ইনু-মেনন রিমান্ডে আরাফাত গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মোহাম্মদ এ আরাফাত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ব্যবসায়ী হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ৭ দিন ও রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে আবারও ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এদিকে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত গ্রেপ্তার হয়েছেন। মঙ্গলবার তাকে রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনুকে সোমবার ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মঙ্গলবার ইনুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোরাদ খান। শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইনুকে আদালতে আনার আগে হাতে ও পকেটে ডিম নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। গত ১৯ জুলাই বিকাল ৫টায় নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। ওই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। নিহত ব্যবসায়ীর ভাগ্নিজামাই আব্দুর রহমান বাদী হয়ে ২১ অগাস্ট মামলাটি দায়ের করেন। হাসানুল হক ইনু ২০১৪-১৯ মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেও তিনি হেরে যান। এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে আবারও ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক তাকে আদালতে হাজির করে গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে ২২ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৩ আগট রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মামলার অভিযোগে বলা হয়- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট রুবেলসহ কয়েকশ ছাত্র-জনতা সকাল ১১টায় আদাবর থানাধীন রিংরোড এলাকায় প্রতিবাদী মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মী গুলি চালায়। এতে রুবেল গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট আদাবর থানায় মামলাটি করেন রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম। আরাফাত গ্রেপ্তার : এদিকে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত গ্রেপ্তার হয়েছেন। মঙ্গলবার তাকে রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকালে ডিএমপির এক সূত্র আরাফাতকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করে। সূত্র জানায়, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে কোন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। মোহাম্মদ আলী আরাফাত ঢাকার একটি আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তিনি কোথায় আছেন, সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আরাফাত ঢাকার ফরাসি দূতাবাসে লুকিয়ে রয়েছেন- ১৪ আগস্ট এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় ঢাকার ফরাসি দূতাবাস। ফ্রান্স দূতাবাস জানায়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ফরাসি দূতাবাসে লুকিয়ে আছেন, এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এদিকে ১২ আগস্ট মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তার স্ত্রী ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করার আদেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়। মোহাম্মদ আলী আরাফাত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের হয়ে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন। টকশোতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে কথা বলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হন তিনি। গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। পরে জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।