এনআইডি কার্যক্রমে ভিনদেশিদের ঠেকাতে দুই 'বিশেষ কমিটি'
প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) কার্যক্রমে ভিনদেশিদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে দুটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একটি কমিটি কাজ করবে উপজেলা পর্যায়ে, অন্যটি মেট্রোপলিটন এলাকায়।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেউ ভোটার হতে এলে দেশের নাগরিকদের জন্য শর্তপূরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের আবেদন পাঠানো হবে বিশেষ কমিটিতে। সেখানে প্রমাণ হলেই কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন এবং এনআইডি পাবেন। ইসির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ কমিটি গঠনের চিঠি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা বিশেষ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব হবেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এ ছাড়া কর্মকর্তা ইনচার্জ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত, অপারেশন) সেকেন্ড, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), হেডম্যান কারবারি (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র কর্তৃক মনোনীত একজন কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান সদস্য হিসেবে থাকবেন।
অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোপলিটন থানা নির্বাচন অফিসের ক্ষেত্রে গঠিত বিশেষ কমিটি আহ্বায়ক করা হয়েছে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে, আর সদস্য সচিব হচ্ছেন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা।
অন্যদের মধ্যে কর্মকর্তা-ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত, অপারেশন) সেকেন্ড কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়) ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সদস্য করা হয়েছে।
বিশেষ কমিটির কার্যপরিধি
১। বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সব জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অনলাইনে যাচাই করতে। যাচাইকালে নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে-
(ক) ভাইবোনের জাতীয় পরিচয়পত্রে উলিস্নখিত পিতা-মাতার নামের সঙ্গে আবেদনকারীর উলিস্নখিত পিতা-মাতার নামের মিল থাকতে হবে।
(খ) চাচা-ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে।
(গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি-তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
২। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ভোটার হতে ইচ্ছুক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কোথাও 'সচরাচর নিবাসী' হতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে উলিস্নখিত জেলাসমূহের যদি কেউ সচরাচর নিবাসী দাবি করে, তবে সেই দাবির যথার্থতা অনুসন্ধান করতে হবে। শুধু একটি নিবাসের ঠিকানাই এজন্য যথেষ্ট হবে না। নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্ত প্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী চাহিত সব তথ্য প্রদান করতে হবে।
৩। যদি বর্ণিত জেলায় এই সমস্ত ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করে তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সংশ্লিষ্ট দলিলাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে দিতে হবে।
৪। যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নাগরিক সনদপত্রসহ দলিলাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে প্রদান করতে হবে এবং অন্য কোনো সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে তাদের এ সম্পর্কিত প্রমাণাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে সরবরাহ করতে হবে।
৫। তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম-২ এর সঙ্গে এ কার্যক্রমের আওতায় অতিরিক্ত তথ্য ফরম মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্রসহ প্রতিটি কেস উপজেলা-থানা নির্বাচন অফিসারের কাছে জমা দেবেন। উপজেলা, থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আবেদনের সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করে সব কাগজপত্র বিশেষ কমিটির কাছে উপস্থাপন করবেন।
৬। বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম যাচাই বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত দেবেন।
বাছাইকৃত কেসগুলোর বিশেষ কমিটির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা, থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অবহিত করার পর আবেদনকারীদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণপূর্বক নিবন্ধন কেন্দ্রে তাদের আসার জন্য নোটিশ জারি করতে হবে। যাদের কেস গ্রহণ করা হবে না, কী কারণে গ্রহণ করা হলো না, তা নোটিশে লিপিবদ্ধ করে বিশেষ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর করতে হবে। এ ছাড়া নিষ্পত্তির বিষয়টি প্রতিটি বিশেষ তথ্য ফরম (ফরম-২ এর অতিরিক্ত তথ্য)-এর ১৬নং ক্রমিকে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্ত উপজেলা-থানা নির্বাচন কর্মকর্তা লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৭। বিশেষ কমিটি যাদের আবেদন বাতিল করবে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ওই বিষয়ে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি নিয়ে সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
৮। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা মিথ্যাজাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং প্রচলিত অন্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।