সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান ও মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসশামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, সাবেক ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোলস্না ইব্রাহিম হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেন ও শাফি মোদ্দাছির খান।
এদিন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও অন্যদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে বদলি, পদোন্নতি, জনবল নিয়োগ ও কেনাকাটায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।
আবেদনের পক্ষে দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
রেজাউল করিম মজুমদারের
দুর্নীতি অনুসন্ধান
সাবেক দুই মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও মুন্নুজান সুফিয়ানসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার দুদক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে বরিশালের নাজিরপুর, পিরোজপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন নামে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং প্রশিক্ষণের নামে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দেশ-বিদেশে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
শ ম রেজাউল করিমের নিজ নামে এবং তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম আরও জানান, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, তার এপিএস মো. সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়, বোনের ছেলে ইয়াছির আরাফাত পৃথিবীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
তার নিজ নামে ঢাকার উত্তরায় ১০নং সেক্টরে রাজউকের ৫ কাঠা জমি, খুলনার দৌলতপুরের সাহেববাড়ী রোডে ৩ তলা বাড়ি, ২টি গাড়ি, কেডিএ, মৌথুরী হাউজিংয়ে ১৬ দশমিক ৭ কাঠা জমি রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ, পোস্টিং ও পদোন্নতির মাধ্যমে তার এপিএস মো. সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়, বোনের ছেলে ইয়াছির আরাফাত পৃথিবী কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
টুকু, জয়, সোহাইল, আহমদ
ও সৈকত আরও ৩ দিনের রিমান্ডে
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পৃথক হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের।
রোববার সকাল ৭টায় শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম। এদিন সকাল ৬টায় কড়া নিরাপত্তায় তাদের আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
আদালতের অফিস সহায়ক তৌফিকুল ইসলাম জানান, রিমান্ড আবেদন পাঠ করে শোনান আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। আর আসামিদের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন চান। প্রায় ১৫ মিনিটের শুনানি শেষে বিচারক আদেশ দেন।
আইডিয়াল কলেজের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুলস্নাহ হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে ছিলেন শামসুল হক টুকু, আরিফ খান জয় ও মোহাম্মদ সোহাইল।
একই মামলায় তাদের আরও ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে রোববার ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই আক্কাস মিয়া। রিমান্ড শুনানি নিয়ে আসামিদের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম।
এদিকে খালিদ হাসান সাইফুলস্নাহ হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে একই দিন আহমদ হোসেন ও তানভীর হাসান সৈকতকে আদালতে নেওয়া হলে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
তবে এ দুজনকে আদাবর থানার রিংরোডে পোশাক শ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক।
দুই মামলায় ৬ দিনের
রিমান্ডে পলক
বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনার দুই মামলায় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ।
এর মধ্যে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী সরকারি কলেজর ছাত্র ওমর ফারুক হত্যায় সূত্রাপুর থানার মামলায় তিনদিন এবং বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের সামনে সুমন সিকদার হত্যা মামলায় তিনদিন হেফাজতে নিয়ে পলককে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমদি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মইনুল ইসলাম রোববার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একই দিন লালবাগ থানায় বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেনকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
হাকিম মো. মইনুল ইসলামের অফিস সহায়ক মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আদালত শুরুর নির্ধারিত সময়ের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৭টায় এই শুনানি শুরু হয়। ১৫ মিনিট শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।