সচিবালয় এলাকায় সংঘর্ষ
চার মামলা, ৩৯০ আনসার কারাগারে
পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণে': আইএসপিআর ঢামেকে আহতদের দেখতে তিন উপদেষ্টা ও জামায়াত আমির
প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগে ঢাকার চারটি থানায় আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার ঢাকার শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও বিমানবন্দর থানায় মোট চারটি মামলা দায়ের হয়। এখানে নাম উলেস্নখ করে আসামি করা হয়েছে ৪২৬ জনকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা হিসেবে কয়েক হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
এর মধ্যে শাহবাগ থানায় ২০৮ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং দুই/তিন হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে; পল্টন থানায় ১১৪ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং তিন/চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে, পল্টন থানায় ৯৮ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং দুই/তিন হাজার অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে এবং বিমানবন্দর থানায় ছয়জনের নাম উলেস্নখ করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দলবদ্ধ হয়ে অবরুদ্ধ ও সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
৩৯০ জন কারাগারে: এদিকে, পৃথক চারটি মামলায় গ্রেপ্তার আনসার বাহিনীর ৩৯০ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সোমবার এ আদেশ দেন।
এর আগে রাজধানীর শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা পৃথক চারটি মামলায় আনসার সদস্যদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। অপরদিকে আনসার সদস্যদের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাদের প্রত্যেককে কারাগারে
\হপাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদের আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় ১৯১ আনসার সদস্য, রমনা থানার মামলায় ৯৮, পল্টন থানার মামলায় ৯৫ ও বিমানবন্দর থানার মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, ৮ থেকে ১০ হাজার আনসার সদস্য অনুমতি না নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। একই সঙ্গে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা অমান্য করে কর্মসূচি প্রত্যাহার না করে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করেন। সচিবালয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারি কাজে বাধা দেন। একই সঙ্গে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, আসামিরা বেআইনি সমাবেশ করেছেন। লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি ও সচিবালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন।
নিজেদের চাকরি জাতীয়করণসহ কয়েকটি দাবিতে আনসার সদস্যরা কয়েক দিন ধরে ঢাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। রোববার তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান। ঘেরাও করে রাখায় সচিবালয় থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারছিলেন না। দিনভর রাজধানীতে ছিল ব্যাপক যানজট।
সচিবালয়ে আনসার সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুলস্নাহসহ অনেককে আটকে রেখেছেন, রাতে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হাসনাত আবদুলস্নাহসহ অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদারও আহত হন।
এর আগে গতকাল বিকালেই আনসারদের দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় আনসার সদস্যদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু বিকাল পাঁচটার দিকে আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে তাদের চাকরি জাতীয়করণ করতে চাপ দেন।
পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণে': আইএসপিআর
এদিকে, আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সবকটি গেট এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সেনাবাহিনী। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, রোববার আনুমানিক ১০ হাজার আনসার সদস্য একত্রিত হয়ে সচিবালয় ঘেরাও করে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সাতজন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের অন্য কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'উত্তেজিত আনসার সদস্যদের শান্ত করার জন্য বিকালে মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি সচিবালয়ে আসেন এবং আনসার সদস্যদের সব দাবি মেনে নেন। এরপরও উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা ত্যাগ না করে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং কিছু আনসার সদস্য সচিবালয়ের তিন নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় উত্তেজিত আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সচিবালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর টহলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠি দিয়েও আঘাত করে। এ সময় ছয়জন সেনাসদস্য আহত হন এবং তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।'
আইএসপিআর বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে মোতায়েন করা সেনাসদস্যরা 'ধৈর্য' ধারণ করে। উত্তেজিত আনসাররা নিবৃত্ত না হলে আকাশের দিকে ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে সচিবালয় এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এরপর সচিবালয়ে অবরুদ্ধ অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সাত উপদেষ্টা, আনসারের মহাপরিচালক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর সহায়তায় সচিবালয় এলাকা নিরাপদে ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেখানে মোতায়েন থাকা সেনাসদস্যরা সচিবালয়ে অনুপ্রবেশকারী এবং পরে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা কারা কিছু সংখ্যক আনসার সদস্যকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ কবে মাঠে নামবে, প্রশ্ন সারজিসের
এদিকে, সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সচিবালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা, পুলিশের কাজে ফেরাসহ নানা প্রশ্ন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ছুড়ে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সোমবার দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এসব প্রশ্ন ছুড়ে দেন। একই সঙ্গে রোববার সচিবালয়ের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে লিখেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করতে চাই- পুলিশ কবে পুরোদমে মাঠে নামবে? সচিবালয়ে নিরাপত্তার এই অবস্থা কেন? ছাত্র-জনতাকে কেন যেতে হবে? আমার ভাইদের ওপর গুলি কেন চলল? এই আর্মস আনসার পেল কোথায়?
তিনি লিখেন, বিগত ১ সপ্তাহ ধরে ঢাকার সরকারি ও প্রাইভেটসহ অন্তত ২০টির অধিক হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে আমরা আমাদের আহত ভাইদের দেখেছি। ডাক্তার, রোগী, স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেতর ও বাইরের নানা গল্প জেনেছি। সেগুলো আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে জানাতে চাই। তিনি আমাদের কথাগুলো শুনতে আমাদের ডাকেন।
তিনি আরও লিখেন, আমাদের ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় যাওয়া ট্রাকগুলো কিংবা যে গাড়িগুলোতে ত্রাণ বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যাম্পাসে আসছিল, সেগুলোও ক্যাম্পাসে পৌঁছতে পারছিল না। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার নানা প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে কল-ম্যাসেজ আসছিল ত্রাণের জন্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা, কার্যক্রম ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে যাই। এই দুই বিষয় নিয়ে কথা বলতে যাওয়ার সময় সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ করে আনসারদের আন্দোলন দেখতে পাই আমরা। পরে বিষয়টিও আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানাই। আমরা জানতে পারি, আমাদের পূর্বেই আমাদের অন্য দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে যৌক্তিক সমাধানের আহ্বান জানান।
তিনি আরও লিখেন, পরে আমাদের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ তাদের সঙ্গে কথা বলে তখনই আলোচনার আহ্বান জানায় এবং সাত সদস্যের একটি টিম নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ একাধিকবার আলোচনায় বসে। তাদের অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয় এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে ধৈর্য ধরে যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
সারজিস অভিযোগ করেন, একটা গোষ্ঠী এসব আলোচনা মানতে চাচ্ছিল না। তাদের কথা ও কাজের ধরনই প্রকাশ করছিল, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। না হলে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আলোচনার পরও সচিবালয়ে সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখার যৌক্তিকতা কি? অথচ তখন তাদের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ের ভেতরই ছিল। যখন দেশের দুটি বিভাগে প্রায় ১০টি জেলায় লাখ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত তখন সেখানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা না করে রাষ্ট্রকে এভাবে অস্থিতিশীল করার কারণ কি?
তিনি আরও লিখেন, পরিশেষে দেশের মানুষের উদ্দেশে একটা কথাই বলব। ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচার তো মুখ বুজে অনেক সহ্য করেছেন। এবার রাষ্ট্র গঠনের জন্য অন্তত কয়েক মাস ধৈর্য ধরুন। একটা সিস্টেম কয়েকদিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
তিনি লিখেন, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে পরিবর্তন হোন, পরামর্শ দিন, ধৈর্য ধরুন অতপর প্রশ্ন করুন। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়বই ইনশা আলস্নাহ।
হাসনাত আব্দুলস্নাহর অবস্থা স্থিতিশীল
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তাকে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সোমবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, হাসনাত আব্দুলস্নাহ বর্তমানে হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন আছে। ৪৮ ঘণ্টা ওনাকে অবজার করা হচ্ছে। উনি বর্তমানে স্ট্যাবল আছেন। ওনার শরীরের বাহিরের দিকে কোথাও কোনো কাটা ছেঁড়া আঘাত নেই। উনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। আমাদের চিকিৎসকরা ওনাকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
ঢামেকে আহতদের দেখতে তিন উপদেষ্টা
এদিকে, আনসার সদস্যদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ককে অবরুদ্ধ করার খবরে সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্য ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহসহ অন্যদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিন উপদেষ্টা।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহতদের দেখতে উপদেষ্টারা ঢাকা মেডিকেলে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিনে থাকা সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
আহতদের দেখে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গতকালকের (রোববার) ঘটনায় খুবই ব্যথিত আমরা। আহত সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ আগের চেয়ে ভালো আছে। যারা আনসারের ছদ্মবেশে এসেছিল, তাদের দাবি আদায়ের এজেন্ডা ছিল না, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। লাঠি তাদের স্টকে ছিল। আমরা দেখেছি, কীভাবে তারা ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে।
যে ছাত্ররা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, যারা আমাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ, তাদের রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে মেরেছে। তাদের দাবি ছিল রাত ১০টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন করে জাতীয়করণ করতে হবে। তারা অসম্ভব ও অবাস্তব দাবি তুলেছিল।
এই জাগ্রত ছাত্রসমাজ যারা আন্দোলন করে সৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, তাদের আবারও অপরিসীম ত্যাগের ভূমিকা ছিল। পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে তারা। যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা সফল হবে না। প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যারা সঠিক পথে দাবি আদায়ের আন্দোলন করছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ বিবেচনা করে দেখবেন, ১৭ বছরের বৈষম্য ও শোষণ ১৭ দিনে কি ঠিক করা যায়? ধৈর্য ধরেন, নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি জানান, আমরা জনগণের পক্ষ থেকে এসেছি, কোনো দলের প্রতিনিধি না। সবার স্বার্থ নিশ্চিত হয়- এমনভাবে কাজ করব। তবে সেটা সময় লাগবে। আহত হাসনাতের অবস্থা মোটামুটি ভালো। দুইজন পথচারীও আহত আছে।
বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, মনে হচ্ছে ধান কাটার মৌসুমের মতো দাবি আদায়ের মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রত্যকটি দাবির সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্ট আছে। যেখানে সরকারের ব্যয় বাড়বে। সরকারের রাজস্বতো রাতারাতি বেড়ে যাবে না। কীভাবে দাবি মেটাব, টাকা ছাপতে পারি, তবে টাকা ছাপলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব কিছু হবে।
এই সরকার বানের জলে ভেসে আসেনি। ছাত্র-জনতা রাজপথে রক্ত দিয়ে এই সরকারকে এনেছে। এটা জনপ্রত্যাশার সরকার। তবে আমাদের সময় দিতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ অনেকে।
ঢামেকে জামায়াত আমির
এদিকে, আনসার সদস্যদের হামলায় আহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সোমবার দুপুরে তিনি হাসনাতের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং দ্রম্নত সুস্থতা কামনায় দোয়া করেন।
এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
৯ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি
এদিকে, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রোববার দিনভর সচিবালয় ঘেরাও করে রাখার পর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আনসার সদস্যরা। সচিবালয়ের সামনে দুইপক্ষের এই সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুলস্নাহসহ অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় কয়েকজন আনসার সদস্যও আহত হন। সংঘর্ষের এ ঘটনার পরপরই রাতেই আনসার ও ভিডিপির একজন ডেপুটি কমান্ড্যান্টসহ ৯ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নতুন পদে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আনসার সেকশন-১-এর উপসচিব ফৌজিয়া খান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ডেপুটি কমান্ড্যান্ট মো. নুরুল হাসান ফরিদীকে গাজীপুরের সফিপুর থেকে উপ-পরিচালক (ডিডি) পদমর্যাদায় ব্যাটালিয়নের খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া আট উপ-পরিচালককে তাদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাইফুলস্নাহ রাসেলকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে ঢাকার সদর দপ্তরে (অপারেশন্স) বদলি করা হয়েছে। খুলনা থেকে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে শাহ আহমেদ ফজলে রাব্বিকে, সিলেট থেকে মো. আবদুল আউয়ালকে ময়মনসিংহে, রাজশাহী থেকে কামরুন নাহারকে গাজীপুরের সফিপুরে, ড. মো. সাইফুর রহমানকে ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে, মো. আশরাফুল আলমকে বরিশাল থেকে ঢাকা রেঞ্জে এবং মো. জিয়াউল হাসানকে ঢাকা থেকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। শিগগিরই এই বদলির আদেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উলেস্নখ করা হয়েছে।