শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সংবিধান সংস্কার নয় পুনর্লিখন চান আলী রীয়াজ

ঢাবি প্রতিনিধি
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সংবিধান সংস্কার নয় পুনর্লিখন চান আলী রীয়াজ

সংবিধান সংস্কার নয় পুনর্লিখন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।

শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের আরসি মজুমদার হলে 'স্পিক বাংলাদেশ'-এর আয়োজনে 'গণঅভু্যত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ, সংবিধান সংশোধন না পুনর্লিখন' শীর্ষক এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, 'আজকের দিনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি মুখোমুখি হয় একটি রাজনৈতিক প্রশ্নের। সেটি হলো বাংলাদেশে আবারো স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি না? সেই প্রশ্নের মীমাংসা কেবলমাত্র কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলে হবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের এখনকার রাজনীতির সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে এই স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথকে যেন রুদ্ধ করতে হয় তাহলে আমাদের কি করণীয়? যারা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, এখনো আহত আছেন তারা আমাদের কাঁধে সে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন যেন আরেকবার এমন পরিস্থিতে পড়তে না হয়। শুধুমাত্র আত্মদানের পক্ষে নয়, কাঠামোগত অর্থেও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আজকের সময়টা হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়। এই অর্থে যে আমাদের ভাবতে হবে কোনো ধরনের রাষ্ট্র তৈরি করব? যে রাষ্ট্র মানবিক অধিকার ও মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে অঙ্গীকারগুলো করা হয়েছিল অর্থাৎ সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের যে প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল সেটিকে পুনর্বার আমাদের স্মরণ করে সে পথে আমরা অগ্রসর হব কি হব না?'

'এ রাজনৈতিক প্রশ্নের কথা বলছি তার স্বারসংক্ষেপ হলো বাংলাদেশের সংবিধানের ভবিষ্যতে কি হবে কি হবে না তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কেননা আপনি আমি চাই বা না চাই এটি বাস্তব যে, যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনি যদি সেটাকে সাংবিধানিক বলেন আমি বলতে পারি সেটা তিনি মিথ্যা বলবেন না। এ সংবিধানের মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব। এ সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রণীত হওয়ার পর যে কেবলমাত্র যে সংশোধনী হয়েছে তা নয়, এ সমস্ত সংশোধনী এমনভাবে হয়েছে যে দুটি ক্ষেত্রে আমি বলতেই পারি এগুলো শুধু ব্যক্তির জন্যে করা হয়েছে। অন্যান্য সংশোধনী কাটাছেঁড়া করা হয়েছে সেগুলো এই পথ তৈরি করেছে যে ক্ষমতার এক কেন্দ্রীকরণ সম্ভব এবং এর মাধ্যমে সাংবিধানিক পদ্ধতির মাধ্যমে দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে বাংলাদেশকে যেতে হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'অনেকে বলছেন এখন সংবিধান সংস্কার করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বন্ধ করতে সংবিধান সংস্কারপন্থি নই। এখন বাংলাদেশের সুযোগ এসেছে রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করার। রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে হবে কেননা গত ১৫ বছর ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্র কাঠামোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এই সংবিধান সংশোধনের যোগ্য কি না? এ প্রশ্ন তোলা জরুরি। এই সংবিধান যোগ্য নয় কারণ আরেকজন স্বৈরাচারী তৈরি কারার পথ যেহেতু আছে, আপনি যতই কাটাছেঁড়া করেন তার আসার পথ বন্ধ করতে পারবেন না।'

সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো: এই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে যে ক্ষমতা অভাবনীয় ক্ষমতা দিয়েছে, একজন ব্যক্তি শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি সংসদে তার দলের নেতা, সংসদের প্রধান এবং মিজার অফ দি হাফ। চারটি ভূমিকা তাকে পালন করতে হয় এবং এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে যখন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রীর শাসিত ব্যবস্থায় বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। ১৯৭৫ সালে বাকশালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হাতে যে ক্ষমতার পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছিল, দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন করে যখন রাষ্ট্রপতির সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকে এবং সে ক্ষমতা প্রয়োগে যখন জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকে তখন আপনি অনিবার্যভাবেই এক স্বৈরতন্ত্র হিসেবে আবির্ভাব হবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে