ঢাকা মেডিকেলে বহির্বিভাগ বন্ধ, ভোগান্তিতে রোগীরা

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি সেবা কার্যক্রম শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগ চিকিৎসাসেবা। এতে বিপাকে পড়েন রোগীরা। ছবিটি সোমবার তোলা -ফোকাস বাংলা
স্ত্রীকে গাইনির ডাক্তার দেখাতে সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখেন সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই, উপস্থিতরা হোসেনকে পাঠিয়ে দেন জরুরি বিভাগে। কিন্তু সেখানে গিয়েও চিকিৎসা মেলেনি হোসেনের স্ত্রীর। সোমবার আবুল হোসেনের মতো আরও অনেকে ভিড় জমালেও প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে ডাকা কর্মবিরতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ আছে। সকাল থেকে বহির্বিভাগের সামনে ভিড় দেখা গেছে রোগীদের। অনেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন, অনেকে আবার সেখানেই ঘোরাঘুরি করছেন। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা রেখেছেন চিকিৎসকরা। সেখানে আসা রোগীদের দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডান চোখে আঘাত পেয়ে নারায়ণগঞ্জের তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসা তামিম হাসান বলেন, 'সেখানে ডাক্তার দেখাইছিলাম তারা এখানে আসতে বলছেন। এখানে আইসা দেখি ডাক্তার নাই।' আবুল হোসেন বলেন, 'বহির্বিভাগের আইসা দেখি ডাক্তার নাই। এইখান থেকে বলে ইমার্জেন্সিতে যাওয়ার জন্য। আবার ইমার্জেন্সি থেকে এখানে আসতে বলে। খালি হয়রানি।' শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে হুসাইন নামে দেড় বছরের এক শিশুকে নিয়ে এসেছেন তার স্বজনরা, এসে দেখেন বহির্বিভাগ বন্ধ। তিনি বলেন, 'বাচ্চার মাথায় একটু সমস্যা হইছিল। শরীয়তপুরের ডাক্তার বলল ঢাকা মেডিকেলে শিশু সার্জারিতে দেখাইতে। আইসা দেখি ডাক্তার নাই।' ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৭০ চিকিৎসক রোগী দেখেন এখানে। এদিকে চলমান কর্মসূচি নিয়ে হাসপাতালে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তখন থেকেই সেখানে চিকিৎসাসেবার অচলাবস্থা শুরু। এরপর রোববার ঢাকা মেডিকেলের অন্য চিকিৎসকও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতিতে সংহতি জানান। এ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসার সব বিভাগে সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় চরম চিকিৎসা সংকট। চিকিৎসকদের স্পষ্ট দাবি হলো হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং সারাদেশে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দাবি নিয়ে চিকিৎসকরা সরব হলেও সেসব মেনে নেওয়ার আশ্বাস না মেলায় দুপুরে সারাদেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে 'কমপিস্নট শাটডাউন' ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সঙ্গে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। সন্ধ্যায় সংকট নিরসনে হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য-উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। এসব শর্ত না মানা হলে সোমবার সন্ধ্যা থেকে শাটডাউন কর্মসূচিতে ফিরবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরা। পরে রাত পৌনে ৮টায় বিজিবির সদস্যদের উপস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সেবা শুরু হয়। বহির্বিভাগ খোলা সোহ্‌রাওয়ার্দী, টিবি হাসপাতালে এদিকে ঢাকা মেডিকেলে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও ঢাকার আরও কয়েকটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা দেখা গেছে। সকাল ৯টার দিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে বহির্বিভাগ খোলা। রোগীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে, ডাক্তাররা রোগী দেখছেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, 'আমাদের ওপিডি খোলা আছে। রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।' শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালে বেলা সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রোগী দেখা বন্ধ রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। পরে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর বেলা দশটা থেকে রোগী দেখা শুরু করেন বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালেন এক চিকিৎসক বলেন, 'আমরা ডিরেক্টর স্যারের সঙ্গে মিটিং করেছি। সেখানে রোগী দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।' জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোর, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি হাসপাতালে বহির্বিভাগ চালু রেখেছেন চিকিৎসকরা। তবে রাজধানীর আরও কয়েকটি হাসপাতালেও বহির্বিভাগ খোলা দেখা গেছে এবং সেখানে চিকিৎসাসেবাও চালু আছে। মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু আছে বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'আমাদের ওপিডি চালু আছে। আমরা সকাল থেকেই রোগী দেখছি।' বহির্বিভাগ ৩ ঘণ্টা খোলা রাখার ঘোষণা চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশের সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ তিন ঘণ্টা খোলা রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেলের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আবদুল আহাদ সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ খোলা থাকবে। বাকি সময় চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। হাসপাতালে অন্য চিকিৎসাসেবা যথারীতি চলবে। কর্মসূচি শিথিলের আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন চিকিৎসকরা। এরপর বিকাল ৪টায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আবদুল আহাদ বলেন, ঢাকা মেডিকেলে হামলার ঘটনায় একজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য কর্মসূচি শিথিল করেছেন তারা। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা গতকাল (রোববার) সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিকেলসহ সারাদেশের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া শুরু করেছি। গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার ১ গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সোমবার ভোরে গাইবান্ধা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে সঞ্জয় পাল জয় (২৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে গাইবান্ধা শহরের মাস্টারপাড়ার বারিধারা এলাকার রঞ্জিত পালের ছেলে। গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সঞ্জয় পালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে ঢাকায় সোপর্দ করা হবে।