও সংহতিকে আরও এগিয়ে নিতে গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ বলেন, ভারত একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তি রক্ষার জন্য ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যৌথ সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত করার তাৎপর্যের ওপর জোর দেন রাজনাথ। ভবিষ্যৎ যুদ্ধে দেশটি যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে, সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। পাশাপাশি উসকানির ক্ষেত্রে সমন্বিত, দ্রম্নত ও আনুপাতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর জোর দেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-হামাস সংঘাত এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উলেস্নখ করে রাজনাথ তার দেশের সামরিক কমান্ডারদের এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন। এই প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে ভারত যেসব সমস্যার মুখে পড়তে পারে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দেন। তিনি সামরিক বাহিনীকে 'অপ্রত্যাশিত' ঘটনা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। ভারতের উত্তর সীমান্তের পরিস্থিতিসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের মাধ্যমে বিস্তৃত ও গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন রাজনাথ। এসব বিষয় এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। রাজনাথ বলেন, 'বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সত্ত্বেও ভারত একটি অসাধারণ শান্তির সুফল উপভোগ করছে। ভারত শান্তিপূর্ণভাবে বিকশিত হচ্ছে। তবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের কারণে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অমৃতকালের সময় আমাদের শান্তি অটুট রাখা গুরুত্বপূর্ণ।' ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমাদের বর্তমানের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। বর্তমানে আমাদের চারপাশে যা ঘটছে, এমন কার্যকলাপের ওপর নজর রাখতে হবে। ভবিষ্যৎমুখী হওয়ার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এজন্য আমাদের একটি শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা উপাদান থাকা দরকার। আমাদের অব্যর্থ প্রতিরোধ থাকা উচিত।' ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর অস্ত্রাগারে ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক যুদ্ধ-সরঞ্জাম যথাযথভাবে সন্বিবেশ করতে সামরিক কমান্ডারদের প্রতি আহ্বান জানান রাজনাথ। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহাকাশ ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সক্ষমতা বিকাশের ওপর জোর দেন। এগুলোকে তিনি আধুনিক দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অবিচ্ছেদ্য বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেন। রাজনাথ ভারতের সামরিক নেতৃত্বকে তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতের সবশেষ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, 'এসব উপকরণ সরাসরি কোনো সংঘাত বা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না। তবে তাদের পরোক্ষ অংশগ্রহণ অনেকাংশে যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়।' ৪ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব অংশ নেয়। তারা সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনে যৌথ ও সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার জন্য সংগঠন কাঠামোসহ ভবিষ্যতের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পায়। একই সঙ্গে শান্তি ও যুদ্ধের সময় কর্মপ্রক্রিয়ায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি চালু করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। আলোচনায় আধুনিক যুদ্ধে সাইবার ও মহাকাশভিত্তিক সক্ষমতার কৌশলগত গুরুত্বের দিকটি বিশেষ মনোযোগ পায়। ভবিষ্যৎ সংঘাতের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সম্মেলনে ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও উন্নত করার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের ওপর প্রভাব ফেলে, এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ এই সম্মেলনে পর্যালোচনা করা হয়। সম্মেলনে ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরী, প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরামানে প্রমুখ।