স্পিকার বিতর্কিত হলে দায়িত্ব নেবেন কে?
প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন মো. শাহাবুদ্দিন। কোনো কারণে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু ইতোমধ্যে রংপুরে তার নামে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ অবস্থায় অনিবার্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে তিনি রাষ্ট্রপতির অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা; সে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সরকার বিলুপ্ত হলেও স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন কি-না? যদিও সংবিধানের বিধান মতে তারা স্বপদে আছেন। পরবর্তী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা এ পদে থাকবেন। সংবিধানের বিধানগুলো পর্যালোচনা করে এবং আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা
বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ওইদিন বিকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২
\হপদত্যাগের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এখন একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব।'
সংবিধানের ৫৮(১)(ক) বিধান মতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পদত্যাগ করতে হয়। এই অনুচ্ছেদের (৪) বিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে।
এদিকে পতিত প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর দিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি ওইদিনই আইন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যপদ শূন্য হয়েছে। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ দুটি এখনো বহাল রয়েছে। দ্বাদশ সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু সংসদ ভেঙে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে সংসদ সদস্য নেই। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে তারা বহাল আছেন।
সংবিধানের বিধান ৭৪(২) অনুযায়ী, সংসদ সদস্য না থাকলে; সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে; সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা অপসারণে সম্মত হলে; রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলে; নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তার কার্যভার গ্রহণ করলে; ডেপুটি স্পিকারের ক্ষেত্রে, তিনি স্পিকারের পদে যোগদান করলে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হবে। তবে পরবর্তী স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত এ পদ দুটি 'শূন্য হবে না' বলে সংবিধানে স্পষ্ট উলেস্নখ রয়েছে।
সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে- 'এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলি সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রহিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীবুল আলম বলেন, 'স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মেয়াদের বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট উলেস্নখ আছে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন স্পিকার না আসা পর্যন্ত তাদের পদ শূন্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'
তিনি বলেন, 'আইনে একটা কথা বলা হয়- সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সংসদ ভেঙে গেলেও আমাদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার তাদের পদে আছেন, এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সংসদ ভেঙে যাওয়ার কারণে তারা এই মুহূর্তে সংসদ সদস্য নন। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদে তারা বহাল আছেন। তাদের পদ শূন্য করতে হলে সংবিধান বা সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল বা স্থগিত করতে হবে।'
এখানে উলেস্নখ্য যে রাষ্ট্রপতির পদের ক্ষেত্রেও সরকারের মেয়াদ ও বিলুপ্তির কোনো সম্পর্ক নেই। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হলেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত নিজ পদে বহাল থাকবেন। সংবিধান অনুযায়ী (৫৪) রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রংপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমলি আদালতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মুসলিম উদ্দিন মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার (৩২) এ মামলা করেন।
মামলায় শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুসাইন মোহাম্মদ রায়হান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আশরাফ সিদ্দিকী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রামাণিক, আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদাত হোসেন বকুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শফিয়ার রহমান সাফি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেককে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলা উলেস্নখ করা হয়, ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৮ থেকে ১৭ নম্বর আসামিদের প্ররোচনা ও উসকানিতে ১ থেকে ৭ নম্বর আসামির নির্দেশে ২, ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর আসামিসহ হেলমেট পরিহিত পুলিশ সদস্যরা এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে মিলন গুলিবিদ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে আসামিদের চাপে মরদেহের ময়নাতদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে দাফন করা হয়।
ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে মামলা
এছাড়া রাজধানীর পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে। এর আগে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় ডেপুটি স্পিকারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৪ আগস্ট দিনগত রাতে পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেন্টু মিয়া বলেন, গত ১৯ জুলাই পল্টনে এক রিকশাচালককে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় শামসুল হক টুকু, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলাটির বাদী ফাতেমা খাতুন নামে একজন নারী বলে জানা গেছে।