সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নামে আরও দুই হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকত ও মাদারীপুরে তাওহীদ সন্নামাত হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দুটি হয়। এসব মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুর সরকারি মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকতের (১৯) মৃতু্যর ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। রোববার রাতে নিহতের বাবা মো. মাহাবুবের রহমান মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর
\হকবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপস্নব কুমার সরকার, তেজগাঁও বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক, মোহাম্মদপুর জোনের সাবেক এডিসি রওশানুল হক সৈকত।
এছাড়া মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল) শহিদুল হক, মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান, মোহাম্মদপুর থানার সাবেক ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তোফাজ্জল হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহরিয়ার আলমকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে উলেস্নখ করা হয়েছে, ১৯ জুলাই বিকালে নূরজাহান রোডের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাহমুদুর রহমান সৈকতকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার সঠিক বিচার চান মামলার বাদী।
অন্যদিকে, আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাদারীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাওহীদ সন্নামাত নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আ'লীগের সভাপতিমন্ডলীয় সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, সাবেক চিফ হুইপ, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সদস্য সদস্য নূর ই আলম লিটন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ অন্তত ৯২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএইচ সালাউদ্দিন। এর আগে রোববার রাতে মামলাটি গ্রহণ করা হয়। মামলার বাদী জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মাদারীপুর শহরের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সালাহউদ্দিন সন্নামাতের ছেলে তাওহীদ সন্নামত যোগ দেয়। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয় তাওহীদ। পরে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এই বিষয় নিয়ে কথা বলতেও ভয় পেতেন তারা। এ ঘটনায় কামরুল হাসান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আ'লীগের সভাপতিমন্ডলীয় সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, সাবেক চিফ হুইপ, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সদস্য নূর ই আলম লিটন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবাহান গোলাপ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ মোলস্না, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ৯২ জনের নাম উলেস্নখ করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় একাধিক নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। এতে অজ্ঞাত আসামি রয়েছে আরও ৫০০ থেকে ৭০০-এর মতো।
জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ও মামলার বাদী কামরুল হাসান সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএইচ সালাউদ্দিন বলেন, কামরুল হাসান নামে এক ব্যক্তি মামলাটি দিলে রোববার রাতে গ্রহণ করা হয়। এতে ৯২ জনের নাম উলেস্নখ করে আরও অজ্ঞাত ৭০০-এর মতো আসামি রয়েছে। এখন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলও অবগত রয়েছে। তবে মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।