দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল এ অনুরোধ জানায়। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে শতাধিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হযে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি)
সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এবং বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিআইসিসিআইর সাবেক সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।
ব্যবসায়ী নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ড ও ভাঙচুরের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজর আনেন।
জানতে চাইলে তপন চৌধুরী বলেন, 'সাম্প্রতিক সময় দেশের শিল্পকারখানাগুলোয় এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। ওষুধশিল্প থেকে শুরু করে এই অস্থিরতা বস্ত্র ও পোশাক কারখানায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।'
তপন চৌধুরী আরও বলেন, সবাই একটা পরিবর্তন চান। কিন্তু বর্তমানে যা চলছে, সেটি কারও কাম্য নয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যেসব কারখানার ভেতর শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, সেই দাবি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে কারখানার ফটকে বহিরাগত শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। বহিরাগতরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকরা লে-অফ ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। তখন পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।
মীর নাসির হোসেন বলেন, 'সোমবার যখন একশ'র বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, তখন আমরা জরুরিভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানাই। বৈঠকে আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে শিল্পকারখানার নিরাপত্তা চেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যৌথবাহিনীর অভিযানকে আরও শক্তিশালী করার কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) ব্যবসায়ীদের সহায়তাও চেয়েছেন।'
কয়েক দিন ধরে মজুরি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে চাকরিচু্যত শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরাও চাকরির দাবির পাশাপাশি নিয়োগে নারী-পুরুষের সমতা চেয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। এর ফলে সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই অস্থিরতা ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অস্থিরতায় ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা সোমবার উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পের নিরাপত্তায় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এরপর যৌথ অভিযানের নির্দেশনা আসে।