শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
'ড. ইউনূসের ভাষণে ধোঁয়াশা কাটেনি'

যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চাই :ফখরুল

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা

যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আমাদের এখন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। এই সরকার এসেছে, এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাঁদের দিতে হবে। এই কথা আমরা বারবার বলছি, যৌক্তিক সময় অবশ্যই তাদের দিতে চাই। নির্বাচন ছাড়াতো সম্ভব নয়, নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে তাহলে সেটা কখনই জনগণ মেনে নেবে না। সে জন্য আমরা অপেক্ষা করছি, জনগণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে।'

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদের ৯ম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রোডম্যাপ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু তুলে ধরেননি। আশায় ছিলাম।'

প্রধান উপদেষ্টার মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের প্রায় ৬০ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। পত্রিকায় দেখলাম প্রধান উপদেষ্টার মামলা ওঠানো হয়েছে। আরেকজন উপদেষ্টার মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের ১ লাখ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে। আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটি রোডম্যাপ দেবে, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার মুখ থেকে সেটা শুনতে পাইনি।'

রোববার আনসারদের সচিবালয় ঘেরাও ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, 'গতকাল (রোববার) সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের পোশাক ব্যবহার করে একটা গোলযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ছাত্ররা সেটা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অশনিসংকেত। অর্থাৎ যারা পরাজিত শক্তি তারা চায়

বিভিন্নভাবে এই বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাব এই বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গতকাল (রোববার) সচিবালয়ে আনসারদের ঘেরাও কর্মসূচি ও পরে গোলযোগ তৈরির চেষ্টা এটা অশনিসংকেত। যারা পরাজিত তারা এখনো চক্রান্ত করছে, বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'যখন ফ্যাসিবাদ ছিল, তখন তো দাঁড়াবার কথাও চিন্তা করেননি। সময় দিন নতুন সরকারকে, তারা নিশ্চয় বিষয়টি দেখবে। সচিবালয় ঘেরাও করে কোনো কিছু আদায়ের চেষ্টা করবেন না, জনগণ ভালো চোখে দেখবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশে সকল পরিবর্তন এনেছে ছাত্ররা। আমি শিক্ষক হিসেবে আহ্বান জানাতে চাই, অযথা বলপ্রয়োগ করে কোনো কিছু করবেন না।'

তিনি বলেন, 'প্রশাসনে এখনো সেই সমস্ত ব্যক্তিকে দেখছি, যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে মদদ দিয়েছে, হত্যায় সহযোগিতা করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ মানুষকে প্রশাসন থেকে সরিয়ে দিতে হবে। অনতিবিলম্বে দেশপ্রেমিক মানুষকে নিয়ে সরকার চালাতে হবে।'

হাসিনাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করুন

এদিকে, ভারত সরকারের উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেছেন, ভারত যদি বন্ধু রাষ্ট্র হয়, তবে মোদি সরকারের কাছে অনুরোধ করব অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করুন।

সোমবার প্রেস ক্লাবের সামনে প্রবাস অনলাইন বিএনপি গ্রম্নপের উদ্যোগে শেখ হাসিনার শাস্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা বাংলাদেশের নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তার জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তির সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

শেখ হাসিনার উদ্দেশে ফারুক বলেন, এত সুখ আপনার থাকবে না। যত শান্তিতেই ভারতে থাকেন না কেন বাংলাদেশের জনগণ বাংলার মাটিতে আপনাকে আনবে এবং বিচার করবে। আপনি বিএনপির অসংখ্য নেতাকে গুম করেছেন। আপনার বাহিনী দিয়ে দেশের অসংখ্য জনগণ, ছাত্রদের হত্যা করেছেন। মামলা সবে শুরু হয়েছে। আরও মামলা হবে। বাংলার মাটিতে আপনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

আনসারদের উদ্দেশে জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, গত ১৬ বছরে আপনাদের দাবি কোথায় ছিল? ডক্টর ইউনূস ক্ষমতায় বসার পরে আপনাদের দাবির মধ্য থেকে গুলি আসে কেন? কারা এরা? আপনাদের গায়ে নতুন জামা কেন? কারা অর্থ দিয়েছে এসব তদন্তে বের হবে।

তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসেছে মাত্র ২১ দিন। এর মধ্যে ঢাকা শহরটাই যেন দাবির ভূমি পরিণত হয়েছে। ডক্টর ইউনূস সাহেব মাত্র বসেছেন। এখনো শেখ হাসিনার জঞ্জাল মুক্ত করতে পারেননি। কালপ্রিট ইউপি চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করার সময় পাচ্ছেন না। একটু সময় তো তাকে দিতে হবে।

ডক্টর ইউনূসের কাছে দাবি জানিয়ে বিরোধী দলের সাবেক এ চিফ হুইপ বলেন, আপনার ওপর যে অন্যায় হয়েছে এগুলো আপনি প্রতিশোধ নেবেন না জানি, তবে আমরা ১৬ বছরে আট বছর জেল খেটেছি। হারুন, বিপস্নব, বেনজীর, আসাদের মতো পুলিশ অফিসার আমার নেতাকর্মীদের বাসায় ঢুকে তাদের স্ত্রীদের গায়ে হাত তুলে গ্রেপ্তার করেছে। এদের আপনাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামান ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা নেছারুল হক।

'ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো প্রশাসনে রয়েছে'

এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিতে পারছি। কিন্তু প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।

যারা হাতি হওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। আমরা নানাভাবে প্রতিবিপস্নবের আশঙ্কায় আছি। তারা সব জায়গায় ঘাপটি মেরে আছে।

সোমবার সকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সামনে বন্যাদুর্গতদের সার্বিক সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বন্যাদুর্গত এলাকায় সার্বিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব)।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আনসার বাহিনীর কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে আলোচনা করতে পারেন। তাদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখার সাহস পেল কোথায়? আসলে বর্তমান যে অন্তর্র্বর্তী সরকার রয়েছে তাকে অস্থির করার জন্য এসব পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। আজকে যে সব সচিবরা রয়েছেন তারা কারা? তারা তো শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ করা। যারা এসপি রয়েছেন তারা তো কম অত্যাচার করেননি। ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। কারণ দোসররা এখনো সুযোগের অপেক্ষায় আছে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে প্রতিবিপস্নব করার জন্য।

তিনি বলেন, 'অন্তর্র্বর্তী সরকারের উচিত হবে যারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেছেন তাদের সরিয়ে দক্ষদের পদায়ন করা। পরিকল্পিতভাবে এসব বিলম্ব করা হচ্ছে। তা না হলে গতকাল রোববারও আনসাররা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর বুট দিয়ে লাথি দিয়ে শরীর থেতলে দিয়েছে।

বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের জন্য অ্যাবকে ধন্যবাদ জানান রিজভী।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং অ্যাব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বিএনপির সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা।

বিএনপির সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠক

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।

সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়।

বিএনপি মহাসচিবের সাথে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ ও তাবিথ আউয়াল উপস্থিত ছিলেন।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কত তাড়াতাড়ি আমরা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি সেই আলোচনাও হয়েছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরেও যে সম্পর্কগুলো আছে সেগুলোকে আরও কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইউকে যে টাকাগুলো পাচার হয়েছে, সেই টাকাগুলো ফেরত আনার ব্যাপারে ইউকের ভূমিকা ও সহযোগিতার কথা আলোচনা হয়েছে। ইউকের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জবাবদিহি একটি সরকার বাংলাদেশ আসার ব্যাপারটি তারা (যুক্তরাজ্য) জানতে চেয়েছে। কত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিষয়টি তারা জানতে চেয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে পুরো ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা হতাহত হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সাথে ১৫/১৬ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, হত্যা, মিথ্যা মামলা সে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারের বিষয়টাও আলোচনা এসেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ডেলিগেশন আসছে এই বিষয়টা আমরা কিভাবে দেখছি তা তারা জানতে চেয়েছে, দেশের ভেতরে বিচারের বিষয়টা তারা জানতে চেয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে