কানাডার 'নাগরিক টিভি'কে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

ধৈর্য ধরতে হবে, ১৬ বছরের জঞ্জাল ১৬ দিনে মিটবে না

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ১৬ বছরের জঞ্জাল ১৬ দিনে মিটবে না। তাই সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। কানাডার ইউটিউব চ্যানেল 'নাগরিক টিভি'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। এই সাক্ষাৎকারটি বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার দিকে চ্যানেলে অন এয়ার করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে এখনো অনেকে স্বপদে রয়েছে তাদেরকে সরানো হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক ইসু্য আছে। যেগুলো তদন্ত হচ্ছে। এজন্য আমরা সময় নিচ্ছি, প্রমাণ লাগবে, প্রমাণিত না হলে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।' 'এই কাজটি একটু ধীর প্রক্রিয়ায় চলছে। এখন দেখা যাক, বেশকিছু জিনিস আছে যেটা আমাদের করতে হবে।' সেনাবাহিনী এখনো কেন ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছে না, তাদের এখন মাঠে থাকা উচিত কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে জেনারেল ওয়াকার বলেন, 'আমরাতো যেতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে চাই। তবে সম্ভবত আমাদের আরও কিছুকাল থাকতে হবে। কারণ পুলিশ এখনো তাদের দায়িত্ব নেয়ার মতো অবস্থায় নাই। পুলিশ প্রায় অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল। এখনো দায়িত্ব নেয়ার মতো হয়নি। তারা দায়িত্ব নেয়ার মতো হলে অবশ্যই আমরা ফেরত চলে যাব। আমরা তো বেশিক্ষণ থাকতে চাই না।' আনসার বাহিনীর মতো নানা দাবিতে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এটাকে সেনাবাহিনী কীভাবে দেখে এমন প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, 'এটাকে আমরা অবশ্যই কাউন্টার কোড করছি। যেমন আরএবিতে এমন একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। অনেকে এখন নানা ধরনের কষ্টের মধ্যেই আছে। তারপরও আমাদের ধৈর্য ধরে আস্তে আস্তে এগুলো সমাধান করতে হবে। আনসারের ওটা আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। নাইন ডিভিশন কাজ করেছে। এবং আনসারদের নিবৃত করেছে।' শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া ঠিক ছিল নাকি তাকে দেশে রেখে বিচার করা উচিত ছিল এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ওই সময়ে একটি উত্তপ্ত মুহূর্তে তাকে ওখানে রেখে দিলে সমস্যা হতো। আর প্রথম কথা হচ্ছে, আমিতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তখন আমাকে কিছু ব্যক্তি বলেছে যে, উনিতো চলে যাচ্ছেন। উনি অলরেডি রান। তো এটা আমি জানতাম না যে, তিনি দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। তারপরও আমি মনে করি যে, উনি দেশে থাকলে ওনার জীবন ঝুঁকি হতে পারত। কেউ চাইবে না যে একজনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হোক। এটা মোটেই কাম্য না। পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল।' তিনি বলেন, 'আমি আশাবাদী সবাই একসঙ্গে যদি কাজ করি তাহলে দেশ সংস্কার করা সম্ভব হবে। এবং আমরা একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে সম্ভব হবো। আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও তাদের সঙ্গে আছি কাজ করছি। এই সরকারকে সাহায্য করছি। আমরা সেই লক্ষ্যে যাব, যেতে হবে। কারণ এখান থেকে ফেরত যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে অনেক ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি চলছে। যত সংবাদ তারা পায়, আমার দেখা মতে তা ৯৫ শতাংশই মিথ্যা। সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে এই সমস্ত সংবাদ পরিবেশন করা হয়। এটা মানুষকে একটি ভুল ধারণা দেয়। আমি বলব মানুষকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে।' গণমাধ্যম ঠিকমত কাজ করছে কিনা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, 'অনেকেই করছে, অনেকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। তারা এ ধরনের সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে সংবাদ প্রচার করছে না। তারপরেও তাদেরকে আরও কাজ করতে হবে। আমি নিশ্চিত যে তারা আরও কাজ করবে। সময় পেলে আস্তে আস্তে মিডিয়াটাও আরও সক্রিয় হবে। প্রথমত বিষয়টি হচ্ছে আমাদের আরও ধৈর্য ধরতে হবে। এই ১৬ বছরের জঞ্জাল ১৬ দিনে মিটবে না, ১৬ মাসেও যদি আমরা মেটাতে পারি সেটা অবশ্যই একটি ভালো বিষয় হবে। অনেক সমস্যা হয়েছে, বুরোক্রেসির মধ্যে সমস্যা, পুলিশের মধ্যে সমস্যা। সবদিকেই সমস্যা। তো এগুলোকে সমাধানে একটু সময় দিতে হবে। এই সরকারকে সময় দিতে হবে। আমরা যদি অধৈর্য হয়ে যাই, তাহলে অবশ্যই এটা ঠিক হবে না। এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছি।' অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী যে সরকার যখন থাকে তার সঙ্গে কাজ করে। এর অর্থ এই না যে সবাই স্বৈরাচারকে সহায়তা করেন। স্বৈরাচার হোক আর যাই হোক, দৈনন্দিন কাজতো তাদের করে যেতে হবে। সেই কাজ তারা করেছে। কিছু ভালো করেছে। কিছু খারাপ করেছে। কিন্তু এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। সবাইকে এভাবে সিল দিয়ে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, এটা ঠিক নয়। অবশ্যই যারা দোষী তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। আতঙ্ক সৃষ্টি করলে এই প্রশাসনও কাজ করবে না। কেউ কাজ করবে না। সবাই ভীত থাকবে। যেমন পুলিশের মধ্যে এমন একটি সমস্যা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একটি বিশাল ট্রমা কাজ করছে। কাজেই এই ট্রমা যদি বিরাজ করে তাহলে হবে না। তাদের এই ট্রমা থেকে বের করে আনতে হবে। এজন্য একটু সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। ইনশাআলস্নাহ এই সরকার আস্তে আস্তে সবকিছু সামাল দিয়ে উঠবে।