সম্প্রতি বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের গাড়িতে চড়ে কক্সবাজারে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সংবর্র্ধনা নিতে যান সালাহউদ্দিন। এই নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়

শৃঙ্খলা রক্ষায় কাউকে ছাড় দেবে না বিএনপি

সালাহউদ্দিন ও খোকনকে শোকজ দুঃখ প্রকাশ সালাহউদ্দিনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি বিলুপ্ত, তিন নেতার পদ স্থগিত

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সালাহউদ্দিন আহমেদ
দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রাখতে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে এবার স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নানা অভিযোগে গত ৫ আগস্টের পর দেড় শতাধিক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া কোনো অবস্থাতে বিএনপির কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সে জন্যই সব নেতাকর্মীকে কঠোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৯ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সালাহউদ্দিন আহমেদ। যাকে আগামী দিনের মহাসচিব হিসেবে ভাবা হয়। সম্প্রতি বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের গাড়িতে চড়ে কক্সবাজারে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সংবর্র্ধনা নিতে যান সালাহউদ্দিন। এই নিয়ে গণমাধ্যমে খবর \হপ্রকাশিত হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু তাকেও ছাড় দেননি তারেক রহমান। রোববার রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপিতে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর সম্প্রতি এস আলমের গাড়িতে চড়ে কক্সবাজারে নিজ নির্বাচনী এলাকায় সংবর্ধনা নেওয়ার ঘটনায় সোমবার সালাহউদ্দিনকে শোকজ করা হয়। তারেক রহমানের নির্দেশে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ চিঠি তার কাছে পৌঁছানো হয়েছে। চিঠিতে তিন দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিন্ন এক ঘটনায় শোকজ করা হয়েছে ডাকসুর সাবেক জিএস এবং বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকেও। দলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, অনেকেরই ধারণা তারেক রহমানের সঙ্গে এস আলমের সম্পর্ক আছে। সালাহউদ্দিনকে শোকজ করার মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটল। ফলে তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কিছু করার সুযোগ এখন আর রইল না। এদিকে সালাউদ্দিন ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা ও বিতর্কিত ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করায় গতকাল শোকজ করা হয়েছে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে। তিনি চিঠি পাওয়ার পর জবাবও দিয়েছেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের বিলাসবহুল ১৪টি গাড়ি নিজের কব্জায় নিতে গিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যসহ সবপর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণ-অভু্যত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, দলের নীতিপরিপন্থি বক্তব্যসহ নানা অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও অনেকের পদাবনতি, পদস্থগিত নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি পাওয়া নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছেন ঢাকা মহানগর, বগুড়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরিশাল, পঞ্চগড়, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট ও লক্ষ্ণীপুর জেলার। এ ছাড়াও বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সালাউদ্দিনের বক্তব্য এস আলমের গাড়িতে চড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ সংবর্র্ধনা শিরোনামে প্রকাশিত খবর জবাব দিতে সোমবার গুলশানে তার নিজ বাসায় ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমেদ পুরো ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে তিনি এই দুঃখ প্রকাশ করেন। এস আলম কোম্পানির গাড়ি চড়ার ঘটনাকে 'অসাবধানতা ও অনিচ্ছাকৃত' দাবি করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। তিনি বলেন, 'গাড়ি সংক্রান্ত যে সংবাদটা প্রকাশিত হয়েছে তাতে জনমনে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তার পরেও একটি পুরাতন গাড়ি আমার ছোট ভাই নিয়ে গেছে, সে খুব আনন্দিত যে আমি তার গাড়িতে আমি চড়তে উঠেছি। এটা আমার পক্ষ থেকে যদি জানতাম যদি যে একটা কোম্পানির গাড়ি তাহলে হয়তো আমি সাবধানতা অবলম্বন করতাম। তার পরেও আমার এই অসাবধানতা এবং এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি আমি দেশবাসীর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি এবং অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকি সেজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।' ঘটনার পূর্বাপর তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, 'রোববার কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, আমি দীর্ঘ ১০ বছর পর আমার নিজ জেলা কক্সবাজারে অবতরণ করলে সেখানে আমার দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে যে গাড়ি একটি আমি ব্যবহার করেছি তা এস আলম কোম্পানি বলে সংবাদে লেখা হয়েছে। আমি কোন গাড়িতে উঠেছি সেটা আমি নিজেও জানতাম না। এটা সেইদিন কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার পরে কিছু গাড়ি দেখেছি ভেতরে তা আমাদের নেতা-কর্মীরা বলল যে, এটাতে উঠেন। এই গাড়িতে আমি উঠেছি। তা এখন সেই গাড়িটি কার সেই মুহূর্তে আমি চিন্তাভাবনার মধ্যে ছিলাম না। আমি তখন অনেকটা আবেগ আপস্নুত ছিলাম, আমার দেশবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছিলাম এবং মনের মধ্যে মা-বাবার কবর জিয়ারতের বাসনায় মগ্ন ছিলাম। তখন আমার মনের অবস্থা ছিল না যে, আমি কোন গাড়িতে কার গাড়িতে উঠছি।' তিনি বলেন, 'সংবাদটি (গণমাধ্যম) প্রকাশ হওয়ার পরে আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম, আমি জানতে পারলাম এই গাড়িটি আমার এলাকার এক ছোট ভাইয়ের যে, উক্ত কোম্পানিতে বিভিন্ন জমিজমা দেখাশোনার কাজ করে এবং কোম্পানি থেকে তাকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের জন্য এই গাড়িটি দেওয়া হয়। সেও অন্য সবার মতো আমাকে বরণ করার জন্য এয়ারপোর্টে গেছে। তার গাড়িতে করেই গেছে। সেও জানত না যে আমি তার গাড়িতে উঠব। আমিও জানতাম না যে, আমি কার গাড়িতে উঠব। এটা জেলা বিএনপির নেতারা ঠিক করেছে।'