জামায়াতের বক্তব্যে নাখোশ বিএনপি
প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
জামায়াত ইসলামী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মী অনেকে এটিকে ধর্ম ব্যবসার নতুন কৌশল মনে করছেন। পাশাপাশি বিএনপি সিদ্ধান্তও নিয়েছে, যারা বাধ্য হয়ে সরকারের অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছে তাদের ছাড়া প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির পক্ষে থাকবে দলটি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় আওয়ামী লীগ সরকার সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর ওপর যে নির্যাতন করেছে, এজন্য তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এরপরই রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে এ ঘোষণা নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াতের এ অবস্থানে বিএনপি সন্তুষ্ট নয়। কারণ স্বৈরাচার পতনে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। শত শত হতাহতের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছে। বিএনপির সঙ্গে একসময় জোটে ছিল জামায়াত। তাদের এ অবস্থানে রাজনৈতিক দলের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এজন্য বিগত সময়ের মতো আবারও জামায়াতের সুবিধাভোগী অবস্থানের সঙ্গে থাকা উচিত নয় বলে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্র্মী মনে করেন।
জামায়াত নেতার ক্ষমা ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত করে বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নির্দেশে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে
তাদের ক্ষমা করলে নিহতদের আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে। অথচ তারা বলছেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তারা। গণহত্যাকারীদের কিসের ক্ষমা করতে বলছেন। কিন্তু বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, ট্রাইবু্যনাল করে প্রতিটি হত্যার বিচার ও প্রতিটি অপরাধের বিচার করতে হবে। যদি শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের বিচার করা না হয় তাহলে বাংলাদেশ কবরস্থানে পরিণত হবে।
জামায়াত নেতার এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মী। এ বিষয়ে বিএনপির অন্যতম শক্তিশালী অঙ্গদল যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, 'একটি দল মুখে বলছে আলস্নাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই। তারা আবার বলছে গণহত্যাকারীদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছে। একে ধর্ম ব্যবসা ছাড়া কি বলা যায়? শান্তির নবী হযরত মুহম্মদ (স.) ও প্রকৃত অপরাধীদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলেননি। হত্যার বদলে হত্যা, চুরির শাস্তি হাত কাটাসহ অপরাধীদের বিভিন্ন শাস্তির কথা বলেছেন। সেখানে কেউ যদি গণহত্যাকারীদের সঙ্গে আপসের চিন্তা থেকে সাধারণ ক্ষমার কথা বলে তা এদেশের বিপস্নবী জনতা মানবে না। আন্দোলন যখন চলছে তখনো দলের নিবন্ধন বাতিলকে ঘিরে জামায়াতের বক্তব্য ছিল তাদের একজনও নিহত হয়নি। ওই হিসেবে যাদের কোনো ক্ষতি হয়নি তারা সুবিধার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা দিতেই পারে। কিন্তু যে মা তার সন্তান, যারা ভাই-বোন হারিয়েছে, যে সন্তান তার পিতা-মাতা হারিয়েছে, সে কখেনো গণহত্যাকারীদের সাধারণ ক্ষমার কথা বলতে পারে না।'
গত ২৪ বছরে বিভিন্ন সময় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ছিল ভাঙা-গড়ার সম্পর্ক। কিন্তু আওয়ামী আমলের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা এক হয়ে কাজ করেছে। সরকার গঠন, আন্দোলন ও নির্বাচন সব ক্ষেত্রেই ছিল একসঙ্গে। তবে যুদ্ধাপরাধ ইসু্যতে জামায়াত নেতাদের বিচারের বিষয়ে বিএনপি প্রকাশ্যে সরব না হওয়ায় দলটির মধ্যে বিভিন্ন সময় দূরত্ব তৈরি হয়। প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে, 'বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব বাড়ছে', 'বিএনপি জোটের নেই জামায়াত' বা 'যুগপৎ আন্দোলনে নেই জামায়াত'। তবে উচ্চ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। এবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুই দল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, তারা এখন আর একই জোটে নেই।
পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'জামায়াতের সঙ্গে আমরা এই মুহূর্তে আর জোটবদ্ধ নাই।' আর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, 'বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বাস্তবে কোনো দলীয় জোট নেই।'
দল দুটির মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণে এখন আওয়ামী লীগ মাঠে নাই। নেতাকর্মী হয় পালিয়েছেন, নয় আত্মগোপনে আছেন। আবার কেউ কেউ আটক হয়েছেন। তাই রাজনীতির মাঠে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখে একটি বড় শক্তি হিসেবে সামনে আসতে চাইছে জামায়াত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি কারণে দল দুটিতে তিক্ততা বেড়েছে। বিএনপির কাছে তথ্য আছে, জামায়াত আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিপরীতে ইসলামি দলগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে শক্তি দেখাতে চায়। প্রয়োজনে পতিত স্বৈরাচারকে ক্ষমা করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে দ্বিধা নাও করতে পারে। এজন্যই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বলেছেন, 'আগামী নির্বাচন হবে একটি কঠিন পরীক্ষার নির্বাচন। নির্বাচনের ফলাফলের জন্য বিএনপি সবসময়ই জনসমর্থনের ওপর নির্ভরশীল।'