২০০৩ সালে মুলতানে একদম কাছে গিয়েও বাংলাদেশ দলকে পুড়তে হয়েছিল ১ উইকেটে হারের যন্ত্রণায়। সেদিন চোখে জল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজনরা। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে ঘরে-বাইরে অনেকগুলো টেস্ট খেললেও জয় ছিল অধরা। অবশেষে গত ২৫ আগস্ট স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের অবিস্মরণীয় এক জয় তুলে নেয় টাইগাররা। ২১ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ। তাইতো এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ে চোখ নাজমুল হোসেন শান্তর দল বাংলাদেশের।
সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে সফরকারী বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতে আরও একটি ইতিহাস গড়তে দারুণভাবে মুখিয়ে
আছে টাইগাররা। বাংলাদেশ সময় আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস ও গাজী টিভি।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে রয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ দল। তাতে পাকিস্তানের মাটিতে সিরিজ জয়ের জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে টাইগারদের সামনে। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে কোনো মতে হার এড়াতে পারলেই বাজিমাত সফরকারীদের। তাই বলে রক্ষণাত্মক কোনো পরিকল্পনা করতে চায় না তারা। আক্রমণাত্মক পরিকল্পনায় দ্বিতীয় টেস্ট ও শেষ টেস্ট জিতে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আজ মাঠে নামার ইঙ্গিত দিলেন টাইগারদের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
ঘরের মাঠে খেললেও প্রথম টেস্টে নিজেদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগেনি পাকিস্তানের। উল্টো বাংলাদেশই যেন কন্ডিশনের পুরো ফায়দা তুলে নিয়েছে। দ্বিতীয় টেস্ট একই মাঠে হওয়ায় টাইগারদের আত্মবিশ্বাস এখন আরও উঁচুতে। এই টেস্টে কেমন মানসিকতায় খেলবেন তা জানতে চাইলে কোচ হাথুরুসিংহে বলেন, 'আসলে আমরা সবসময় আক্রমণাত্মক পরিকল্পনায়ই যাব।'
এরপর নিজেদের এমন পরিকল্পনার কারণ ব্যাখ্যা করে হাথুরুষিংহে আরও বলেন,' কন্ডিশনের ওপর অনেক সময় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসে। প্রথম ম্যাচ থেকে আমাদের প্রস্তুতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা নিজেদের শক্তির জায়গা, সীমাবদ্ধতা জানি। প্রতিপক্ষের শক্তি এবং সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলোও জানা আছে আমাদের। পিচ, কন্ডিশন সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা আমাদের কৌশলের ব্যাপারে চিন্তা করে থাকি।'
এর মধ্যেই নিজেদের একাদশে পরিবর্তন আনবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। স্পিনার আবরার আহমেদকে দলে নেওয়া হয়েছে। বিশ্রামে গেছেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। অন্যদিকে প্রথম টেস্ট জিতে নিলেও নিজেদের একাদশে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনার কথা জানান টাইগার কোচ। মূলত আবহাওয়ার কারণেই এই পরিবর্তন আসতে পারে জানিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন,' দলের মোরাল অনেক উঁচুতে আছে। কারণ অবশ্যই পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়া সহজ কোনো কাজ নয়। তারা অনেক ভালো দল। এখনো আমরা দ্বিতীয় ম্যাচে অনেক লড়াই আশা করছি। কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে, পিচ দেখে আমরা দলে পরিবর্তন আনতেও পারি। কারণ আমরা এখনো পিচ দেখতে পারিনি। আবহাওয়ায় কিছুটা তফাত আছে আগের ম্যাচ থেকে।'
দ্বিতীয় টেস্টেও ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বিশেষকরে ওপেনারদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছেন টাইগারদের এই প্রধান কোচ, 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, শুরুতে ভালো জুটি গড়া। প্রথম ইনিংসের প্রথম) ১২ ওভারে আমাদের ওপেনাররা অল্প সময় হলেও ভালো ব্যাটিং করেছে। যা তৃতীয় দিন সকালে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এরপর মুমিনুল ও সাদমান ভালো একটি জুটি গড়ল ৯০ রানের। মুশফিক, লিটন, মিরাজরা সেটি ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে।' তাইতো আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টেও শান্ত ও সাকিবদের কাছ থেকেও ব্যক্তিগত বড় রানের প্রত্যাশা করছেন টাইগারদের প্রধান কোচ।
রাওয়ালপিন্ডিতেই প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৪তম মোকাবিলায় এসে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ জয়ের স্বাদ নেয় টাইগাররা। দ্বিতীয় টেস্টেও পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে উদগ্রীব মুশফিক-সাকিবরা।
সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটেও ভালো ছিলো না। আগের ১৩ মোকাবিলায় ১২টিতে হার ও ১টিতে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। বেশিরভাগ ম্যাচই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা। কিন্তু প্রথম টেস্টের পর পরিসংখ্যানের চিত্র পাল্টে দেয় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। এবারও রেকর্ড পক্ষে না থাকলেও টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ। গত ২৪ বছরে ১৪৩টি টেস্ট খেলে মাত্র ২০টিতে জয় এবং ১০৫টি হেরেছে টাইগাররা। ১০টি টেস্ট সিরিজ জয় আছে তাদের।
সর্বমোট ৬০টি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩টিতে জয় এবং ৯টিতে ড্র এবং ৪৮টি সিরিজ হেরেছে তারা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া সিরিজের মধ্যে তিনটি টেস্ট সিরিজই জিতেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে প্রথম টেস্টে জয় পাওয়া সিরিজের মধ্যে ৭টি টেস্ট সিরিজ ড্রও করেছে তারা। শেষবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর সিরিজ ড্র করেছিল বাংলাদেশ।
টেস্ট সিরিজ জয়ের প্রত্যাশার চাপ সামলাতে না পারলেই হার মানে বাংলাদেশ। কিন্তু অতীতের রেকর্ড মুছে ফেলতে চান টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার বিশ্বাস অতীতের বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে এবার পুরো টেস্ট সিরিজে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ছাড়াও এ বছর আরও ৬টি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। তাই টেস্ট লড়াকু দল হয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশের কাছে ধারাবাহিকতাই এখনই মহাগুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখলেও সিরিজ হার এড়াতে ঘুড়ে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তান। প্রথম টেস্টে পেসারদের দিয়ে পুরো বোলিং আক্রমণ সাজানোর কৌশল পাকিস্তানের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছিল। প্রথম টেস্টের ঠিক আগ মুহূর্তে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া পেসার আমের জামাল, ব্যাটসম্যান কামরান গুলাম ও লেগ-স্পিনার আবরার আহমেদকে ফিরিয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তানদল।
বরাবরই লেগ-স্পিনে দুর্বল হওয়ায় আবরারের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য বড় চিন্তার কারন হবে। এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৩৮ উইকেট নেওয়া আবরারকে কি পরিকল্পনায় সামলাবে, সেটির উপরই নির্ভর করছে টাইগারদের সাফল্য।