মাইকেল চাকমা 'আয়নাঘর' থেকে ফিরে দিলেন ৮ দফা

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ছাত্র-জনতর গণ-অভু্যত্থানে জুলাই-আগস্টে নিহত সব শহীদের নাম প্রকাশ ও হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক বিচার নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আয়না ঘরে বন্দি থেকে দলের সংগঠক মাইকেল চাকমা দিলেন ৮ দফা দাবি। এ সময় গোপন বন্দিশালা 'আয়না ঘর' থেকে যাদের এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি তাদের অতিদ্রম্নত মুক্তির দাবি জানান তিনি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সংগঠক মাইকেল চাকমা এসব কথা জানান। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি সুনয়ন চাকমা, ইউপিডিএফ সদস্য থুইখোচিং মারমা। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছিল, যেটি 'আয়নাঘর' নামে পরিচিত। পরে ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ছয় আগস্ট তাকে চট্টগ্রামের একটি সড়কের ধারে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পর ঢাকার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মাইকেল চাকমা এসব তথ্য দেন। আয়না ঘর সম্পর্কে তিনি বলেন, আয়না ঘরে অমানবিকভাবে আটকে রাখা হতো। হিটলার যেভাবে তার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে রাখত, আয়না ঘর ধরে নিতে পারেন ঠিক তেমন একটি জায়গা। যেখানে মানুষকে তার সব মানবাধিকার লঙ্ঘন করে রাখা হতো। মাইকেল চাকমা জানান, ইউপিডিএফ এবং তাদের সমর্থকদের ২৯ সদস্য বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। জামিনে মুক্তির পর জেলগেটে ইউপিডিএফের কতজন কর্মী ও সমর্থককে পুনঃগ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে তিনবার, একজনকে দুবার এবং একজনকে চারবার পুনঃগ্রেপ্তার করা হয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) দলের সংগঠক মাইকেল চাকমা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গণঅভু্যত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। দেশের মানুষ এখন মুক্ত হাওয়ায় প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এখনো স্বাধীনতার সেই স্বাদ পায়নি। পাহাড়ে এখনো পরিবর্তনের হাওয়া পৌঁছেনি। সমতলে অন্যায়ভাবে আটক রাজবন্দিরা মুক্তি পেতে শুরু করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বন্দি ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে এখনো ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এ বন্দিদের অনেকে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিনাবিচারে কারাগারে রয়েছেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশে প্রকৃত অর্থবহ সংস্কার সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুক্তি না দিয়ে সমতলের জনগণও প্রকৃত মুক্তি পেতে পারে না। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কারে ইউপিডিএফের ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। তাদের অন্যতম দাবি হলো- নির্দলীয়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। বান্দরবানে চলমান কেএনএফ-বিরোধী অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীকে নিশানা করে জাতি-নিধন অভিযান বন্ধ করতে হবে। শিশু ও নারীসহ আটককৃত বমদের মুক্তি দিতে হবে। খাগড়াছড়ির রামগড়ে গৃহবধূকে ধর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার এবং রাঙামাটি ও বান্দরবানে ধর্ষণ প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অপারেশন উত্তরণ বাতিলপূর্বক সেনাশাসন প্রত্যাহার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল করতে হবে। এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পরিপূর্ণ নয়। আমরা অবশ্যই এর পরিবর্তন চাই।