শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি

নোয়াখালীতে অবনতি, ফেনীতে উন্নতি

প্রান্তিক অঞ্চলে পৌঁছায়নি ত্রাণ অধিকাংশ জেলায় সুপেয় পানির সংকট মৃতু্য বেড়ে ২৩, ক্ষতিগ্রস্ত ৫৭ লাখ মানুষ
যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
লক্ষ্ণীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের জকসিন বাজার এলাকায় বানভাসি একটি পরিবার। ছবিটি সোমবার তোলা -ফোকাস বাংলা

টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে দেশে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি ও কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী, কুমিলস্না, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও খাগড়াছড়িতে পানি ধীরগতিতে নামলেও বিপদ কাটেনি। বিশেষ করে ফেনীর দুর্গম এলাকা এখনো পানিতে ভাসছে। পানি কিছুটা কমায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি মিলছে। তবে জেলার বেশিরভাগ এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে, নোয়াখালী ও লক্ষ্ণীপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজার সস্নুইসগেট ভেঙে এলাকার বাসিন্দারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। এছাড়া খুলনা, যশোর ও নড়াইলে অতিবৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। সর্বোপরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। তবে আবহাওয়া অফিস আভাস দিয়েছে বৃষ্টি কমার।

এদিকে, বেশিরভাগ জেলায় বানভাসিদের সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি অনেক জেলার প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ পৌঁছায়নি। বিশেষ করে নোয়াখালীর প্রান্তিক অঞ্চলে দুর্গতরা খাবার সংকটে ভুগছেন।

অন্যদিকে, দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আর মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন।

সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উলেস্নখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে ফেনী ও কুমিলস্না জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। ধ

সোমবারের বন্যার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালায় জানায়, বন্যায় দেশের ১১ জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার।

১১টি জেলার ৭৪ উপজেলা, ৫৫০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যা পস্নাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২৩ জন, এর মধ্যে কুমিলস্নায় ছয়, ফেনীতে এক, চট্টগ্রামে পাঁচ, খাগড়াছড়িতে এক, নোয়াখালী পাঁচ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্ণীপুরে এক এবং কক্সাবাজারে তিনজন। নিখোঁজ রয়েছেন মৌলভীবাজারের দুইজন। পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩ হাজার ৮৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন এবং ২৮ হাজার ৯০৭টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

বন্যা উপদ্রম্নত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রণালায় বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।

সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিফ্রিংয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, 'সোমবারের পর থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যাবে। এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে আর ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তাটা বাড়াতে হবে না।'

আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলার বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। ভারত থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি ও ভারী বর্ষণে জেলা শহর মাইজদী, নোয়াখালী পৌরসভা ও জেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী শহরসহ জেলার আটটি উপজেলার প্রায় শতভাগ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

এরইমাঝে গত সপ্তাহে চার দিন বৃষ্টি বন্ধ থাকায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। কিন্তু সোমবার রাত থেকে ভারী টানা বর্ষণ শুরু হয়। এতে বাড়িঘরে পানি বৃদ্ধি পায়।

নোয়াখালী আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ মিলি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

জেলার কোথাও কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। বন্যার্তরা কিছুসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন। অধিকাংশ মানুষ রয়েছেন গ্রামে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ত্রাণসামগ্রী তাদের দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু প্রধান সড়কের পাশে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সাহায্য দিচ্ছে। গ্রামে বসতবাড়িতে থাকা লাখ লাখ মানুষ সাহায্য পাচ্ছেন না। তাদের মধ্যে খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। এসব মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দেয়। ফলে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

এদিকে জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিত মানুষকে সাপে কেটেছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১২৮ জন। এ ছাড়া গত চার দিনে নোয়াখালীতে ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জনকে সাপে কেটেছে।

এদিকে, বন্যার পানির তীব্র চাপে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার 'মুছাপুর ক্লোজার' সস্নুইসগেট ভেঙে গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ ঘটনা ঘটে বলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান নিশ্চিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্যার পানির তীব্র চাপ সহ্য করতে না পেরে মুছাপুর ক্লোজারের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর ভেঙে গেছে। এতে কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট এবং ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঞাসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'পানির প্রবল চাপে রেগুলেটর দেবে গিয়ে মুছাপুর ক্লোজার সস্নুইসগেট ভেঙে গেছে। ভাটার সময় বন্যার পানি নামলেও জোয়ারের সময় এখন লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং টিম কাজ করছে।'

লক্ষ্ণীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্ণীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দিন দিন বাড়ছে বন্যায় আক্রান্তের সংখ্যা। লক্ষ্ণীপুরে এখন প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ত্রাণ সহযোগিতায় খুবই কম আসছে লক্ষ্ণীপুরে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ত্রাণ দিছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা সমন্বয়ের অভাবে কিছু মানুষ ২/৩ বার পাচ্ছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার যেসব এলাকায় পানির জন্য ত্রাণের গাড়ি ঢুকতে পাচ্ছে না, যারা পানিবন্দি হয়ে আছেন তারা ত্রাণ সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

লক্ষ্ণীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখা ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে সালাহ উদ্দিন বলেন, 'আমাদের গ্রামের ৪শ' পরিবার পানিবন্দি, মানুষের ঘরে পানি উঠছে, পানি নামার আশায় কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। এখানে এখন পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কেউ আসেনি।

দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের ওমর ফারুক জানান, 'মূল সড়ক থেকে আমাদের বাড়ি দূরে হওয়ায় এখানে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেনি।'

লক্ষ্ণীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, লক্ষ্ণীপুর জেলায় এই মুহূর্তে ত্রাণ সহযোগিতা করার জন্য এবং লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য নৌকার প্রয়োজন।

পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার সেলাইন ও শিশুখাদ্য প্রয়োজন।

লক্ষ্ণীপুরে গত ২ দিনে ২ থেকে ৩ ফুট করে পানি বাড়ছে আর নতুন করে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।

লক্ষ্ণীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, লক্ষ্ণীপুরে প্রায় ৮ লাখ লোক পানিবন্দি। জেলার সদর উপজেলা রামগঞ্জ নতুন করে পস্নাবিত হচ্ছে। এসব এলাকা বিশেষ করে সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী, উত্তর হামছাদী, বাঙ্গাখা, লাহারকান্দি, কুশাখালী, চরশাহী ইউনিয়নে মানুষ বেশি পস্নাবিত হচ্ছে।

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, যশোরে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। গত কয়েক বছরের মধ্যেও এত বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেছি। টানা এই বর্ষণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে গোটা জেলাবাসী। যশোরে ৩২ ঘণ্টায় ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বৃষ্টিপাতের নজির নিকট অতীতে নেই বলেও উলেস্নখ করছেন স্থানীয়রা। এর আগে গত ৬ জুলাই মৌসুমের সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

এদিকে, যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই ভারী বর্ষণে গোটা নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভারী বর্ষণে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচেপড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের। এ মাছ ছড়িয়ে পড়ায় ড্রেন ও সড়কের ওপরেই শৌখিন মৎস্য শিকারিদের তৎপরতাও দেখা গেছে।

পাশাপাশি শহরের অন্তত ৩০টি সড়কে পানি জমে আছে। শহরের রেলরোডের ফুড গোডাউন থেকে টিবি ক্লিনিক মোড়-আশ্রম মোড় হয়ে মহিলা মাদ্রাসা পর্যন্ত, খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপপট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও শহরের ছোট ছোট সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার নোংরা পানি উপচে পড়ে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। দুপুরের এ বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে স্কুল ফেরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পৌরসভার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন ওই ওয়ার্ডের মানুষরা।

যশোর পৌরসভার প্রশাসক স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান জানান, 'যশোরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থারও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আমরা সকাল থেকে পানি নিষ্কাশনের পয়েন্টগুলোতে কাজ করছি, যাতে পানি দ্রম্নত নেমে যেতে পারে। এই জলাবদ্ধতা দ্রম্নত নিরসনে আমরা সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি।'

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, রাতভর ভারী বৃষ্টিতে নড়াইল জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উঠেছে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ঘরবাড়িতেও। অধিকাংশ রাস্তায় গোড়ালি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।

সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, বৃষ্টিতে পৌরসভার ভাদুলিডাঙ্গা, বউবাজার, গোহাটখোলা, ভওয়াখালী, দুর্গাপুর, আলাদাতপুর, মহিষখোলাসহ পৌর এলাকার অনেক স্থানে ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও রাস্তায় পানি জমেছে। জলাবদ্ধতায় অনেক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘরের সামনে পানি জমায় অনেকে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। কারও কারও রান্নাঘর-টিউবওয়েলের কিছু অংশ ডুবে গেছে পানির নিচে।

শহরের আলাদাতপুর এলাকায় ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানান বাসিন্দা আশিকুর রহমান সৌরভ। তিনি বলেন, 'আমাদের বাড়ির নিচতলায় হাঁটুপানি জমেছে। টিউবওয়েলের কিছু অংশ পানিতে ডুবেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছি আমরা। এদিকে রান্নাঘরেও পানি প্রবেশ করায় আজ সকালের রান্নাও বন্ধ।'

খুলনা অফিস জানায়, খুলনায় টানা বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রোববার দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবিরাম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। রোববার ভারী বর্ষণে ডুবে যাওয়া স্থানগুলো থেকে সোমবার পানি সরলেও এখনো নগরের বেশ কিছু স্থান ও সড়ক পস্নাবিত হয়ে আছে। বেশ কিছু সড়কে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় কাদাপানির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সোমবার ছুটির দিনে খুলনায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন কম বের হয়েছেন। সেই সঙ্গে ভোর থেকে বৃষ্টিতে নগরজুড়ে স্থবিরতা নেমে আসে। কাজে যেতে না পেরে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ বিপাকে পড়েন।

সোমবার নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোতলেবের মোড় এলাকা, নগরের বয়রা নতুন রাস্তা সড়কের পুলিশ লাইনস এলাকা, মুজগুন্নী শিশুপার্ক এলাকা, আবু নাসের হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। নগরের সাতরাস্তা মোড় থেকে মোতলেবের মোড় হয়ে বাগমারা প্রধান সড়কে সংস্কারের কাজ চলছে। এই সড়কে খানাখন্দ ও পানিকাদায় একাকার হয়ে চলাচল করা কষ্ট হয়ে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে