সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নামে আরও চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাংবাদিক হাসান মাহমুদকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়। অন্যদিকে ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সংঘর্ষের সময় জহিরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় তার ভাই বাবুল মিয়া বাদী হয়ে বুধবার বিকালে আরেকটি মামলা করেন জেলার সদর মডেল থানায়। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় বুধবার রাতে পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম এসেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সড়ক পরিবহণ শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাংবাদিক হাসান মাহমুদকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে হাসান মাহমুদের স্ত্রী ফাতেমা মামলাটির আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি খিলগাঁও থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অপর উলেস্নখযোগ্য আসামিদের মধ্যে
রয়েছেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, হাসান মাহমুদ সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৩১ জুলাই রাত দেড়টার দিকে উত্তরার মুগদাপাড়ার বাসা থেকে বের হন তিনি। রাতে আর বাসায় ফেরেননি। খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, সাদা পোশাকধারী অজ্ঞাত লোক এবং আরও অজ্ঞাত ৫০-৬০ জন হাসান মাহমুদকে তুলে নিয়ে গেছে। পরে তারা জানতে পারেন, গোড়ান ছাপড়া মসজিদের সামনে পড়ে আছেন হাসান মাহমুদ। উদ্ধার করে ভোর ৫টার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গণহত্যার অংশ হিসেবে হাসান মাহমুদকে খুন করেছে বলে অভিযোগে উলেস্নখ করেন বাদী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জহিরুল ইসলাম হত্যা মামলা
আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, শেখ হাসিনা, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৫৪ জনের নাম উলেস্নখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
২০২১ সালের ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর বিসিক রাস্তার সামনে সংঘর্ষের সময় জহিরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় তার ভাই বাবুল মিয়া বাদী হয়ে বুধবার বিকালে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী জহিরুল ইসলাম সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে। মামলায় ৫৪ জনের নাম উলেস্নখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার উলেস্নখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসনের সাবেক এমপি মঈন উদ্দিন মঈন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. বিলস্নাল মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সহ-সভাপতি ডা. মো. আবু সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এহতেশামুল বারী তানজিল, তানজিল, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি মো. সফি উলস্নাহ, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী, সরাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শের আলম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএএইচ মাহবুব আলমসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের ৫৪ নেতাকর্মীর নাম উলেস্নখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় বাবুল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের ডাকা বিক্ষোভ-মিছিলে জহিরুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় ১ থেকে ৪নং আসামি নির্দেশে অন্য আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছোড়া গুলি, ককটেল ও বোমার স্পিস্নন্টারের আঘাতে জহিরুল ঘটনাস্থলে মারা যায়। ওই সময় পুলিশ ও প্রশাসনের অসহযোগিতা এবং দমন-নিপীড়নের ভয়ে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
শ্রীপুরে দুটি হত্যা মামলা
আমাদের শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কোটা বৈষম্য আন্দোলনের সময় গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা রুজু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সোহেল রানা যায়যায়দিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বুধবার রাতে নিহতদের মধ্যে দুই পরিবারের স্বজনরা মামলার আবেদন করেন।
মামলা দুটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুলস্নাহ্ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশিদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উলস্না খান, গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। দুটি মামলায় ৯৫ জনের নাম উলেস্নখের পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ১ হাজার ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আন্দোলনের সময় নিহত শ্রীপুরের কপাটিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন রানার (৩৫) বাবা জামাল উদ্দিন ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার রহমত মিয়ার (২০) বাবা মো. মুঞ্জু মিয়া মামলা দুটি করেন।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম সোহেল রানা মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় মামলা দুটি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জামাল উদ্দিনের মামলায় উলিস্নখিত কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ ৩৫ জন জ্ঞাত ও আরও ৪০০-৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে মো. মঞ্জু মিয়ার মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শ্রীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত রহমত আলীর মেয়ে ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি, ছেলে শ্রীপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জামিল হাসান দুর্জয়, সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন সবুজসহ ৬০ জনের নাম উলেস্নখ করে আরও ৫০০-৬০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।