তথ্য পাঠাতে তৃণমূলে চিঠি
নেতাকর্মীদের মামলা নিষ্পত্তি গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপিতে
প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিগত দিনের রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করানোর বিষয়টি বিএনপিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ লক্ষে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে সংশ্লিষ্টদের তথ্য দেওয়ার জন্য বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, মামলার তথ্য পাঠাতে কেন্দ্র থেকে দলের জেলা ও মহানগর শাখার নেতাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির সঙ্গে মামলার বিবরণের একটি ছকও পাঠানো হয়েছে, যেখানে পাঁচটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের নিজ নিজ জেলা আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামীকাল রোববারের মধ্যে নির্দিষ্ট ছকে মামলার সংগৃহীত তথ্য দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে হবে।
মামলার তথ্য বিবরণী চেয়ে বিএনপির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়ছে- 'স্বৈরাচারী দুঃশাসন প্রলম্বিত করতে ব্যাপক উৎপীড়ন-নিপীড়নের
\হঅংশ হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে ৫ আগস্ট-২০২৪ পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। (ক) উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে আপনাদের জানাচ্ছি যে, উলিস্নখিত সময়কালে রজুকৃত মিথ্যা মামলার বিবরণ (সংযুক্ত ছকে বর্ণিত তথ্যাদি) আগামী ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। (খ) জেলা ও মহানগরের সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকে বিষয়টি অবহিত ও সংশ্লিষ্ট করে মামলায় অভিযুক্ত সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে (সংযুক্ত ছক অনুযায়ী) মামলার তথ্য বিবরণী বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে। (গ) জরুরিভিত্তিতে উলিস্নখিত সময়ের মধ্যে (সংযুক্ত ছক অনুযায়ী) মামলার তথ্য বিবরণী কেন্দ্রে প্রেরণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
'বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রাজনৈতিক মামলার তালিকা' শীর্ষক মামলার বিবরণী ছকে পাঁচটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- থানার নাম ও মামলা নং/জি আর নং (মামলা দায়েরের তারিখ) এবং বিচারাধীন মামলার নং, মামলার ধারা, বিচারাধীন আদালতের নাম, আসামির সংখ্যা এবং মামলার বর্তমান অবস্থা (চার্জশিট বা চার্জ গঠন হয়েছে কিনা অথবা ট্রায়ালে আছে কিনা)। মামলার তথ্য জোগাড় ও যাচাই এবং ফরমটি পূরণ করার জন্য নিজ নিজ জেলা আইনজীবী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তার সকল মামলা প্রত্যাহার করা দরকার। বেগম খালেদা জিয়ার মামলাও প্রত্যাহার করা দরকার। বিএনপির মহাসচিবসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে- তাদের মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। ৬০ লাখ আসামি আড়াই লাখ মামলায়। এই মামলাগুলো যতক্ষণ না প্রত্যাহার করা হবে, ততক্ষণ প্রশ্ন থেকেই যাবে যে- এই সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ শুরু করেছে কিনা।
বিএনপির দাবি, গত ১৬ বছরে দেড় লাখের বেশি মামলায় ৬০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। এসব মামলা মিথ্যা, গায়েবি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলটির অভিযোগ, বিএনপিকে দমন করতে মামলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিএনপির সারাদেশের নেতাকর্মীদের এখনো আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে, দিতে হচ্ছে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা। এসব মামলায় ইতোমধ্যে অনেকের সাজাও হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আগে মামলাগুলোয় দ্রম্নত রায় হতে থাকে। বিভিন্ন মামলায় তখন দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীর সাজা হয়। অবশ্য নির্বাচনের পর আইনি প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ নেতা কারামুক্তও হন। এসব 'রাজনৈতিক ও মিথ্যা' মামলা প্রত্যাহার চান নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের নেতাকর্মীদের মামলার তথ্য বিবরণী পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে মামলার এই হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি এসব মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তা অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হবে। বিএনপি মনে করে, দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হওয়া প্রয়োজন।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে গত ২ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জেলা ও মহানগর শাখায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের নেতাকর্মীদের মামলার সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহের পর দল পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।