রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আজ ইউনূস-শাহবাজ ফোনালাপ

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর বিএনপির ভোট নিয়ে আলোচনার দাবির মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ে বসতে চলছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই মতবিনিময় শুরু হবে বলে উপদেষ্টা দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ওইদিন রাত ৮টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা মতবিনিময়ের কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দৈনন্দিন সূচিতে। শুক্রবার উপদেষ্টা দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সব রাজনৈতিক দলকেই মতবিনিময়ে চাইছি। মতবিনিময়ে আগ্রহীরা সবাই আসবে। দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বুঝতে পারবেন।' এর আগে বৃহস্পতিবার দেশ 'সংস্কার' প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করে অন্তর্র্বর্তী সরকার। পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ -আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখব, তাদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যা আসবে সেগুলো গ্রহণ করব। সে ব্যাপারে একটা পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে।' বর্তমানে দেশে ৪৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর বাইরে আলোচিত জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দল ও মোর্চা নিবন্ধনের বাইরে থেকেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল ও সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারকে স্বাগত জানানো হলেও গত ২৪ আগস্ট থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রশ্নে 'অতি দ্রম্নত' সংলাপের দাবি জানাচ্ছিলেন। অন্তর্র্বর্তী সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, সে প্রসঙ্গে সেদিন তিনি বলেন, 'অল্প কিছু মানুষের সংস্কারে' তিনি বিশ্বাস করেন না। এরপর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস তার সরকারের যে কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন সেখানে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। তাতে 'হতাশা' প্রকাশ করে ফখরুল বলেছিলেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল মুহাম্মাদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। ফখরুল ছাড়াও দেশকে আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফেরাতে দ্রম্নত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান রাখনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার যমুনায় আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ডাক পান বিএনপি নেতারা। সেখানে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন তাদের মধ্যে অত্যন্ত 'ফলপ্রসূ' আলোচনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নিল ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'আমরা তো অবশ্যই এই মতবিনিময়ে অংশ নেব। আমরা আমাদের কথাগুলো বলব। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের আলোচনা শুরু করতে হবে। এই সরকার কোন কোন কাজ করতে পারবে সেই কাজ করার জন্য কতদিন সময় প্রয়োজন হবে তা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে।' ড. ইউনূস-শাহবাজ ফোনালাপ এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুক্রবার ফোনে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে ফোনালাপে অভিনন্দন জানিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ড. ইউনূসের অবদানের প্রশংসা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সমবেদনা জানান। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফোনালাপে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা উলেস্নখ করেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বাণিজ্যিক সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ জোরদারের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উভয় নেতা একমত হন যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণের অগ্রগতি-সমৃদ্ধির জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। তারা আরও একমত হন যে বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ফোন দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে অধ্যাপক ইউনূস ধন্যবাদ জানান বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়।