সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে তৃতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম নুরুল হুদা চৌধুরী।
এদিকে, রাজধানীর বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগের মামলায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরআগে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকের্ যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় টিপু মুনশিকে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা (প্রসিকিউশন) মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বাড্ডায় ফুজি টাওয়ারের সামনে সুমন সিকদারকে (৩১) গুলি করে হত্যা মামলায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন বাড্ডা থানার এসআই রেজাউল আলম।
রিমান্ড শুনানিতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'আমরা দুজনই (আমি ও সালমান এফ রহমান) কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। আমি নির্দোষ। ঘটনার বিষয় কিছুই জানি না। আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই।' শুনানি শেষে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
কোটা সংস্কার আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিলে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরপর সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ আগেই দেশ ছেড়েছেন বলেও খবর আসে। এর মধ্যেই ১৩ আগস্ট ঢাকার পুলিশ সদরঘাট থেকে সালমান ও আনিসুলকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয়।
পরদিন নিউমার্কেট এলাকায়
দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে (২৪) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাদের দুইজনের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকার মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ।
প্রথম দফার রিমান্ড শেষে ২৪ আগস্ট তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর দুই কলেজছাত্র হত্যার পৃথক মামলায় পাঁচ দিন করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে পেয়েছিল পুলিশ।
টিপু মুনশি গ্রেপ্তার: এদিকে, রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে আসা সাবেক এই এমপিকে মধ্যরাতে এক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। তিনি ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের গত বারের আগের মেয়াদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
সরকার পতনের পর গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের গ্রেপ্তার ও মামলার মধ্যে এবার সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য টিপু মুনশিকে গ্রেপ্তার করা হলো।
র্
যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, গুলশানে ১ নম্বর রোডে এম অ্যান্ড জে গ্রম্নপের কর্ণধার সালাউদ্দিন আহমেদের বাসা থেকে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, রংপুরের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জিয়াউল-সাদেক রিমান্ডে: এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আদাবরের জাকির হত্যা মামলায় চাকরিচু্যত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং সাবেক এমপি সাদেক খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ।
এদিন সকাল ৭টায় আসামিদের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। এর আগে কড়া নিরাপত্তায় সাদেক ও জিয়াউলকে আদালত চত্বরে আনা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা (প্রসিকিউশন) পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
টিপু মুনশি রিমান্ডে
এদিকে রাজধানীর বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগের মামলায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ মামলায় গ্রেপ্তার টিপু মুনশিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডের বিরোধিতা করে আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আজ বিকেল পাঁচটার পর কড়া পুলিশ পাহারায় টিপু মুনশিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে হাজতখানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, শরীরে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীরা টিপু মুনশির শাস্তি চান।
এরআগে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকের্ যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় টিপু মুনশিকে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের বেশ কয়েকজনকে এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাইকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্র-জনতা নিহতের ঘটনায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁরা এসব মামলায় রিমান্ডে আছেন।
৫ আগস্টের পর থকে টিপু মুনশিও আত্মগোপনে ছিলেন। তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে নামা টিপু মুনশি রংপুর-৪ আসনের (পীরগাছা-কাউনিয়া) সাবেক সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালে ওই আসন থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য হন তিনি। সেবার আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান টিপু মুনশি।