চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আনসার সদস্যদের ব্যাপক বিক্ষোভে প্রায় তিন ঘণ্টা সচিবালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হয়েছে। সেই সঙ্গে আশপাশের এলাকাতে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র যানজট। আতঙ্কে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয় ছেড়ে চলে যান। শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সমস্যা নিরসনে গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
রোববার সকাল ১০টার দিকে সচিবালয়সহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেন অঙ্গীভূত আনসারের প্রায় দেড় হাজার সদস্য। তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে পড়েন। তাদের অপর আরেকটি অংশ সচিবালয়ের সামনে নবাব আব্দুল গণি রোডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভরত আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের গেটগুলোতে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তখন সচিবালয়ের সব প্রবেশ গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ সময় প্রবেশ গেটগুলোতে অবস্থান নিয়ে তারা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে নানা ধরনের সেস্নাগান ও বক্তব্য দিতে থাকেন। বক্তব্যে তারা বলেন,
অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা নানাভাবে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল। এমন সরকার ক্ষমতায় থাকতে, তারা কেন বৈষম্যের শিকার হবেন? প্রশ্ন তুলেন তারা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তাই তারা আর কোনো বৈষম্য মানতে বা দেখতে চান না। এমনকি বৈষম্য মানতেও তারা রাজি নন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সচিবালয়ে অবস্থান করবেন বলে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বার বার ঘোষণা দিচ্ছিলেন। সচিবালয়ের গেটগুলোতে অবস্থান নেওয়ার কারণে সচিবালয়ে প্রবেশ ও বের হওয়া এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পুরো সচিবালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই নানা ছলে সচিবালয় ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। যাদের প্রায় সবাই হেঁটে বের হন। কারণ যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় সচিবালয়সহ আশেপাশের এলাকায়। এ সময় আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বিদু্যৎ ভবনের পূর্ব দিকের ৩ নম্বর গেট দিয়ে আচমকা হুড়মুড় করে অর্ধশতাধিক আনসার সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় গেটে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেও তাদের গতিরোধ বা ভেতরে প্রবেশ আটকাতে পারেনি। বিক্ষোভকারীরা ভেতরে ঢুকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে অঙ্গীভূত সব আনসার সদস্যের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে নানা ধরনের সেস্নাগান দিতে থাকেন। এ সময় আরেক দফায় সচিবালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি সচিবালয়ে কর্মরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মী ভেতরে প্রবেশ ও বের হতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত কাউকে সচিবালয় থেকে বের হতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছিলেন। এমন ঘোষণার পর পুরো সচিবালয় ও আশেপাশের এলাকার চিত্র পাল্টে যায়। সচিবালয়ে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য আশেপাশের বহুতল ভবনের বিভিন্ন তলায় উৎসুক জনতা ভিড় করতে থাকেন। তারা উঁকিঝুঁকি মেরে ভেতরের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন।
বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আনসার সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে সম্মত হন। এ সময় অঙ্গীভূত আনসারদের তরফ থেকে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাসির মিয়া। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সচিবালয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম শুরু হয়। রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
আনসার সদস্যরা জানান, তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা জানান, সারাদেশে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের সংখ্যা ৫৯ হাজার ১৩০ জন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই দাবি করে আসছিলেন। অতীতেও তাদের এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেইসব আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এবার আশ্বাস বাস্তবায়িত না হলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি ঢাকায়ও আনসার সদস্যরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। শুধু আনসার নয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন খাতের বঞ্চিতরা সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন।