দাবি আদায়ে অনড় চিকিৎসকরা, ঢামেকে ভোগান্তিতে রোগীরা

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের চিকিৎসাসেবা পুরোদমে চালু না হত্তয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীরা -যাযাদি
সেনা, বিজিবি ও পুলিশের নিরাপত্তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা চলছে। তবে দাবি আদায়ে অনড় চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার রোগীদের কথা বিবেচনা করে কর্মবিরতির মধ্যেও তিন ঘণ্টা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে সেবা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুপুর দেড়টার পরে জরুরি বিভাগে আসা বেশিরভাগ জটিল রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। এদিন সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে ঘুরে রোগী, রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। ঢামেকের জরুরি বিভাগে কাতরাচ্ছে দুর্ঘটনায় আহত বাঞ্ছারামপুরের ৭০ বছর বয়সের খুদেজা বেগম। দুর্ঘটনার পর বাঞ্ছারামপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ঢামেকে রেফার্ড করা হয়। খুদেজা বেগমের মেয়ে শিউলী আক্তার বলেন, সকাল ১০টার দিকে সিএনজি চালিত অটো টেম্পো ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মা দুর্ঘটনায় আহত হন, মাথায় আঘাত পেয়েছেন। পায়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সদর হাসপাতালে রাখেনি। ১২টার সময় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেই। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এখানে পৌঁছেছি। আধা ঘণ্টা ধরে এখানে ঘোরাঘুরি করছি কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। কোনো চিকিৎসক দেখছি না। এখন মায়ের খুব কষ্ট হচ্ছে। চাঁদপুরের ৭৫ বছর বয়সের নজরুল ইসলাম বিভিন্ন রোগ নিয়ে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থা জটিল হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসতে বলা হয়। এখানে এসে এক ঘণ্টায়ও কোনো চিকিৎসা না পেয়ে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তার পরিবার। এখানে রাখবেন কিনা আগের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। এদিকে নজরুল ইসলামের কোনো নড়াচড়া নেই। অক্সিজেন লাগানো মুখে। নজরুল ইসলামের নাতি অনিক বলেন, পরিবারের সবাই এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। নানার কি আর চিকিৎসা হবে না। ঢাকা মেডিকেলে কি আমরা টিকিৎসা পাব না। নাকি গ্রিন রোডের ইউনিক হাসপাতালে নিয়ে যাব? কোনো কিছু আমরা বুঝতে পারছি না। শুধু বাঞ্ছারামপুরের খুদেজা বেগম কিংবা চাঁদপুরের নজরুল ইসলাম নয়; তাদের মতো শতাধিক রোগী মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। তাদের চিবিৎসার ধরন অনুসারে অবজারবেশন রুমে কোনো চিকিৎসা না দিয়েই ওয়ার্ডে পাঠানো হলেও জটিল রোগীর ক্ষেত্রে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে টিকিট কাউন্টার থেকে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মিটিংয়ে আছি। কথা বলা যাবে না। এর আগে, হাসপাতালে হামলা ও চিকিৎসকদের মারধরের প্রতিবাদে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আবদুল আহদ সারাদেশে চিকিৎসক ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে কর্মবিরতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হলেও হাসপাতালে পরিচালক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। উনার সঙ্গে বার বার বৈঠক হচ্ছে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুর দেড়টায় মিটিং শুরু হলেও এখন শেষ হয়নি। মিটিং শেষ হলে আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব। ডা. মো. আবদুল আহদ বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। সকালে বৃষ্টি থাকায় আন্দোলনের সব কর্মসূচি পালন করা হয়নি। পরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন। তবে সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান থাকবে।' ডা. আবদুল আহদ বলেন, ঢাকা মেডিকেলে হামলার ঘটনায় একজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য কর্মসূচি শিথিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের যে চারটি দাবি ছিল, তার মধ্যে একটি পূরণ হয়েছে। আমরা গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিকেলসহ সারাদেশের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া শুরু করেছি। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সীমিত পরিসরে আউটডোর সেবা চালু রাখব। জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অন্যান্য চিকিৎসাসেবাও যথারীতি দেওয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে দুর্ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর নিউরো সার্জারি বিভাগে ভাঙচুর এবং চিকিৎসকদের মারধর করে একদল ব্যক্তি। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও একই রকম ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে কর্মবিরতি শুরু করে চিকিৎসকরা। চার দফা দাবি তুলে ধরে সারাদেশে চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় দুপুরে। তাদের দাবিগুলো ছিল- অপরাধীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ঢাকা মেডিকেলসহ সারাদেশের হাসপাতালে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত করতে হবে, তারা ২৪ ঘণ্টা অস্ত্রসহ থাকবে; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এই দিন বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপরই চিকিৎসকরা কর্মসূচি শিথিল করেন।