বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয়ের সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে জন্মভূমি থেকে পালিয়ে এদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের এই অনিশ্চিত জীবনযাত্রায় তখন হতবাক হয়েছিল বিশ্ব। অসংখ্য মানুষের অজানা পথ পাড়ি দেওয়ার হৃদয়স্পর্শী সেই মুহূর্তগুলো সাত বছর পেরিয়ে এখন রূপ নিয়েছে কষ্টের এক ভয়াল জীবনে। পরিণত হয়েছে দীর্ঘশ্বাসে। মিয়ানমারের প্রতিশ্রম্নতি আর বাংলাদেশের নানামুখী প্রচেষ্টার পরও এ সময়ের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা ফিরতে পারেননি তাদের নিজের বাসভূমে। দীর্ঘদিনে দাতা সংস্থারাও মুখ ফিরিয়েছে। ফলে আশ্রয় শিবিরের কষ্টকর জীবনযাত্রায় লাখো রোহিঙ্গার দিন-রাত কাটছে ছন্দহীনভাবে। যতদিন যাচ্ছে নিজ বাসভূমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্নও তাদের দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত সাত বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় নেওয়া তিন দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া কোনো কাজে আসেনি। ফল মেলেনি মিয়ানমারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেও। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে দেশটির সম্মতিতে প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য যাচাই ও পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্প গ্রহণের পরও পেরিয়ে গেছে এক বছরের বেশি সময়। মূলত কোনো উদ্যোগই এদেশে আশ্রিত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরাতে সহায়ক হয়নি।
এরই মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে একটি প্রস্তাব পাসের পর রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আশা জেগেছিল। কিন্তু এরও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের তুমুল যুদ্ধের কারণে দেশটিতে বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে এ লড়াই চলার কারণে রোহিঙ্গারা ফের এদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এখন উপযুক্ত সময় নয়। আর রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নাজুক পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথে বড় বাধা। বাংলাদেশেও ঘটে গেছে ক্ষমতার পালাবদল। বিশ্লেষকদের মতে, সব মিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইসু্যটি এখন গভীর এক সংকটের মুখে পড়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে দিনদিন দেশের ওপর চাপ বাড়ছে। বাস্তচু্যত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা এখন দেশের জন্য 'বড় ধরনের বোঝা'। রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। বিস্তার ঘটেছে মাদকের। গত সাত বছরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বার বার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তাদের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে 'চাপ' দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের দাবি,
রোহিঙ্গা সংকট দেশের সামনে বিশাল চাপ তৈরির উপলক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটাকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে পরাশক্তিগুলো। বিশেষ করে পশ্চিমা ধনী রাষ্ট্রগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে রোহিঙ্গা ইসু্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের আনুগত্য চাইছে। রোহিঙ্গা সংকট শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিহীন বিহারি ইসু্যর মতো হতে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন 'বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন এদেশে বসবাসের সুবাদে রোহিঙ্গারা জঙ্গিবাদ, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া মাদকের বড় বড় চালানের নেপথ্যে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরা ক্যাম্পে গড়ে তুলেছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ। মিয়ানমারের নিষিদ্ধ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ, জমিয়তুল মুজাহিদীন ও আল ইয়াকিনসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত হয়ে বসবাস করছেন। এসব সংগঠনের রয়েছে হাজার হাজার সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা। এদের কথাই ক্যাম্পগুলোয় শেষ কথা। সন্ত্রাসী গ্রম্নপগুলোর অবৈধ অস্ত্রের ভান্ডারে রয়েছে অত্যাধুনিক একে ৪৭সহ ভারী অস্ত্র। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এরা প্রায়ই ক্যাম্পে ঘটাচ্ছে হত্যাকান্ড। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনাও বাড়ছে। গত সাত বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই শতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনসংখ্যা। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর অন্তত ৩০ হাজার শিশুর জন্ম দিচ্ছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। ফলে ২০১৭ সালে ১০ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে বলা হলেও এখন তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ১৩ লাখ।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর ওই বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের মধ্যস্থতাতেই সেই চুক্তি হয়েছিল। তখন চীনের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিবর্তে দুই দেশের আলোচনার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা উচিত। এরপর চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের নভেম্বরে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে চীনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাননি। এরপর প্রত্যাবাসন ইসু্যটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আর অগ্রগতি হবে না।
কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিলে আকস্মিকভাবে চীনের তরফ থেকে তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, 'এটা যে একেবারে হঠাৎ শুরু হয়েছে, সেটা বলা যাবে না। চীন যে একেবারে সব চেষ্টা বন্ধ করে বসেছিল, তা নয়। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ, করোনা মহামারি ইত্যাদি কারণে উদ্যোগ পিছিয়ে গিয়েছিল।'
এ উদ্যোগের পর কয়েক দফায় রোহিঙ্গাসহ উভয় দেশের প্রতিনিধিরা দুই দেশ ঘুরে প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য যাচাই করেন। রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেন। গ্রহণ করেন পাইলট প্রকল্প। রোহিঙ্গাদের নামের তালিকাও করা হয়। সে সময় রোহিঙ্গারা টেকসই প্রত্যাবাসনের দাবি জানান। বিদ্যমান বাস্তবতায় তারা রাখাইনে ফেরত যাবেন না বলে আন্দোলনও করেন।
ওই সময় ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত জিমিং দাবি করেন- বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হওয়ায় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তার জন্য চীন কাজ করছে। যদিও মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ অবস্থা এখনো অনিশ্চয়তার সম্মুখীন তবুও 'চীনের মধ্যস্থতায়' উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়নি এবং প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে 'ইতিবাচক' মনোভাব দেখাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চীনের তৃতীয় দফার উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই, সাক্ষাৎকার নেওয়াসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বেশ অগ্রগতি হয়। নিজ দেশে ফেরার জন্য রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোয় সমাবেশ করে। এরপরও এ প্রক্রিয়ার আর কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, আন্তর্জাতিক নানা 'চাপ ও কৌশলে'র কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সবশেষ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে।
রোহিঙ্গা আশ্রয়ের প্রথম থেকেই অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বহু আন্তর্জাতিক এনজিও আছে, যারা চায় না ওরা মিয়ানমারে ফেরত যাক।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সদ্য সাবেক সরকার পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী, সব দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে এ কথাও সত্য, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে চীনের প্রতি আস্থা রেখেছিল সবচেয়ে বেশি। রোহিঙ্গা আশ্রয়ের শুরু থেকেই তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এসব আলোচনায় আশ্বাস মিললেও বাস্তবিক কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
যা বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা
আপাতত আগামী দুই বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, মিয়ানমারে প্রতিদিনই কোনো না কোনো শহর বিদ্রোহীরা দখল করছে। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। ফলে এমন পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। জাতিসংঘও বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে সহায়ক নয়। এরপরও সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, এই সংকট সমাধানে যে কোনো ক্ষুদ্র কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকেও ছোট করে দেখা যাবে না। বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'দেশটির অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সামরিক জান্তা বাহিনীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এখন বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যে কোনো ধরনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।'
ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর তানজীমউদ্দিন খান যায়যায়দিনকে বলেন- 'রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের খুব সহজ পথ আছে এরকমটা মনে হচ্ছে না। ইসু্যটি দীর্ঘমেয়াদি সংকট হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। দেখার বিষয় রোহিঙ্গা সংকট শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিহীন বিহারি ইসু্যর মতোই হয় কিনা। তাছাড়া ভূরাজনীতির এখনকার যে বৈশিষ্ট্য দেখছি তার মূলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা। চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনোশিয়েটিভের আওতায় মেরিটাইম সিল্ক রোড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি- এই দু'য়ের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়ই আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। রোহিঙ্গা সংকট এখন শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা আছে। তাই বহুপাক্ষিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা এই মুহূর্তে বেশি জরুরি।'
এদিকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, 'আমরা আর শরণার্থী জীবন চাই না। সামনের দিনগুলোয় আমরাও আমাদের জন্মভূমি আরাকানে জীবনযাপন করতে চাই। বিশ্ব সম্প্রদায় আমাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে যেন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়।'
দ্রম্নত স্বদেশে (মিয়ানমারে) ফিরে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা দাবি করে টেকনাফের জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল রহমান বলেন, 'আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না। দ্রম্নত নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাধীনতাসহ নিজ গ্রামের ভিটেমাটি ফেরত দিলে এই মুহূর্তে চলে যাব মিয়ানমারে।'
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা এদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোয় সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন।