শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

দেশ ছেড়েছিলেন চাপে, এখন ফিরতে চান এস কে সিনহা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

সাত বছর আগে শেখ হাসিনার সরকারের নির্দেশে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) চাপে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা।

ক্ষমতার পটপরিবর্তন হওয়ায় এখন তিনি দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, চাইছেন তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে লড়তে।

তিনি বাংলাদেশের এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সরকার তাকে চাপ দিতে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে। বাসার ইন্টারনেট বন্ধ করে পদত্যাগের জন্য চাপ দেয় ডিজিএফআই। তারা কারও সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলাও বন্ধ করে দেন।

''অত্যাচার আরম্ভ করলেন। তখনকার ডিজিএফআইয়ের চিফ সাইফুল আবেদীন আমাকে বললেন, 'স্যার আপনি রিজেগনেশন দেবেন, আপনি দেশের বাইরে চলে যাবেন।' আমি বললাম আপনি কে? হু আর ইউ?

হোয়াট অডাসিটি ইউ হ্যাভ গট?"

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র অমুসলিম ও আদিবাসী বিচারক, যিনি বিচারাঙ্গণের শীর্ষ পদে পৌঁছেছিলেন।

এস কে সিনহার ভাষ্য, তিনি অসুস্থ না হলেও নিয়মিত বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চিকিৎসক আনা হতো। মানা করা হলে চিকিৎসকরা বলতেন, সরকার তাদের পাঠিয়েছেন, তাদের কিছু করার নেই।

বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে তবে কার্যকাল শেষ হয় মেয়াদের ৮১ দিন আগেই।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

ঋণ খেলাপির দায়মুক্তির প্রশ্নে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় দাবি করে এস কে সিনহা বলেন, 'এটা চূড়ান্ত পর্বে গড়ায় বিচারপতিদের ক্ষমতা-বিষয়ক ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে। নিম্ন আদালতে হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের অ্যারেস্ট করছে, রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে- এগুলোতে বেইল দেওয়া হচ্ছে না।

'প্রধানমন্ত্রী স্ট্রেট বলল, 'নিম্ন আদালতে এটা হবে না, এটা আপনি ভুলে যান'। আমি বললাম, তাহলে এই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল অ্যাবলিশ করে আপনি যে পার্লামেন্টে নিয়েছেন, এটা আমি হতে দিব না।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৫ মে ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

ওই রায় বহাল রেখে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই রায় দেয় আপিল বিভাগ। পরের মাসের প্রথম দিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এই রায়ে প্রধান বিচারপতি সিনহার ৪০০ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ থাকে। রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। একপর্যায়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি।

এস কে সিনহা বলেন, 'আমি কখন দেশে যাব, সেই দিন গুনছিলাম। শেখ হাসিনার যে পতন হবে, এটা সময়ের ব্যাপার ছিল।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, 'ক্রাইম এগেনিস্ট হিউমিনিটির জন্য তাকে যদি বিচারে সোপর্দ না করা হয়, তাহলে ক্রাইম এগেনিস্ট হিউমিনিটি- এটা বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত।'

এস কে সিনহা বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে প্রস্তুত।

'আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আমি দেশে ফিরব। আমি সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছি। আমি সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করব এবং প্রমাণ করব যে, আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো মিথ্যা।'

বিচারপতি সিনহা বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। এতে তিনি দাবি করেন, তাকে 'পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে' পাঠানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে