গণহত্যাকারীদের দ্রম্নত বিচার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ ৫ দাবি

'শহীদি মার্চে' ছাত্র-জনতার ঢল

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ঢাবি প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচু্যতির এক মাসপূর্তিতে বৃহস্পতিবার 'শহীদি মার্চ' কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার একাংশ। ছবিটি রাজধানীর সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম
শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতাচু্যতির এক মাস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার 'শহীদি মার্চ' কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। শহীদি এ মার্চে যোগ দিতে রাজপথে ছাত্র-জনতা ও শহীদ পরিবারের ঢল নামে। কর্মসূচি শেষে শহীদ মিনার থেকে ৫টি দাবি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রম্নত বিচারের দাবি উলেস্নখযোগ্য। এছাড়া রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রম্নত ঘোষণা চেয়েছে ছাত্র-জনতা। এদিন ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। সরেজমিন দেখা যায়, 'শহীদি মার্চ' থেকে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের শপথ পুনঃউচ্চারিত হচ্ছে ঢাকার রাজপথে। লাখো ছাত্র-জনতার এই শহীদি পদযাত্রায় মুহুর্মুহু ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে মুক্তির সেস্নাগান, মুক্ত বাংলাদেশের সেস্নাগান। মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণ-আন্দোলনে নিহত অনেকের নাম। শহীদদের স্মৃতি উচ্চারণ করে তাদের আত্মত্যাগের মহিমাকে সেস্নাগানের ভাষায় রূপ দিয়ে রাজপথের উত্তাল জনতা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়ে পায়ের তালে পা রেখে ঢাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করছে। পতাকা উড়িয়ে মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শহীদদের ছবিযুক্ত পস্ন্যাকার্ড নিয়ে যুক্ত হয়েছে বহু মানুষ। এ সময় ছাত্র-জনতা সেস্নাগান দেয়, 'তুমি কে আমি কে/ বাঙালি, বাঙালি', 'আবু সাঈদ মুগ্ধর রক্ত/ বৃথা যেতে দেব না', 'আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাহিরে', 'লেগেছে রে লেগেছে/ রক্তে আগুন লেগেছ', 'বিচার চাই, বিচার চাই/ খুনি হাসিনার বিচার চাই।' শিক্ষার্থীরা 'আমাদের শহীদেরা/ আমাদের শক্তি', 'আবু সাঈদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ', '২৪ আমাদের বিশ্বাস'- এ ধরনের নানা সেস্নাগান দেয়। মিছিলের সেস্নাগানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করা হয়। তার আমলে হত্যা, গুম-খুনের বিচারের আওয়াজ ওঠে। শহীদি মার্চে তেজগাঁও কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নূরজাহান বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কমার্স কলেজ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, খিলগাঁও মাকজালুল উলুম মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীও অংশ নেন। শহীদি মার্চে অংশ নেন ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মিজানুর রহমানের বাবা মুজিবুর রহমান। ছেলের গুলিবিদ্ধ ছবি নিয়ে তিনি এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, 'আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।' মার্চ থেকে পাঁচ দফা দাবি মার্চ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবিগুলো হলো- ১) গণহত্যাকারীদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২) শহীদ পরিবারকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রম্নত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। ৩) প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৪) গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করতে হবে। ৫) রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রম্নত ঘোষণা করতে হবে। মার্চ শেষে শহীদ মিনারে সমাপনী বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'আমাদের ভাইয়েরা স্বাধীনতা আনতে রক্ত দিয়েছেন। তাদের রক্তের মূল্য দিতে আমরা যেকোনো সময় রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।' তিনি বলেন, 'এই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত এবং তাদের স্পিরিট কখনও বৃথা যেতে দেব না। দেশে এখনো অনেক ফ্যাসিস্টের অস্তিত্ব আছে। আমরা তাদের এবং ফ্যাসিবাদী চিন্তা লালন করা মানুষদের বলতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আচরণ করার চেষ্টা করবেন না। কোনো চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট এই বাংলাদেশে হবে না।' আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, 'বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য এই আন্দোলনে আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন। দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না এমন স্বপ্ন নিয়ে, তারা নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা আমাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করি নাই। আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। দেশকে পুনর্গঠনের যে লড়াই সেটি আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।' সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতিরিক্তি বলপ্রয়োগের ফলে শেষপর্যন্ত সরকার পতনের একদফায় রূপ নেয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পালিয়ে ভারতে চলে যান তিনি। ৮ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে শপথ নেয় অন্তর্র্বর্তী সরকার, যেখানে জায়গা করে দেওয়া হয় দুজন ছাত্র নেতাকে, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন।