ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আর জি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবি নিয়ে রাজ্য সচিবালয় 'নবান্ন' ভবন অভিমুখে পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে কলকাতা।
মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক সংগঠনের এ অভিযানে বাধা দিয়েছে পুলিশ। ফলে দুই পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের নবান্ন অভিযান রুখতে টিয়ার গ্যাস ও জল কামান ছুড়েছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের দিকে পাল্টা ইট পাটকেল ছুড়েছে।
ভারতের পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, রাজ্যের রাজধানী কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাজ্যে বিক্ষোভ-মিছিলের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। রাজ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে বলে সোমবার অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিক্ষোভকারীদের পদযাত্রা ঠেকাতে রাজ্য পুলিশ সচিবালয় নবান্নের চারপাশে দুর্গ গড়ে তোলে। যে কোনো দিক থেকে সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ পদযাত্রা ঠেকাতে ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভের ওপর নজর রাখতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে ব্যারিকেডও দেওয়া হয় রাস্তায়।
এর মধ্যেও মঙ্গলবার সকালের দিকে একদল বিক্ষোভকারী কলেজ চত্বরে জড়ো হয়ে নবান্নের দিকে পদযাত্রা শুরু করে। এ সময় আর জি কর হাসপাতালে ভয়াবহ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে স্স্নোগান দেয় তারা।
শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ডাক দেওয়া বিক্ষোভে যোগ দেয় রাজ্যের কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক ফোরাম। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন রাস্তায় বসানো ব্যারিকেড সরিয়ে
ফেলার চেষ্টা করছেন।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এ বিক্ষোভের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অভিযুক্ত করেছে। তবে বিক্ষোভের আয়োজকরা বলছেন, এ বিক্ষোভে ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, বিক্ষোভের আগে চার ছাত্র নেতাকে মধ্যরাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের কিছু হলে মমতাকে জবাবদিহি করতে হবে।
বিধানসভার বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, বহু জায়গা থেকে অত্যাচারের খবর আসছে। তিনি রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমনপীড়ন না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায়, বুধবার রাজ্য অচল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের বসানো ব্যারিকেড ভেঙে নবান্ন অভিমুখে অগ্রসর হয় বিক্ষোভকারীরা। ব্যারিকেডের ওপরে উঠে স্স্নোগান দিতে দেখা যায় তাদের। বিক্ষোভকারীরা 'দাবি এক, দফা এক, মমতার পদত্যাগ'সহ বিভিন্ন ধরনের স্স্নোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে কালো পোস্টারেও স্স্নোগান লেখা। কারও কারও হাতে জাতীয় পতাকা। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আর জি কর ঘটনার প্রতিবাদে তারা নবান্নে যেতে চান। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া সেতুতে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে এগুনোর সময় পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জও করা হয়।
কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের (পিটিএস) কাছেও কয়েকশ মানুষ মমতার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগুনোর চেষ্টা করলে তাদের ওপর জলকামান ছুড়েছে পুলিশ।
ওদিকে, সাঁতরাগাছিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছে বিক্ষোভকারীরা। ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। সহিংসতার আশঙ্কায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীদের একাংশ নবান্নের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়ার পর হাওড়ার শরৎ চ্যাটার্জি রোডে তাদের আটক করেছে পুলিশ। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। প্রিন্সেপ ঘাটেও বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। বেশ কয়েক জনের উপরে লাঠিচার্জও করা হয়েছে।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজে ৩১ বছরের এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন। এরপর থেকেই বিক্ষোভ চলে কলকাতাজুড়ে। মঙ্গলবার আর জি করের ওই ঘটনার বিচার চেয়ে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ডেকেছিল আন্দোলনকারীরা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় 'নবান্ন' ভবন থেকে রাজ্যের সব দাপ্তরিক কাজ পরিচালিত হয়। নবান্নতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের কার্যালয়ও রয়েছে।