বন্ধুত্ব চাই, সহযোগিতা চাই :দলের আমির

জামায়াত-শিবিরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার ২৮ দিনের মাথায় সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নিল অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ সরকার পায়নি। এতে আরও বলা হয়, 'যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত নয়, সেহেতু সরকার, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত এ বিভাগের বিগত ১ আগস্ট তারিখের প্রজ্ঞাপন বাতিল করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ হইতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন এর তালিকাভুক্তি বাতিল করিল।' এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আর সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রের চোখে জামায়াত-শিবির এখন আর 'সন্ত্রাসী সংগঠন' নয়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা, আইনজীবী শিশির মনির বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নতুন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলে ২২ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের স্বাক্ষরে একটি দরখাস্ত করা হয় সরকারের কাছে। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয় সেখানে। এই দরখাস্তের ভিত্তিতে ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসবির রিপোর্ট তলব করা হলে রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা করা হয়। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার কোনো সম্পৃক্ততা তিনটি এজেন্সি পায়নি। 'এরপর আইন অনুযায়ী ১৯ নম্বর ধারার রিকোয়ারমেন্ট মোতাবেক রিভিউ প্যানেল গঠন করা হয়। তারাও ওই অভিযোগের সমর্থনে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাননি। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়। উনার স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার সব প্রক্রিয়া শেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, অতীতে যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছিল, এই প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করা হলো।' আইনের প্রত্যেক ধারা-উপধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে শিশির মনির বলেন, 'প্রক্রিয়াটা একটু লম্বা ছিল। কিন্তু আমরাও চেয়েছি আইন মানতে, যেন কারও কোনো আপত্তি না থাকে। আইনের ক্ষেত্রে কেউ যেন কখনো বলতে না পারে যে জামায়াতে ইসলামী আইনের বাইরে কাজ করেছে।' বন্ধুত্ব চাই, সহযোগিতা চাই :দলের আমির এদিকে ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, 'আমরা সবাই বন্ধুত্ব চাই, সহযোগিতা চাই।' গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা দলটির নেতা বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় আলোচনায় ওঠে ভারত প্রসঙ্গও। তুমুল গণ-আন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে জামায়াতকে 'সন্ত্রাসী সত্তা' আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। তবে ৫ আগস্ট থেকে জামায়াত প্রকাশ্যে চলে আসে। তারা সেদিন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তী সরকারের শপথেও উপস্থিল ছিল দলটির প্রতিনিধিরা। নিষিদ্ধ হওয়ার ২৮ দিনের মাথায় সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়ে যায় বুধবার, একই দিন দলটির আমির এই মতবিনিময়ের আয়োজন করেন। ভারত প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, 'আমরা কেউ বিপদে পড়তে চাই না। আমরা চাই সবাই সবার সম্মানিত প্রতিবেশী হিসেবে বাস করুক। এটা শুধু ভারত দিয়ে কথা নয়, সবার ক্ষেত্রে আমাদের একই কথা।' 'বন্ধু হিসেবে আমাদের সাহায্য করুন, কিন্তু মেহেরবানি করে কেউ আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করবেন না। ডিসিশনটা আমাদের জনগণকে নিতে দিন। জনগণ যখন ডিসিশন নেবে তখন সেই ডিসিশন জনকল্যাণমূলক হবে, এটাই হবে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের অধিকারের পক্ষে। কিন্তু অন্য জায়গা থেকে যদি আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।' জামায়াতের আমির বলেন, 'আপনারা স্বভাব বদলান তাহলে প্রতিবেশী বদলানোর দরকার পড়বে না। প্রতিবেশীকে প্রতিবেশী হিসেবে আপনি রিসিভ করুন, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।' 'আপনি যখন কাউকে সম্মান করবেন, ভালোবাসবেন, আপনার পাওনা হয়ে যাবে তার থেকে ভালোবাসা পাওয়া, সম্মান পাওয়া। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে, অস্থির হওয়ার কিছু নেই।' গুলশানের হোটেল লেকশোরে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় হয়। নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, মানব জমিনের নির্বাহী সম্পাদক শামীমুল হক, এটিএন বাংলার পরিচালক (বার্তা) হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, বাংলা ভিশনের প্রধান সম্পাদক আবদুল হাই সিদ্দিক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু এই মতবিনিময়ে 'মুক্ত গণমাধ্যম' বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।