বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সাড়ে ১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর ওপর যে নির্যাতন করেছে, এর জন্য তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি রেস্টুরেন্টে সিনিয়র সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামী এ সভার আয়োজন করে।
জামায়াতের আমির বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণেই আমরা আপনাদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলতে পারিনি। গণমানুষের কল্যাণে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারিনি। অথচ শুধু মানুষ নয় বরং আলস্নাহর সব সৃষ্টিকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব। মানুষ সৃষ্টির সেরা। মানুষের কল্যাণের জন্যই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই মন্দের বিপরীতে মন্দের চর্চার কোনো সুযোগ নেই।
কারও প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না আশ্বস্ত করে শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। রাজনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যারা জুলুম-নির্যাতন করেছে আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমরা সংশোধন ও ক্ষমার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তবে কোনো ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার যদি আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা তাদেরও সহযোগিতা করব। দল হিসেবে আমরা কোনো প্রতিশোধ নেব না। আমরা আদর্শ ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী। আর আদর্শ ডেমোক্রেসির মূলমন্ত্রই হচ্ছে যার যার মতো স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার এবং পরমতের প্রতি সহনশীলতা।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের মুখে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কলমকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনভাবে লিখতে পারেনি। কিন্তু এখন সবাই জাগ্রত হয়েছে। আগামী দিনে আপনাদের সহযোগিতায় আমরা কাজ করব ইনশাআলস্নাহ।
ডা. শফিকুর বলেন,
আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থেই আমাদের দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতি ঐক্যবদ্ধ হলে পুরো বিশ্বই আমাদের সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে। আর দেশের সব নাগরিকের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হলে গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজনীতিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার যুগপৎ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সব পর্যায়ে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। তাদের স্স্নোগানই ছিল 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। আমাদের দেশে গণমাধ্যমকর্মীরাও জাস্টিস থেকে বঞ্চিত। তারা স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েজবোর্ড দেয় না। ফলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। এখন সময় এসেছে এসব বৈষম্যের অবসান ঘটানোর। জামায়াত সব সময় সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকবে।
দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও নাজিম উদ্দীন মোলস্না, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।