শেখ হাসিনার নামে আরও তিন হত্যা মামলা

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নামে আরও তিন হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ডেমরার সানারপাড়ে মিরাজ হোসেন, মোহাম্মদপুরের বছিলায় বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশনের মেশিন অপারেটর মনসুর মিয়া ও যাত্রাবাড়ীর কাজলায় পরিবহণ শ্রমিক দুলাল ওরফে সেলিম নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। এ ছাড়া সোমবার রাতে রাজশাহীর বাঘা থানায় আরেকটি অপহরণ মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর-রশীদকে আসামি করা হয়েছে। জানা গেছে, ডেমরার সানারপাড়ে মিরাজ হোসেনকে হত্যার অভিযোগে ৯২ জনকে আসামি করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আদালতে মামলা করেন বাদী খোরশেদ আলম মিয়া। আদালত ডেমরা থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ মামলায় উলেস্নখযোগ্য অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর-রশীদ। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে দায়ের করা মনসুর মিয়া হত্যায় ২২ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই আয়নাল হক। আদালত এই অভিযোগটি মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এই মামলায় উলেস্নখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলস্নাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর-রশীদ। মনসুর হত্যা মামলার অভিযোগে উলেস্নখ করা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ এলাকায় মাদ্রাসা থেকে সন্তানকে আনতে যাচ্ছিলেন মনসুর মিয়া। পথে পুলিশ ওর্ যাবের গুলিতে বিদ্ধ হন তিনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মিরাজ হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মিরাজ। ডেমরার সানারপাড় মেন রোডে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওর্ যাবের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, পেশাজীবী, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগের কয়েকশ' সদস্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও আক্রমণ করে। তারা গুলি চালাতে থাকে। এতে মিরাজসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিরাজকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় 'ঠিকানা পরিবহণের' চালকের সহকারী দুলাল ওরফে সেলিম নিহতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের নামে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে দুলালের ভাই মোস্তফা কামাল এই আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন। মামলার বাদী মোস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ৩ আগস্ট কাজলা এলাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে মাথায় গুলি লেগে মারা যান ভিকটিম দুলাল। বাঘায় অপহরণ মামলা রাজশাহী অফিস জানায়, বাঘা উপজেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তার বাবা শামসুদ্দীনসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাকে অপহরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে বাঘা থানায় মামলাটি দায়ের করেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন আহম্মেদ শামীম সরকার। বাঘা থানার ওসি আবু সিদ্দিক জানান, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমকে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলায় ২৪ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০ জনকে। তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পিতা শামসুদ্দীন, শাহরিয়ারের পিএস সিরাজুল ইসলাম ও জাকির হোসেন, চারঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, চারঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র একরামুল হক, বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তার আলী, বাঘা উপজেলা জাতীয় পর্টির সভাপতি মহিদুল ইসলাম, বাঘা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন সরকার প্রমুখ। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুকুমে অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০২৩ সালের ২১ মে বেলা দুইটার দিকে বাঘা নতুন বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকান থেকে ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে ও চোখমুখ বেঁধে তুলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। পরদিন তাকে বৈদু্যতিক শক দেওয়া হয় এবং পায়ে রিভলবার ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। তার পায়ের তিনটি নখ উপড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। ২৮ মে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঢাকার আদালতে তাকে চালান দেওয়া হয়।