ওরা আবার মাঠে নেমেছে
প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
স্বৈরাচারের দোসর, ক্ষমতা ও অর্থলোভী দেশের অর্ধশতাধিক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে এখন আবার সুর বদলে মাঠে নেমেছেন। এদের কাউকে কাউকে ইদানীং বঙ্গভবন, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সেনাপ্রধানের অফিসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গলা চড়াতে দেখা যাচ্ছে। দেশ ও জাতির শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে নানা নসিয়ত করছেন ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করছেন। হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, এদের আগের মতো 'খাতির-যত্ন' না করলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে যাবে এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ এসব লুটেরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট হাসিনা সরকারের আমলে কখনো দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে, কখন আমদানি-রপ্তানির নামে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে, রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা নিয়ে কিংবা ব্যাংক-বীমা ও নানা কোম্পানির মালিক হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সরকারের লেজুড়বৃত্তি ও চাটুকারিতা করে অবৈধভাবে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। তারা তাদের স্বার্থে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার নীল নকশা বাস্তবায়নে সব সময়ই প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সুবিধাভোগী এসব ব্যবসায়ী ও নেতা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এবং শেখ হাসিনাকে আমৃত্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার আওয়াজ তুলেছেন। এমনকি গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি করে লাশের পাহাড় গড়ে তোলার পরও তারা তাদের সে অবস্থান থেকে নিজেদের সরিয়ে নেননি; এসব নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হননি।
বরং হাসিনা সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সাহস যুগিয়েছেন। সারাদেশে ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনে দেশব্যাপী ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও তারা অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকানোর দোহাই দিয়ে তাদের ব্যবসা চলমান রাখতে কৌশলী পথ খুঁজেছেন। নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনায় সারাদেশ ফুঁসে উঠলেও সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী এই ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন, যা নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ সরকারের আকুণ্ঠ সমর্থন দেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে ঘোষণা দেন। তারা ছাত্র আন্দোলনকে লজ্জাজনক ও জঘন্য বলে আখ্যা দিয়ে এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময়ে অন্যান্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইর সভাপতি ও আলম গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএর সভাপতি ও সেহা ডিজাইন বিডির চেয়ারম্যান এসএম মান্নান কচি, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ও এমবি নিট ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও এপেক্স গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বসন্ধুরা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, প্রাণ গ্রম্নপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, হা-মীম গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, ওনাস গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বেঙ্গল গ্রম্নপের ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, ইউরো গ্যাস এলপিজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের সভাপতি ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, বিকেএমইএর সভাপতি ও উইজডম আটায়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও ইভেন্স টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং স্টারলিং গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান। বারবিডার সাবেক সভাপতি ও অটো মিউজিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উলস্নাহ ডন, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি আমিন হেলালী, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এনভয় গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডা. এইচবিএম ইকবাল, সিডিবিএলএর ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নূরুল ফজল বুলবুল, এফবিসিসিআইর পরিচালক নাজ ফারহানা আহমেদ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুদ্দিন মো. সাকী ও টেলিলিংক গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআইর উদ্যোগে 'স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের করণীয়' শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা এবং শিল্পোদ্যোক্তারা 'আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় দেখতে চান' বলে একযোগে আওয়াজ তোলেন। কেউ কেউ 'শেখ হাসিনার সরকার-বারবার দরকার' এমন সেস্নাগানও দেন তারা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে তাকে সর্বত্র সহায়তা করার অঙ্গীকার করেন।
ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, বসুন্ধরা শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রম্নপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান, বিটিএমএ সভাপতি ও ম্যাকসন গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ও আইন পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (লিগ্যাল কনসালটেন্সি ফার্ম) 'সাত্তার অ্যান্ড কোম্পানি'র প্রধান সামীর সাত্তার, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও এশিয়া ইন্সু্যরেন্সের চেয়ারম্যান ইউসুফ আবদুলস্নাহ হারুন, নিটল গ্রম্নপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমদ, মীর আক্তার হোসেন গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মীর নাসির হোসেন, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) ও সরকার রিক্রুটিং এজেন্সির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল বাশার, বেসিস সভাপতি ও চেম্পস২১-এর সিইও রাসেল টি. আহমেদ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও আকিজ জুট মিলসের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন, বিসিআই সভাপতি ও ইভেন্স টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রম্নপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিনিয়র পার্টনার নিহাদ কবির, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি ও ইন্ট্রাকো গ্রম্নপের ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা হাকিম আলী, এমসিসিআই সভাপতি এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, বিটিএমএ সভাপতি ও ম্যাকসন গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির, মেঘনা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব-উর রহমান, এফআইসিসিআই সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের ইজাজ বিজয়, বাংলাদেশ নারী শিল্প ও বণিক সমিতির (বিডবিস্নউসিসিআই) সভাপতি ও নিটল গ্রম্নপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমেদ, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ইন্ডিটেক্স-এর আঞ্চলিক প্রধান জাভিয়ের কার্লোস সান্তোজা ওলসিনা, বিজিএমইএ সভাপতি ও জেইন্ট গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি উইজডম আটায়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম সেলিম ওসমান, বেঙ্গল গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি ও হা-মীম গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও এপেক্স গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারস অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইনান্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি ও সাত্তার অ্যান্ড কোং-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার, এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি, মোতাহার গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু প্রমুখ।