ঢাকার অদূরে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় তৃতীয় দিনের মতো বুধবারও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। বেতন বৃদ্ধি, শ্রমিকদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, চাকরিচু্যত শ্রমিকদের আবার নিয়োগ, শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য এবং পুরুষ শ্রমিকদের বিনানোটিশে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সিরামিক, পোশাক ও ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের পর এদিন আশুলিয়ায় অন্তত ৮০ পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেছেন, 'শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে যারা বিশৃঙ্খলা করছেন, তারা শ্রমিক নন, বহিরাগত।' আর 'শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে আজ থেকে অ্যাকশন' বলে জানিয়েছেন শ্রম-উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
জানা গেছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকেই গাজীপুরের শ্রমিকরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং সাড়ে ৮টায় 'বাংলাদেশ বেকার সংগঠন' নামে একটি দল নগরের চান্দনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার গেটে গিয়ে ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা তাদের প্রতিহত করতে অবস্থান নিলে
\হবিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পিছু হটেন। বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
শিল্প পুলিশ জানায়, সকালে কারখানায় কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। চাকরিচু্যত শ্রমিকরা তাদের আবার নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে কারখানার বাইরে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ একের পর এক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।
এদিন কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় ট্রান্সকম বেভারেজ কারখানার শ্রমিকরা ২০ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। চাকরি স্থায়ীকরণ, প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, নারী শ্রমিকদের নাইট ডিউটি বাতিলসহ ২০ দফা দাবি জানান তারা।
শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় আরএকে সিরামিক খারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরএকে কারখানার শ্রমিক আলম মিয়া বলেন, 'কারখানা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে না। আমাদের দুই বছরের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বকেয়া রেখেছে। দেই-দিচ্ছি করে শুধু সময় পার করছে। আমরা শ্রমিকরা শুধু আশ্বাসের বুলি শুনছি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে আমাদের কাছে একটা টাকার যে কত মূল্য, তা ওপরের তলার লোকজন বুঝবে না।'
একই কারখানার শ্রমিক তারেক মিয়া বলেন, 'দুই বছরের ইনক্রিমেন্ট বকেয়া থাকলেও তা পরিশোধ করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। এসব দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে কথা বলতে গেলে আমাদের অনেক বকাঝকা খেতে হয়। অনেকে আবার চাকরিচু্যত হয়।'
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ইউনি হেলথ্ ফার্মাসিউটিক্যালস (ওষুধ উৎপানদকারী) কারখানায় শ্রমিকরা বেতন বৈষম্যসহ দূরসহ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান দিয়ে একদল শ্রমিক ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে তারা কারখানার গেটে ধরে টানাটানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেনাসদস্যরা আন্দোলনরত শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অন্যদিকে, মহানগরের বাসন এলাকায় শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য রোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
শ্রমিক নেতা আরমান বলেন, 'মঙ্গলবার আমরা বাংলাদেশ বেকার সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বেকারত্বের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ তাদের কোনো কর্মসূচির কথা ছিল না। তারপরও সকালে ৪০০-৫০০ শ্রমিক গাজীপুর বাইপাস এলাকায় আন্দোলনে নামেন।'
তিনি আরও বলেন, 'কয়েক দিন হলো বিভিন্ন সংগঠনের নামে আন্দোলন হচ্ছে। এজন্য আমরা অন্দোলনরত শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সুযোগসন্ধানীদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।'
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ জানান, সকাল থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষ আলোচনা করার আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যায়।
আশুলিয়ায় বিক্ষোভ
শিল্প পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুলস্নাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বন্ধ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকরা চালু থাকা বিভিন্ন কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিপ্রত্যাশীরাও যোগ দেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রপের কারখানার পাশে প্রত্যক্ষদর্শী এক চায়ের দোকানদার বলেন, 'সকাল থেকে কারখানায় কাজ চলছিল। পরে চাকরির জন্য লোকজন কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ করলে কারখানা ছুটি দিয়ে দেয়।'
শারমিন গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, 'সকালে কারখানায় কাজ শুরুর পর কারখানার বাইরে কিছু লোকজন স্টাফদের বহনকারী দুটি মিনিবাস ভাঙচুর করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত কারখানায় ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাই কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।'
সকাল ১০টার দিকে পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে টিফিন ভাতা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করা, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভরতরা একপর্যায়ে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্য ও ঢাকা জেলা পুলিশ উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
এদিকে কিছু শ্রমিকরা হামলা ঠেকাতে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামে পোশাক কারখানার সামনে হামলা ঠেকাতে অবস্থান নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, 'আমরা কাজ করতে চাই। কারখানা আমাদের সম্পদ। তাই এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কারখানা বন্ধ হলে খাব কী?'
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, 'নির্ধারিত সময় শ্রমিকেরা কারখানায় আসেন। পরে বিভিন্ন কারখানার সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হা-মীম গ্রম্নপের কারখানার শ্রমিকদের দেখে তারা কেন কারখানায় কাজ করছেন, এমনটি বলার পর কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে আশুলিয়ার অন্তত ৬০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ।'
টঙ্গীতে বিক্ষোভ ঠেকাতে সড়কে বিএনপি নেতাকর্মী
গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় পানির ট্যাংকি এলাকায় জড়ো হয়ে চাকরিপ্রত্যাশী নারী ও পুরুষ বিক্ষোভ করেন। পাশাপাশি তারা এই কর্মসূচিতে আশপাশের কারখানার শ্রমিকদের যোগ দিতে আহ্বান জানান। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মী বিক্ষোভ ঠেকাতে সেখানে অবস্থান নিলে পিছু হটেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বেলা একটার দিকে দেখা যায়, বিসিকের পানির ট্যাংকি এলাকায় অবস্থান করছেন বিএনপি নেতাকর্মী। সেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ছবি এক ব্যানার টাঙানো। এতে লেখা রয়েছে, 'শিল্প কলকারখানা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।'
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গাজীপুরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের বলেন, 'চাকরি দাবির আড়ালে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীপন্থি লোকজন দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বিসিকের গুরুত্বপূর্ণ কারখানাগুলো ভাঙচুর করে লুটপাটের চেষ্টা করা হচ্ছে। নানা অজুহাতে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। তাই আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। যতদিন বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকবে, আমরা ততদিন সড়কে থাকব।'
উপদেষ্টাদের 'বল প্রয়োগের' বার্তা
এদিকে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভে একের পর এক শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, নিরাপত্তা চেয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন পাঁচ উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে বলা হয়েছে, এই অসন্তোষের কোনো 'গতি-প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না'। ভাঙচুরের পেছনে 'ভাড়াটে' ও 'টোকাইদের'ও দায়ী করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে 'বল প্রয়োগের বার্তাও' দেওয়া হয়েছে।
পোশাক শিল্পে ঝুট ব্যবসায় এখনো আওয়ামী লীগের 'প্রভাবশালীরা' রয়ে গেছেন এবং বিএনপির লোকেরাও এখানে দখল করতে আসছেন- এমন কথাও বলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বিএনপিকে তাদের দলের লোকদের 'নিবৃত্ত করার' অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের লোকদের কঠোর হাতে দমন করার বার্তা দিয়েছেন।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আসিফ মাহমুদ ছাড়াও অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পলস্নী-উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ; আইন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার; শিল্প মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।
গত কয়েকদিন গাজীপুর ও সাভারে একের পর এক শ্রমিক বিক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন ব্যবসায়ীদের ছয়জন নেতা। তারা শিল্প কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। তারা বলেন, কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, 'শ্রমিক নেতারা সব সময় শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এখন যে আন্দোলন হচ্ছে সেটার গতি-প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। এখানে কোনো নির্দিষ্ট দাবি উঠে আসছে না, কোনো নির্দিষ্ট দফা পাওয়া যাচ্ছে না। আন্দোলনে বহিরাগতদের দেখা যাচ্ছে।
'কয়েকটি ছোট ছোট জায়গায় অসন্তোষকে কেন্দ্র করে বহিরাগত এবং নানা সংগঠনের নামে যারা শ্রম এরিয়ার মধ্যে কখনো আন্দোলন করেনি, তারা এসে গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। শ্রমিক নেতারাই আমাকে বললেন, তারা সেখানে হেঁটে এসেছেন এবং তারা দেখেছেন যে, হেলমেট ও হাফপ্যান্ট পরা যারা, টোকাই, যাদের টাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য ভাড়া করা হয়, তাদের সেখানে দেখা গেছে।'
এই বৈঠক চলার মধ্যেও সাভারের আশুলিয়ায় অন্তত ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্রমিকদের মধ্যে বহিরাগতদের দেখা যাওয়ার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, 'যারা সাধারণত শ্রমিক আন্দোলনগুলো সংগঠিত করেন, তারাও সেখানে সেভাবে নেই। কিছু কিছু জায়গায় মালিকপক্ষ বেতন দিতে দেরি করছে, এজন্য আন্দোলন হচ্ছে। কয়েকটি স্পেসিফিক ফ্যাক্টরি আছে সেখানে মালিকপক্ষ পালিয়ে গেছে, সেখানে কিছুটা অসন্তোষ হয়েছে। সেগুলো আমরা অ্যাড্রেস করছি, সেগুলোর জন্য সরকার সফট লোন ঘোষণা দিয়েছে। সেটার পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হবে।'
শ্রমিকদের দাবি নিয়ে দীর্ঘসময় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলেও মত দেন উপদেষ্টা আসিফ। বলেন, 'একদিন বসে শ্রম আইন ঠিক করা যাবে না।'
শ্রমিক বাঁচাতে, অর্থনীতি বাঁচাতে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে মন্তব্য করে শ্রম-উপদেষ্টা বলেন, 'বহিরাগতদের এ ভাঙচুরের কারণে দেশের ৫০ লাখ শ্রমিকের কষ্ট হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আজ (বুধবার) থেকে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী অভিযানে যাবে।'
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পুলিশ যে মনোবল হারিয়েছে সেটা ফেরাতে হবে। তাদের কাজের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।'
বল প্রয়োগের বার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দেন।
শ্রমিকদের সঙ্গে 'বহিরাগতরা' এমনভাবে মিশে আছে, যে তাদের আলাদা করা 'কঠিন হয়ে যাচ্ছে' মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, 'কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছু সংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।'
কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা গ্রেপ্তার কিংবা আটক হতে পারেন।
'৫০ জন রাস্তায় বসে পড়লে পাঁচ লাখ মানুষের অসুবিধা হবে। কাজেই তাদের সরাতে যদি বলপ্রয়োগ করতে হয়, লাঠিপেটা করতে হয়, জলকামান ব্যবহার করতে হলে আমরা সেটা করব।'
হাসান আরিফ বলেন, 'প্রকৃত শ্রমিক যারা, তারা কেউ নিজের বাড়ি পোড়াবে না, কারণ এখানে তার জীবিকা। এটা বহিরাগতরা এসে করেছে।'
বহিরাগতদের বাধা দিতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা তাদের বাধা দিলে আমরাও আপনাদের সঙ্গে থাকব।'
পুরো ঘটনা নিয়ে চক্রান্তের অভিযোগ এনে উপদেষ্টা বলেন, 'আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, যেগুলো ভাইব্রেন্ট কারখানা কুমিলস্নায় প্রাণ কোম্পানির কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রাণ কোম্পানিতে কোনোদিন শ্রমিক বিশৃঙ্খলা ছিল না। এই কোম্পানি যেহেতু দিনকে দিন বিশ্ব ছেয়ে ফেলছে, এটা যদি নষ্ট হয়, তাহলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অর্জন বন্ধ হয়ে যাবে।'