বানভাসিদের নতুন লড়াই
বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের হাহাকারের মধ্যেই চিকিৎসাসেবার ভয়াবহ সংকট বানভাসি মানুষকে মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে। এর সঙ্গে চুরি-ডাকাতি-লুটপাটের হিড়িক 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়িয়েছে
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সাখাওয়াত হোসেন
আকস্মিক ধেয়ে আসা বানের পানিতে হাবুডুবু খেয়ে অর্ধকোটি মানুষ প্রাণে বাঁচলেও তাদের নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। বরং পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে পালস্না দিয়ে জীবন-সংগ্রাম যেন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের হাহাকারের মধ্যেই চিকিৎসাসেবার ভয়াবহ সংকট বানভাসি মানুষকে মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে। এর সঙ্গে চুরি-ডাকাতি-লুটপাটের হিড়িক 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বন্যাকবলিত দুর্গম এলাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার মানুষকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় লক্ষ্ণীপুর ও নোয়াখালীর বেশকিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার দুর্গম এলাকায় ত্রাণের হাহাকার দেখা দিয়েছে। অথচ নৌযান সংকট এবং ত্রাণসামগ্রী লুটপাটের ভয়ে কেউ সেখানে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দুর্গম এলাকায় যেতে গিয়ে এরই মধ্যে কেউ কেউ দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে যেতে প্রায় কেউই সাহস পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে দুর্গম এলাকার পানিবন্দি মানুষও দূরে কোথাও ত্রাণ আনতে যেতেও মারাত্মক ভয় পাচ্ছে। কেননা সেখানকার বাড়িঘরে প্রায় চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। এমনকি দিনে-দুপুরেও পুরুষশূন্য বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে সেখানকার মানুষ অনাহারে-অর্ধানাহারে থেকেও ত্রাণের জন্য ছোটাছুটি না করে সংঘবদ্ধভাবে বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নোয়াখালীর অল্প কিছু এলাকাতে খুবই ধীরগতিতে পানি কমলেও এখনো পথঘাট তলিয়ে আছে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে থাকায় এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতভর বজ্রসহ ভারী বর্ষণে পানি আরও ছয় ইঞ্চি বেড়েছে। ফলে সেখানে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে পানিবন্দি ও বানভাসিদের।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে আছে বসতঘর ও সড়ক। নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ১ হাজার ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ১৬ হাজার মানুষ। প্রধান সড়কের আশপাশে সহযোগিতা পেলেও প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। ফলে অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে ত্রাণের জন্য হাহাকার।
এদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় লক্ষ্ণীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
\হহয়েছে। মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার পানি বেড়েছে অন্তত ১ ফুট। পাঁচ উপজেলায় পানিবন্দি আছে ১০ লাখ মানুষ। এতদিন যারা এই পরিস্থিতিতে ঘর ছাড়তে চাননি, তাদের অনেকেই এখন উঠছেন আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা স্বজনদের বাড়িতে। পানিতে তলিয়ে আছে অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
তবে লক্ষ্ণীপুরের জেলা প্রশাসক জানান, প্রত্যেক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার প্রতিটি এলাকাই বিপর্যস্ত, প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানি। পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ১০ লাখ বাসিন্দা। ১৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এসব মানুষের কেউ কেউ খাবার, ওষুধ, স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানিবাহিত নানা রোগ।
আশ্রয়কেন্দ্রে না আসা পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেশি। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর এবং কোথাও গলাপানির নিচে তলিয়ে রয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন প্রসূতি, শিশু এবং বৃদ্ধরা।
বশিকপুরের বাসিন্দা আবদুস শহিদ ও শাহআলম বলেন, গত ১০ দিন ধরে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এর আগে টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৪০টি এলাকা পস্নাবিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য উপজেলা পস্নাবিত হয়। গত কয়েক দিন ধরে ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী ও ডাকাতিয়া নদী হয়ে লক্ষ্ণীপুরে ঢুকে পড়ছে। কোথাও কোথাও প্রায় চার থেকে ছয় ফুট পানিতে ডুবে আছে জনপদ।
দীঘলীর বাসিন্দা ফারুক হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সবকিছু ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কোথাও বের হতে পারছে না বানভাসি মানুষ। রান্না করা যাচ্ছে না। এখনো কোনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা পাওয়া যায়নি। চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি।' পানিতে তলিয়ে আছে অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদ-উজ-জামান বলেন, প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টির কারণে নতুন করে পানি বেড়েছে এক ফুট। এখন বন্যার কোনো উন্নতি নেই। এমনকি পানি নামতে শুরু করলেও এখনই উন্নতির আশা করা যায় না। পানি নামানোর জন্য স্স্নুইসগেট ও খালের ওপর বাঁধগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, বন্যার দুর্যোগ মোকাবিলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণ বিতরণে যেন কোনো সমন্বয়হীনতা না ঘটে, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। পানিবন্দি রয়েছে অন্তত ১০ লাখ বাসিন্দা। প্রতিদিন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ রয়েছে। সঠিকভাবে বণ্টন করতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।
ফেনী পৌরসভা ও সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পানি নামছে খুবই ধীরগতিতে। শহরের পেট্রোবাংলা, আরামবাগসহ কিছু এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে থাকায় বাসিন্দারা বিপাকে রয়েছেন। উপজেলার মোটবী, ফাজিলপুর, ছনুয়া, লেমুয়া ও ফরহাদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সড়কে ও বাড়িতে পানি রয়েছে।
ফেনী পৌর এলাকার বাসিন্দা নজির আহমদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। এখনো বাসায় পানি থাকায় ফিরতে পারছেন না।
ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর, ঘোপাল ও রাধানগর ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে ডুবে রয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি থেকেও পানি নামেনি। উপজেলার পাঠান নগর ইউনিয়নের গথিয়া সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ছুট্টি মিয়া বলেন, তারা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন।
দাগনভূঞা উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার কিছু অংশের গ্রামীণ সড়ক ও বাড়ি থেকে পানি পুরোপুরি নামেনি। উপজেলার খুশীপুর গ্রামের মনির আহমদ বলেন, তিনি আজ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন। তবে ঘরের ভেতর থেকে পানি কমলেও উঠানে ১ ফুট পানি।
সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, আমিরাবাদ, মঙ্গলকান্দি, মতিগঞ্জ, সদর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রেও রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টারে করে ৫৬ হাজার ৫০০টি খাবারের প্যাকেট বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। এর বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যার বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যেই কুমিলস্নাজুড়ে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ত্রাণ বিতরণের নামে অনেক জায়গায় ডাকাতি করা হচ্ছে! উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজেদের সম্পদ রক্ষায় এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। মসজিদের মাইকে রাতের বেলায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এমন অবস্থায় প্রকৃত ত্রাণ বিতরণকারীরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। কোথাও কোথাও তাদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। তবে পুলিশ বলছে, দুর্গম এলাকাগুলোতে অনেক 'সুযোগসন্ধানী' বন্যা পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতির সত্যতা মিলছে না। যেসব জায়গায় ডাকাতি হচ্ছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জিরুইন গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, 'গত তিন দিন ধরে আমরা রাতের বেলায় পাহারা দিচ্ছি। শুনছি আশপাশের এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে। তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবেই এ কাজ করছি। রোববার রাত ২টার দিকে খবর পাই, একদল লোক আমাদের এলাকার দিকে আসছে। আমরা তখন জোট বেঁধে রাস্তায় নামি। তখন মসজিদের মাইকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রতি রাতেই বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে নাকি ডাকাতদল সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।'
বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল গ্রামের গৃহবধূ শারমিন সুলতানা বলেন, 'এক দিন আগে আমার চাচা শ্বশুরের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। বন্যায় আমাদের বাড়িতে কোমরসমান পানি উঠলেও আমরা বাড়ি ছেড়ে যাইনি। এখন ভয়ে আছি, ডাকাতদল যদি হানা দেয়।'
এদিকে ডাকাত আতঙ্কের বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার কুমিলস্নায় বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শনে আসা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এমন মহাবিপদের সময় যদি এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেহেতু পুরো এলাকা বন্যাকবলিত। সব জায়গায় সহজে যাওয়া যায় না। পুলিশ জানলেও যেতে অনেক সময় লাগে, তাই পুলিশের পাশাপাশি জনগণকেও ঐক্যবদ্ধভাবে এগুলো প্রতিরোধ করতে হবে।'
একই কথা বলেছেন কুমিলস্নার পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে এ রকম খবর আমরা পাচ্ছি। পুরো এলাকা বন্যাকবলিত। আমি দুদিন আগে ত্রাণ বিতরণে গিয়ে দেখেছি, অনেক এলাকা খুবই দুর্গম। এসব এলাকায় দিনের আলোতেই যাওয়া যায় না। রাতের বেলায় যদি এসব জায়গায় ডাকাত আতঙ্ক শোনা যায়, তা হলে তো সেখানে দ্রম্নত পৌঁছানো সম্ভব না। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় যাওয়ার পথে ত্রাণসামগ্রী লুটের ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, বন্যার্তদের দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ত্রাণ নিয়ে নোয়াখালীর কবিরহাটে যান। কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীদের ত্রাণের গাড়ি দলবল নিয়ে আটকে দেন এক স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ক্যাডাররা। পরে ৬০০ প্যাকেট ত্রাণ লুট করে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে লুট হওয়া ত্রাণ উদ্ধার করে ছাত্রদের ফিরিয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার বিকালে সুন্দলপুর ইউনিয়নের কালামুন্সি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মো. সৌরভ (১৮) নামে একজনকে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয়রা।
শিক্ষার্থী তাসরিফুর রহমান নিহাদ বলেন, 'ত্রাণ লুটে বাধা দেওয়ায় হামলাকারীরা মো. মাঈন উদ্দিন আকাশ (১৬) নামে এক ছাত্রকে কুপিয়ে ও নিহাদ (১৬) নামে আরেক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করেছে। পরে সেনাবাহিনী-পুলিশ আমাদের অভিযোগ শুনে ত্রাণগুলো উদ্ধার করে দেয়। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।'
এদিকে দুর্গত এলাকায় নতুন বিপদ পানিবাহিত রোগবালাই। বিশুদ্ধ পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে পানিবন্দি মানুষ এখন চর্মরোগ, ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাবারের পাশাপাশি এখন ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ভাবিয়ে তুলছে তাদের। অন্যদিকে আছে সাপে কাটা, বিদু্যৎস্পৃষ্ট হওয়া কিংবা কাটা-ছেঁড়ায় চিকিৎসা নিয়ে দুর্ভোগ।
কুমিলস্নার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত রোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সব এলাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তারা গাদাগাদি করে এক জায়গায় অনেকেই থাকেন, যে কারণে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বন্যাপরবর্তী সময়ে রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে পারে।