বাতিল হচ্ছে জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন দাবি আইনজীবীর

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে যে প্রজ্ঞাপন হয়েছে তা আজ (মঙ্গলবার) প্রত্যাহার হতে পারে বলে দাবি করেছেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শিশির মনির বলেন, 'পহেলা আগস্ট তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮(১) এ ধারা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৫ তারিখে তৎকালীন সরকারের পতন হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতাকে সেনাপ্রধানসহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার ক্ষেত্রেও জামায়াতে ইসলামী গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ কার্যত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বর্তমান সরকার এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিটি একটি স্বাভাবিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তথাপি একটি প্রশ্ন থেকে যায়; যে নিষিদ্ধের আদেশ তারা দিয়েছিলেন তার ভবিষ্যৎ কী হবে।' তিনি আরও বলেন, 'এই বিষয়টি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষে আইনজীবীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু এখানে আইনি বিষয় জড়িত আছে জামায়াত নিযুক্ত আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট সরকারের দপ্তরসমূহে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে 'সিরিজ অব' আলোচনা চালিয়ে যান। কী আইনি পদক্ষেপ নিলে পরে এই জিনিসটি 'সলিউশন' করা সম্ভব- এর অংশ হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে 'রিকুয়েস্ট' করা হয়।' আইনজীবী শিশির বলেন, 'এ রিকুয়েস্টের অংশ হিসেবে তারা আমাদের জানিয়েছেন, সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ড সম্পন্ন হয়েছে। আজকে সরকারি ছুটির দিন; তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা আশা করছি, দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে, এমনকি আগামীকালকের মধ্যেই এই নিষিদ্ধের আদেশটি প্রত্যাহার হবে বলে আমাদের তথ্য মতো- কনফার্ম করেছেন।' তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, যে আইনি পদক্ষেপ আছে, সে আইনি পদক্ষেপ অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী পথ চলতে চায়। আইনজীবী হিসেবে আমাদের কর্মকান্ড হলো সন্ত্রাস দমন আইনের ১৯ ধারা এবং সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে- এটি বাতলিয়ে দেওয়াই আমাদের কাজ। আমরা তা করেছি, আলোচনা হয়েছে, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, আশা করি, আগামীকাল অথবা দ্রম্নততম সময়ের মধ্যেই তারা আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে অতীতের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করবেন।' কোনো 'গ্রাউন্ডে' প্রত্যাহার চেয়েছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে শিশির মনির বলেন, 'বাতিল করেছিল যে কয়টা কারণে, তার মধ্যে সর্বশেষ কারণ ছিল যে তাদের কাছে, তৎকালীন সরকারের কাছে, নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে যে জামায়াতে ইসলামী এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। অথচ কী ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, কী সেই সন্ত্রাস, কী সেই অ্যাকটিভিটি- এই মর্মে কোনো ব্যাখ্যা তৎকালীন সরকার দেয়নি। আমরা বর্তমান সরকারকে এটা বলেছি যে, আপনাদের কাছে যদি কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে, কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে তাও আপনারা আমাদের দেখাতে পারেন। বস্তুত অর্থে এটি একটি কথার কথা, শুধুমাত্র একটি গণঅভু্যত্থানের কর্মকান্ডকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল মর্মে আমরা মনে করি এবং বর্তমান সরকার, প্রশাসন- সবাই এটা মনে করে।' বিষয়টি নিয়ে আদালতে না যাওয়ার ব্যাখ্যায় শিশির মনির বলেন, 'সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বিধান আছে। ১৯ ধারা অনুযায়ী আদালতে আসার আগে সংশ্লিষ্ট সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন। 'যেহেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেজন্য আমাদের সকল পদক্ষেপ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী নিতে হবে। সরাসরি আদালতে আসার প্রশ্ন নাই। এ জন্যই এ কাজ যারা নিষিদ্ধ করেছে- তারাই এটি প্রত্যাহার করতে পারেন, এ ক্ষমতা আছে। এ জন্যই আমরা আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে সরকারকে সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে বাতিল করার জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।' এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ সিদ্ধান্ত ছিল কি না, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, 'এটি স্পষ্ট, যে গ্রাউন্ড তারা দিয়েছে- সে গ্রাউন্ড যেহেতু একজিট করে না, এ গ্রাউন্ড কিন্তু বাস্তবে নাই; তাহলে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর কী কার্যকারণ থাকতে পারে? শুধুমাত্র অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়া ছাড়া আর কোনো যৌক্তিক কারণ যৌক্তিকভাবে দাঁড় করানোর কোনো স্কোপ আইনগতভাবে নেই।'