উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল হচ্ছে
বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা পাবে না বঙ্গবন্ধু পরিবার 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী' আইন সংশোধন
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বিশেষ প্রতিনিধি
চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে কালোটাকা সাদা করার বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বিবেচিত কালোটাকা বৈধ বা সাদা করার সুযোগ আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে সমালোচনা করা হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও কার্যালয় যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে এ তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা মূল্যবোধ অবক্ষয় হয়। এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। অতি দ্রম্নত সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা এবং শেয়ারসহ যে কোনো বিনিয়োগ নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে ঢালাওভাবে সাদা করার সুযোগ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পরও বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তা বৈধ করার প্রস্তাব পাস করে সংসদ। সংসদেও সরকারি ও বিরোধীদলের অনেক সদস্য এর সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এছাড়াও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ ফুটবল টিমকে সংবর্ধনা
দেবে সরকার। তিনি বলেন, বন্যার কারণে রপ্তানিমুখী যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত তাদের শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার কার্যক্রমও চালানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে বৈঠকে।
বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা
পাবে না বঙ্গবন্ধু পরিবার
এদিকে, শুধুমাত্র একটি পরিবারের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা প্রদান বৈষম্যমূলক উলেস্নখ করে 'জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
একইসঙ্গে 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়ারও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে 'জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬৩ নম্বর আইন) প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ১৫ মে উক্ত আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারি করা হয়। কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য আইনটি করা হয়েছিল যা একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানের পর বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার সব বৈষম্য দূরীকরণে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছে।'
'বর্তমানে সংসদ ভাঙা অবস্থায়' রয়েছে বিধায় এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ আইনটি রহিতকল্পে অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে, উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে 'জাতির পিতার পরিবার-সদস্যরা নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়।
'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী'
আইন সংশোধন
এদিকে, 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১' সংশোধন করা হচ্ছে। আইনটি সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। অন্তর্র্বর্তী সরকার বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় এক বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ এ ব্যাপারে সম্মত হয়।
\হবৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আইনটি সংশোধন ও অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পরিবারের সদস্যগণ' এবং কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১' প্রণয়ন করা হয়। ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানের পর গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এইরূপ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১'-এর আওতায় প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এছাড়া, বিদ্যমান আইনের আওতায় 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পরিবারের সদস্যগণের' নিরাপত্তা প্রদান সংক্রান্ত বিধানগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয়। ফলে তা বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। ওই আইনের কিছু বিধান বিলোপসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজন করে 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪' উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।