সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ- এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এটি সাভারের আশুলিয়া থানার সামনের ভিডিও বলে জানা গেছে।
ভিডিওতে থাকা একটি পোস্টার দেখে আশুলিয়া থানার সামনে ভিডিও বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ভিডিও'র হুবহু মিল পাওয়া যায়।
এর আগে শুক্রবার সারাদিন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ভাইরাল
হওয়া এক মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে লাশ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখে।
ভিডিওর এক মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও সাত নম্বর চৌরাওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়। ওখানে এখনো সেই পোস্টারটি দেয়ালে রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ওই বাড়ির একাধিক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বললেও ভিডিওর ব্যাপারে জানা যায়নি।
স্থানীয় দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের পরও আন্দোলনকারী থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তারা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে কেউ মুখ খোলেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিকাল ৪টার দিকে থানায় হামলার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তিনি বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন।
তবে ভ্যানে লাশ স্তূপ করার ঘটনাটি তিনি দেখেননি বলে জানান।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আরাফাতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'শনিবার সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।'
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ১৫ জনের মৃতু্য হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।