শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভেসেই গেল তৃতীয় সেশনের খেলা। দুপুর সাড়ে তিনটাতেই রাওয়ালপিন্ডিতে নেমে এলো প্রায় সন্ধ্যা। ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। পাকিস্তানের পারফরম্যান্সের মতো প্রকৃতিও ডুবে গেল আঁধারে। তাতে চতুর্থ দিনের মতো খেলা বন্ধ হলো বটে, তবে বাংলাদেশের সম্ভাবনার আকাশ ঠিকই আলো ঝলমলে।
চা-বিরতির পর মাত্র এক ওভার পরই আলোক স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর নামে বৃষ্টি। পরে দিনের বাকি খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। স্মরণীয় এক সিরিজ জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। জয়ের জন্য শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান। অক্ষত আছে সবক'টি উইকেট। প্রকৃতি বিরূপ না হলে ইতিহাস গড়ার খুব কাছে আছেই নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
শেষ ইনিংসে ১৮৫ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শুরুটা করে দারুণ। নতুন বলে পাকিস্তানি পেসারদের হুমকিটুকু যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন জাকির হাসান। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান উঠতে থাকে দ্রম্নততায়। কিন্তু বাদ সাধে প্রকৃতি। ৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান করার পর আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হয় খেলা। পরে বৃষ্টি নেমে শেষ করে দেয় দিনের খেলা।
বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে কিছুটা শেষ দিনেও। তবে শঙ্কাটা পাকিস্তানেরই বেশি। সিরিজ বাঁচাতে হলে যে জিততেই হবে তাদের! শেষ দিনে খেলা না হলে বা ড্র হলেও সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। তবে অসাধারণ এক জয়ের এত কাছাকাছি এসে জিততে না পারাটা হবে হতাশারই। পাকিস্তানের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ তো সবসময় আসে না!
দেশের বাইরে এক সিরিজে দুটি টেস্ট জয়, দেশের বাইরে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে আছে একটিই। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জয় এসেছিল ২-০ ব্যবধানে। তবে সেবার চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলায় শীর্ষ ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের কেউ খেলেননি, দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলেছিল তারা। বিদেশে পূর্ণ শক্তির দলের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয় হবে এটিই।
চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। আগের দিন ব্যাট হাতে কার্যকর এক জুটি গড়ার পর শেষ বিকালে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন হাসান। সেই ধারা ধরে রেখেই এ দিন আরও তিনটি উইকেট আদায় করে নেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে পাকিস্তানে পান পাঁচ উইকেটের স্বাদ।
উইকেট নাহিদের একটি কম। তবে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন সম্ভবত তিনিই বেশি। গতি দিয়ে তিনি আলাদা করে নজর কেড়েছেন আগেই। চতুর্থ দিনে তিনি মেলে ধরেছেন নিজের সেরাটা। দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বাউন্স ও আগ্রাসন মিলিয়ে নাকাল করেছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। পাকিস্তানের বাকি উইকেটটি নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সবক'টিই পেসাররা নিতে পারলেন এই প্রথম।
সাইম আইয়ুব ও শান মাসুদ দিনের শুরুটা ভালোই করেছিলেন। সাইমকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রম্ন এনে দেন তাসকিন। পরে তার জায়গায় আক্রমণে এসে টানা তিন ওভারে তিনটি উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা। এর মধ্যে ছিল বাবর আজমের উইকেটও, যাকে তিনি আউট করলেন সিরিজে দ্বিতীয়বার। মোহাম্মদ রিজওয়ান প্রথম বলে জীবন পেয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন সালমান আলি আঘাকে নিয়ে। হাসান নতুন স্পেলে ফিরে টানা দুই বলে ফেরান রিজওয়ান ও মোহাম্মদ আলিকে। সালমান এরপর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে রান বাড়ান কিছুটা। কিন্তু বেশি দূর এগোতে পারেননি। আবরার আহমেদকে চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন নাহিদ। শেষ উইকেট নিয়ে হাসান পূর্ণ করেন পঞ্চম উইকেট।
আগের ইনিংসে নতুন বলে মির হাজমা ও খুররাম শাহজাদ ধস নামিয়েছিলেন বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডারে। এবার জাকির ও সাদমান তা হতে দেননি। বিশেষ করে জাকির যেন শট খেলার পণ করেই নেমেছিলেন। দ্বিতীয় ওভারেই শাহজাদকে দারুণ ফ্লিক শটে ছক্কায় ওড়ান তিনি। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া এই পেসারকেই পরে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন তিনি পুল শটে। দুটি করে চার ও ছক্কায় তার রান হয়ে যায় ২৩ বলে ৩১। জাকির ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামে আলোর অভাবে। তবে নতুন দিনে সম্ভাবনার ঝিলিক তো অপেক্ষায় আছেই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ২৭৪
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৬২
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ৪৬.৪ ওভারে ১৭২ (আগের দিন ৯/২) (সাইম ২০, মাসুদ ২৮, বাবর ১১, শাকিল ২, রিজওয়ান ৪৩, সালমান ৪৭*, আলি ১, আবরার ২, হামজা ৪; তাসকিন ১/৪০, হাসান ৫/৪৩, মিরাজ ০/২৪, নাহিদ ৪/৪৪, সাকিব ০/১৪)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৮৫) ৭ ওভারে ৪২/০ (জাকির ৩১*, সাদমান ৯*; হামজা ৩-১-১২-০, শাহজাদ ০/২৩, আবরার ০/৫)